• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জে সম্পত্তিগত বিরোধে বসতঘর ভাংচুর, হামলায় আহত ৭

প্রকাশ:  ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ বা ‘খুঁটির জোর’ এ কথাগুলো সমাজের বাস্তবতা থেকে নেয়া। সমাজে আবার এ রকম লোকও রয়েছেন যারা নিজ ঘরে পরবাস। এ রকমই একটি ঘটনা ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের হাজী বাড়ির। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে পেশি শক্তি দেখিয়ে পুরুষ শূন্য পরিবারের উপর হামলা করে বসতঘর ভেঙ্গে আসবাবপত্র সব তছনছ করে ফেলে। এ যেনো জোর যার মূলক তার!
মিজান, মানিক, বিল্লাল এদের পূর্ব পুরুষের বাড়ি ১০নং গোবন্দিপুর ইউনিয়ন। তাদের বাবা চাঁন মিয়া (মরহুম) নোয়াব আলী হাজীর কাছ থেকে জায়গা নিয়ে এখানে বসবাস করতে থাকেন। বিভিন্ন দাগে চাঁন মিয়া ১৪ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে সেখানে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু তার বংশধররা প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলামের জায়গা দখল করতে গেলেই বিপত্তি বাধে। জোরপূর্বক তারা সিরাজুল ইসলামের জায়গার ওপর ঘর ও সেফটি ট্যাংকি করে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালে চাঁদপুর কোর্টে সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় সিরাজুল ইসলাম রায় পান। কিন্তু বিল্লাল গং আদালতের রায়কে অমান্য করে আবারও জোর করে জায়গা দখল করতে যায়। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার পঞ্চায়েত বসলেও তারা তাদের রায়ও মেনে নেয়নি। উল্টো তারা দফায় দফায় সিরাজুল ইসলামের সন্তানদের মারধর করে। তাদের গাছ কেটে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ছয়/সাত বছর সিরাজুল ইসলামের পরিবারের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কথায় কথায় ঝগড়া, অসভ্য ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করে আসছে বিল্লাল এবং তার পরিবারের সদস্যরা। উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বিল্লাল এই অন্যায় কাজ করে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানান।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ পড়তে না গিয়ে বিল্লাল ও তার ভাই এবং স্ত্রীদের নিয়ে মৃত সিরাজুল ইসলামের বসতঘরে হামলা করে। তারা মৃত সিরাজুল ইসলামের বৃদ্ধা স্ত্রী সালেহা বেগমের ঘরের একটি বেড়া সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলে। তারা ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলে এবং একটা আলমারী, নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলে তারা অভিযোগ করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মারামারিতে সিরাজুল ইসলামের বড় মেয়ে হাসিনা (৩৫), মেজো মেয়ে নাছিমা (২৬) এবং নাতি জিহাদ (৭) ও আছমা (১২) আহত হন। এদের উপর হামলা করেন মিজান, বিল্লাল, মানিক, রাশেদ, রাজন, ফারজানা, এমরান, মারজানা, স্বপ্না, শিল্পী, কুসুম, হিরা, তানজিলা ও আমেনা।
এ সময় তারাও অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরও কজন আহত হয়েছে। যদিও আহত হওয়ার কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেননি।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাছিমা আক্তার সুমি বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের আলোকে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার বিষয়ে বৃদ্ধা সালেহা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, বাবা, ওদের অত্যাচারে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। আমার এক ছেলে, সে ব্যবসা করে ঢাকায়। বাড়িতে আসতে পারে না। ওদের আঘাতে আমার স্বামী আহত হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি এ আঘাত নিয়ে মারা যায়। এখন আমার সংসারে কোনো পুরুষ নেই। তারা আমাদের জায়গার মাঝখান দিয়ে জোর করে পথ নিতে চায়। আমরা রাজি না হওয়াতে ওরা আমাদের ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার মেয়ে এবং নাতিকে ইট মেরে আহত করে দিয়েছে।
বিল্লালের স্ত্রী আমেনা বলেন, আমার স্বামী (বিল্লাল) কাজ সেরে পুকুরে গোসল করতে গেলে হাবীব নামের একটা ছেলে তাকে ইট মারে। তাই আমরাও তাদেরকে মেরেছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের ঘর তারাই ভেঙ্গেছে। আমরা ভাঙ্গিনি।
নোয়াব আলীর ছেলের বৌ ফিরোজা বেগম এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমার শ^শুর এদেরকে (চাঁন মিয়া) জায়গা দেয়। পথ নিয়ে এই দুই ফ্যামিলির মধ্যে ঝামেলা। এদের (বিল্লাল গং) যাতায়াতের পথ নেই।
ফরিদগঞ্জ থানার এস.আই মাহাবুব বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। মরহুম সিরাজুল ইসলামের ঘর ভাংচুর অবস্থায় পেয়েছি। যেহেতু জমি নিয়ে ঝামেলা, কাগজপত্র দেখা ছাড়া কিছু বলতে পারছি না। তাই তাদের উভয় পক্ষকে আগামীকাল (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থানায় আসতে বলেছি।
৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল মান্নান পরান এ বিষয়ে বলেন, তারা উভয় পার্টিই খারাপ। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে না।

 

সর্বাধিক পঠিত