এবার প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে হাজীগঞ্জের ইসলামিয়া মডার্ন হসপিটাল ফের আলোচনায়
ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বসিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ঘটনা স্থানীয়রা ভুলতে না ভুলতে এবার রুজিনা আক্তার (২০) নামের এক প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠে হাজীগঞ্জ মধ্য বাজারের ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এবার সিজারিয়ান অপারেশনের রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে জরায়ু কনডম দিয়ে সেলাই করে দেবার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে। ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার রাতে। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধে কনডম নয় কনডম ক্যাথেডার স্থাপন করে রোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রুজিনা একই উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর ফজর আলী বেপারী বাড়ির ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ খান বাড়ির হাসান খানের মেয়ে।
রুজিনার বাবা হাসান খান জানান, গত ৩১ মার্চ হাসপাতালের আমেনা আক্তার নামে একজনের মাধ্যমে আমরা ইসলাামিয়া মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভর্তির পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মেয়েকে সিজার করার জন্য রাজি হই। তিনি জানান, সিজারিয়ান অপারেশনে অংশ নেন হাজীগঞ্জ গোল্ডেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ রইসুল ইসলাম রুবেল ও এনেসথেসিয়া চিকিৎসক ডাঃ সাদ্দাম হোসেন। সিজার করার পর অপারেশন টিমটি ফুল কাটতে গিয়ে নির্ধারিত অংশের চেয়ে বেশি কেটে জরায়ু কেটে ফেলেন। হাসপাতালে ৪ দিন রেখে রুজিনাকে রিলিজ করে বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে যাওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিলে রুজিনাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ২য়বার মেয়েকে হাসপাতালে ৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। এরপরে মেয়ের অবস্থার অবনতি হলে ভুল অপারেশনের দায় থেকে রক্ষা পেতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসান খানের বরাত দিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) বসিয়ে সেলাই করা হয়েছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো অধ্যায়ে লিখা নেই। গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের মেডিকেল বোর্ড জরায়ু কেটে বেলুন প্রতিস্থাপনের ঘটনাটি এই প্রথম দেখেছেন। মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষণেই রুজিনার মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার ৫ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোজিনা আক্তারের মৃতদেহ নিয়ে ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতালের নিচে অবস্থান নেয় স্বজনরা। হাপাতাল ভবনে চিকিৎসক ও মালিক বসবাস করলেও কেউ সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে আসেনি বলে নিহতের স্বজনরা দাবি করেন। এতে নিহতের স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে যান।
রুজিনার বোনের ছেলে মোঃ সোহেল জানান, খালাকে সিজার করার পর থেকে ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতাল চিকিৎসায় অবহেলা করে আসে। জরায়ুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেটে তারা বেলুন দিয়ে সেলাই করে দেয়। পরে বেলুন ফেটে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান। এখন এই বাচ্চাটাকে কে কেমনে সামলাবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসমিল্লাহ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তোফায়েল আহম্মেদ জানান, লাশ নিয়ে নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিলে আমরা সুষ্ঠু সমাধানের আশ^াস দিলে নিহতের আত্মীয়রা লাশ নিয়ে বাড়ি যায়। অপর এক প্রশ্নে তোফায়েল আহম্মদ জানান, ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, আসলে কনডম দিয়ে সেলাই নয়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে কনডম ক্যাথেডার স্থাপন করে রোগীকে রেফার দেয়া হয়েছে।
ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতালের ব্যবস্থপনা পরিচালনাক মাওলানা রফিকুল্লাহ মুঠোফোনে জানান, সিজার করার ৪ দিন পর আমরা রোগীকে বাড়ি পাঠাই। এরপরে তারা প্রচুর রক্তক্ষরণের সমস্যা নিয়ে আমাদের হাসপাতালে আসে। তখন প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক।
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর বিষয় সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মাওলা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, বিষয়টি আমরা শুনে আজকে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ক’বছর আগে ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতাল থেকে ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জনতা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এতে হাস্যরসের জন্ম দেয় হাসপাতালটি।