কিশোরী ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা, রফাদফার অভিযোগ!
রায়হান (১৫) নামের এক কিশোরের ধর্ষণে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরী (১৪) দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এ ঘটনায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দফারফার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠে স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমত উল্যাহ্ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়্যুম বেপারীর বিরুদ্ধে ।গত শুক্রবার (১২ মে) বিকালে শালিসি বৈঠকের মাধ্যমে এ রফাদফার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত কিশোর হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের লাওকোরা গ্রামের সর্দার বাড়ির সিরাজুল ইসলাম ওরফে ছেরু সর্দারের ছেলে। কিশোরী একই বাড়ির ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বাড়ির সম্পর্কে উভয়ে চাচা-ভাতিজি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ধর্ষণের ঘটনায় কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। তারপরেই ইউপি সদস্য রহমত উল্যাহ্ গত শুক্রবার বিকালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও দুই পরিবারের লোকজনকে নিয়ে সালিসি বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারকে চাপ-সৃষ্টি করে টাকার বিনিময়ে রফাদফা এবং দুই পক্ষের একটি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, বৈঠকে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর চিকিৎসার জন্য অভিযুক্ত রায়হানের পরিবারকে নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই বৈঠকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়্যুম বেপারী ও কুদ্দুস সর্দারসহ অন্যান্য শালিসদার ও দুই পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরির স্বজনরা জানান, মেম্বারসহ (ইউপি সদস্য) সবাই চেয়েছে বিষয়টির সমাধান হোক। তাই তাদের কথায় আমরা রাজি হয়েছি। ইউপি সদস্য রহমত উল্যাহ্ জানান, উপর মহলের সঙ্গে কথা বলে এবং এলাকার শান্তির জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিসি বৈঠক করা হয়েছে। তবে উপর মহলের কে বা কার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়্যুম বেপারী শালিসি বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত শুক্রবার মেম্বার (ইউপি সদস্য) রহমত উল্যাহ তাকে নিয়ে ওই বাড়িতে যায়। এরপর মেম্বারের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের চারজন সালিশদার ও দুই পরিবারের লোকজন বসে বিষয়টির সমাধান করেন। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ে উভয় অপ্রাপ্ত বয়স এবং তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি হয়। তাই, আমি তাদের থানা বা কোর্টে (আদালত) যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু মেম্বার, দুই পক্ষের লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা বিষয়টির সমাধান করে নেয়। পরে শুনেছি মেয়ের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে আমি ছিলাম না।
ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে আমার ইউপি সদস্য রহমত উল্ল্যাহ এমন ঘটনার সমাধান না করে, ধর্ষিতার পরিবারকে আইনি সহায়তায় দিতে পারতেন।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, এ বিষয়ে মামলা প্রকৃয়াধীন।