হাজীগঞ্জে হত্যার শিকার কিশোর হাফেজ ॥ আটক ৩
তদন্তে একাাধিক সংস্থা
রহস্য উদ্ঘাটনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ
কামরুজ্জামান টুটুল ॥ হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মাস্টার পাড়ায় নির্মাণাধীন ভবনে মাথা থেতলানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে কিশোর হাফেজ আবদুল্লাহ্ আল কাউসার (১৭)কে। তাকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ৭/৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে থানায় নিয়ে আসলেও আদালতে পাঠানোর মতো তথ্য উপাত্ত পেয়েছে ৩ জনের কাছে। তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গত রোববার দিবাগত রাতে ওই এলাকার প্রবাসী আজিজুর রহমান নামে এক প্রবাসীর নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের গর্তে পড়ে থাকা কাউসারের লাশ উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। কাউসার চাঁদপুর সদর উপজেলার পুরাণবাজার এলাকার মোস্তফা কামালের ছেলে। তবে তার পরিবার হাজীগঞ্জ শহরে মাস্টার পাড়াস্থ ভাড়া বাসায় বসবাস করে। আটক ৩ জনকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ।
হাফেজ কাউসার হত্যাকাণ্ড তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতের বাবা। আটককৃতরা হলো : মাস্টারপাড়ার মুদি দোকানি ও হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়নের বাউরা গ্রামের হেলাল উল্লাহর ছেলে মোঃ ফয়েজুল্লাহ ফয়েজ (২৪), পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে শাহ মোহাম্মদ সিফাত (১৮) ও পৌর মকিমাবাদ গ্রামের জাকির হোসেন মোহনের ছেলে মুনতাসির মামুন নীরব (১৭)।
পুলিশ জানায়, গত ২৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে নিহতের বাবা মোস্তফা কামাল ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় ডায়েরি করতে আসেন। ঠিক তখনই পৌরসভার মাস্টার পাড়ার একটি নির্মাণাধীন ভবনের দারোয়ান ছাবের আহাম্মদ ও তার স্ত্রী তাছলিমা বেগম মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় থানায় এসে পুলিশকে জানান। এ সময় নিহতের বাবা মোস্তফা কামাল লাশের বর্ণনা শুনে দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন লিফটের গর্তে তার ছেলে কাউসারের লাশ পড়ে রয়েছে।
কাউসারের বাবা মোস্তফা কামাল জানান, আমার ছেলে কোরআনে হাফেজ। রমজান মাসে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় তারাবির নামাজ পড়ানো শেষে ঈদ করতে হাজীগঞ্জের বাসায় ফেরে। বাসায় ফিরে তারাবির নামাজ পড়ানোর হাদিয়া (টাকা) মায়ের হাতে দিয়ে ঈদের আগের দিন শেষে রাতে অর্থাৎ শুক্রবার দিবাগত রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। তারপর বাসায় ফিরেনি। এরপর থেকে সে নিখোঁজ।
এদিকে লাশের খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার, সুরতহাল তৈরি ও আলামত সংগ্রহে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হাজীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার দে ও হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ভিন্নভাবে তদন্ত করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তদন্তে নেমেছে। কাজ করছে পুলিশের একাধিক টিম। লাশ উদ্ধারের ঘটনাস্থলের আশপাশের ভবনের ও সড়কের সকল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে। ইতোমধ্যে যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ, তাদের মোবাইলের আদ্যোপান্ত যাচাই-বাছাই, সন্দেহভাজন আরো কয়েকেজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে খুঁজে নিয়ে আসা, ঠিক কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, ইতিপূর্বে কাউসারের সাথে কাদের পোস্টার টানানো নিয়ে সমস্যা হয়েছিলো এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংস্থাগুলো। লাশ উদ্ধারের স্থলেই কি কাউসারকে হত্যা করা হয়েছে নাকি অন্য কোথাও হত্যা করে এখানে এনে ফেলে রাখা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে কী ধরনের অস্ত্র বা বস্তু ব্যবহার করা হয়েছে, এসব উদ্ধার করাসহ নানান বিষয় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ জানান, কাউসারকে হত্যা করা হয়েছে এটা নিশ্চিত। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হওয়ার কারণে আমরা ৩ জনকে আদালতে পাঠাবো। মৃতদেহের মুখের বাম পাশে ও মাথার বাম পাশে থেতলানো এবং মাথার পিছনের অংশে ফাটা জখম রয়েছে। মামলাটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।