• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যা মামলার ৩ আসামী আটক

প্রকাশ:  ০৮ মে ২০২৩, ০৯:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

গত ৩০ এপ্রিল রাতে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার সংলগ্ন মসজিদের সামনে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন (৪৫) খুন হন। ওইদিন রাত আনুমানিক ৮টা ১০ মিনিটে ৩জন বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার সংলগ্ন মসজিদের পাশে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জামাল হোসেনের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময়ে বোরকা পরিহিত হামলাকারীরা জামালের উপর এলোপাতাড়িভাবে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। অতঃপর ভিকটিম জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আহত জামালকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে পরিবার আরো নিশ্চিতের জন্য জামালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্মরত চিকিৎসকও তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনাটি দেশব্যাপী বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব সদর দপ্তরের একাধিক গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আসামীদের সনাক্তকরণের নিমিত্তে কাজ শুরু করে। উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ২ মে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত ৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী স্বাভাবিক পথচারীর বেশে ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় ভিকটিম জামাল এজাহার নামীয় ৩নং আসামী মোঃ ইসমাইল (৩৬) ও এলাকার পূর্ব পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তির সাথে একটি দোকানের সামনে অবস্থান করছিলো। বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অতর্কিতভাবে ভিকটিম জামালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এ সময় জামালের সাথে বোরকা পরিহিত একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর ধস্তাধস্তি হয় এবং ভিকটিম জামাল তাকে ঝাপটে ধরে ফেলে। তখন সাথে থাকা বোরকা পরিহিত অপর একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জামালকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং বোরকা পরিহিত অপর ব্যক্তি তার সাথে থাকা পিস্তল দিয়ে ভিকটিম জামালকে খুব কাছ থেকে মাথায় ও বুকে গুলি করে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অন্য আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আসামীরা দৌড়ে পালানোর সময় একজনের বোরকার মুখের আবরণ খুলে যায় ও একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লেগে একজন আসামীর হাত থেকে তার সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটি মাটিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে অস্ত্র কুড়িয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলের আশেপাশের আরো কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে আসার যে রাস্তা আসামীরা ব্যবহার করেছে সেই একই রাস্তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ না করে সামান্য পরিবর্তিত রাস্তায় তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে এই ফুটেজটি বিশ্লেষণ করে র‌্যাব আসামীদের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি বোরকা ও দুইটি হিজাব উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং বোরকা উদ্ধারের নিকটবর্তী একটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখতে পায় তিনজন ব্যক্তির মুখমন্ডল দেখা না গেলেও অবয়ব দেখে বোঝা যায়, তারা দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে যাচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী বোরকা পরিহিত ব্যক্তিদেরকে র‌্যাব মোটামুটি নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করতে পেরেছে। তবে তদন্ত ও গ্রেফতারের বিষয়টি মাথায় রেখে এই মুহূর্তে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়নি।
সকল তথ্য উপাত্ত, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৬ মে দিনে ও রাতে অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ এলাকা, ঢাকা জেলার রায়েরবাগ এলাকা ও কালশী, মিরপুর এলাকা হতে উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় ৩নং আসামী মোঃ ইসমাইল (৩৬) (পিতা-খুরশিদ মিয়া, সাং-জিয়ারকান্দি, থানা-তিতাস, জেলা-কুমিল্লা), ৪নং আসামী মোঃ শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার (৪০) (পিতা-মোঃ আক্তার হোসেন শিকদার, সাং-মনাইরকান্দি, জেলা-কুমিল্লা) এবং ৭নং আসামী শাহ আলম ওরফে পা কাটা আলম (৩৬) (পিতা-মৃত বজলুর রহমান, সাং-গোপচর, থানা-দাউদকান্দি, জেলা-কুমিল্লা)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম জামালের হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইসমাইলের বিরুদ্ধে ২টি হত্যা মামলাসহ মোট ৩টি মামলা, শাহীনুল ইসলাম সোহেল শিকদারের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ মোট ৯টি মামলা ও মোঃ শাহ আলমের বিরুদ্ধে ১টি হত্যা মামলাসহ মোট ১০টি মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই মামলার এজাহারনামীয় ৯ জন আসামীর মধ্যে র‌্যাব ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এবং এজাহার নামীয় ১নং আসামী সুজন নেপালে, ২নং আসামী আরিফ নেপালে, ৫নং আসামী বাদল দুবাইয়ে, ৬নং আসামী শাকিল ভারতে, ৮নং আসামী অলি হাসান সৌদি আরবে পলায়ন করেছে এবং ৯নং আসামী কালামনির পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে রয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত আসামীদের দেশে ফেরাতে এবং হত্যার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীকে গ্রেফতারে র‌্যাব-১১ এর প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।

 

সর্বাধিক পঠিত