• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

স্টীমার চলাচল ৬ মাস বন্ধ : শত শত যাত্রীর ভোগান্তি

পদ্মা সেতুকে দুষছেন অনেকেই

প্রকাশ:  ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সেই পাক আমল থেকে নিয়মিত চলা বিআইডব্লিউটিসি পরিচালিত রকেট স্টীমার সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ছয় মাসের অবস্থা জানালেন সংশ্লিষ্ট স্টাফরা। সপ্তাহে ২-৩ দিন পিএস টার্ন, লেপচা, মাহসুদ, শেলা নামের রকেট স্টীমারগুলো চলতো। বন্ধ থাকায় শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছে। চাঁদপুর থেকে বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট ও ঢাকাতে ঝড়-তুফান, বৃষ্টি বাদলের দিনে ও ঈদ উৎসবে নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারছেন না  শত শত যাত্রী সাধারণ। ক্ষতি হচ্ছে সরকারের কোষাগারও। এজন্যে পদ্মা সেতুকে দায়ী  করেন অনেকেই।
চাঁদপুরের বিআইডব্লিউটিসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, রকেট স্টীমার চাঁদপুরে চলাচল কেনো বন্ধ, সেটার সঠিক তথ্য আমি জানি না। তবে এ তথ্য হেড অফিস বলতে পারবে। তিনি আরো বলেন,  এখন মানুষের রকেট স্টীমারে ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ কম। অথচ চাঁদপুর প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ঘাট থেকে নিয়মিত প্রতিদিন প্রতি আধা/এক ঘন্টা পর পর দিনে রাতে অনেক যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে দেশের এসব নৌরুটসহ বিভিন্ন রুটে। পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী কম-বেশি নিয়েইতো এসব লঞ্চ চলছে। কোনোটাইতো বন্ধ হয়নি-এমন বক্তব্য সাধারণ ও সচেতন জনগণের। তারা বলেন, রকেট স্টীমার সার্ভিসের সেবা দান, এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। কোনো লাভ-লোকসানের ব্যাপার না বলে মতামত দেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্টীমার না থাকায়  সপ্তাহান্তে বা কখনো ৩ দিন সরকারি ছুটির দিনে লোকজন  বাড়ি ও অফিসে যাতায়াত করতে পারছেন না। এ ঘাট দিয়ে চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার লোকজন চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলের কর্মরত শত-সহস্র লোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ নিয়মিত বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাটে ও ঢাকায়ও যাতায়াত করতেন। আবার খুলনা ও বরিশাল মেডিকেল, প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ফিরতি পথে এ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতো।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির কিছু স্টাফ নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান,  পদ্মা সেতু চালুর পরে যাত্রী সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায়  স্টীমার সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। অভিজ্ঞজন বলেন, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেনের সময়ের সাথে সমন্বয় করে আসন্ন ঈদে বন্ধ রকেট স্টীমার সার্ভিস আবার চালু করলে শত সহস্র যাত্রীর ঈদ যাত্রায় কষ্ট লাঘব হতো ও সুবিধাও হতো।
উল্লেখ্য, এ ঘাটের সাথেই রয়েছে চাঁদপুর (বড়) স্টেশন। মাত্র দুই মিনিটের হাঁটাপথ। চাঁদপুর হতে বরিশাল রকেট স্টীমার ভাড়া মাত্র ১২০ টাকা। আর লঞ্চ ভাড়া ৩৬০ টাকা, যা ঈদে আবার দ্বিগুণ হয়ে যায়।
চাঁদপুর রকেট স্টীমার ঘাটে গিয়ে দেখা গেলো মরিচাপড়া গ্যাংওয়েতে কিছু স্টাফ শুয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। ঘাটের দুপাশের বেষ্টনীও চুরি হয়ে যাচ্ছে। প্রবেশ পথও ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, যেনো দেখার কেউ নেই। পরিবেশ নোংরা ও আবজর্নায় ভরপুর। ঘাট ও আশপাশে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কোথাও কেউ নেই। দোকানগুলো বন্ধ। ঘাটের দুপাশের অনেক ব্যবসায়ী দোকান গুটিয়ে ফেলেছেন। দু-একজন আছেন এখনো। চায়ের দোকানি ইব্রাহীম মিয়া ও লিটন মোল্লা, তেলের ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া, ওমর ফারুকসহ অনেকে জানান, রকেট স্টীমার গত ছয়-সাত মাস যাবৎ চলে না। তারা সবাই জানান, পদ্মা সেতু চালুর কারণে মানুষজন এখন আর রকেট স্টীমারে ভ্রমণ করছে না বিধায় যাত্রী কম। সেজন্যই রকেট স্টীমার বন্ধ রয়েছে। অনেকেই বললেন, আমরা দূর থেকে রকেটের আগমনে ও প্রস্থানে ভেঁপুর আওয়াজ রাত বিরাতে আর শুনছি না। কোথায় যে গেলো সেই দিনগুলো! অথচ কতো কতো ভিআইপি, মন্ত্রী, সচিব, উচ্চ পদস্থ লোকজন ও জনসাধারণ নিরাপদে, আরামে ও অল্প খরচে যাতায়াত করতো এ রকেট স্টীমারে। স্টীমারের আভিজাত্য ও মানসম্পন্ন খাবারের ঘ্রাণও মনে প্রাণে ও নাকে প্রশান্তি জোগাতো। ভ্রাম্যমাণ হকার, পান সুপারি, সিগারেট, বাদাম ও চানাচুর বিক্রেতারাও নিরাশ হয়ে লঞ্চঘাটে চলে গেছেন।
চাঁদপুর (বড়) স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সোয়াইব সিকদার ও ক’জন টিটিই জানান, চাঁদপুরে  রকেট সার্ভিস চালু করলে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলার যাত্রীদের  ভ্রমণ আরামদায়ক ও নিরাপদ হতো। পরিবার পরিজনদের  জন্যও খুবই সুবিধা হতো। চাঁদপুর থেকে বরিশালের ভাড়াও কম, মাত্র ১২০ টাকা। অন্যদিকে চাঁদপুর হতে বরিশালের লঞ্চ ভাড়া ৩৫০/৩৬০/৪০০ টাকা। ঈদে আরো বেশি নেয়। তাছাড়া রেল স্টেশন থেকে স্টীমারঘাট মাত্র ২ মিনিট হাঁটার পথ। চাঁদপুর লঞ্চঘাট দূরে। আধা কিলো পথও না, অথচ ৫০ টাকা ভাড়া নেয় রিক্সায়। ঝড় বৃষ্টির দিনে রাত-বিরাতে নিরাপত্তার অভাবে দূরের ও অজানা অসংখ্য ছোট বড় শিশু যাত্রীর অনেক কিছু খোয়া যায়। ছিনিয়ে নেয়। ঝড়-বৃষ্টির দিনে লঞ্চ ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনকও বটে।
প্রতিবেদক : অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, সিনিয়র সদস্য,  চাঁদপুর প্রেসক্লাব, চাঁদপুর।

 

সর্বাধিক পঠিত