• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে জাটকা নিধন

টাস্কফোর্সের অভিযানে শত শত মণ জাটকাসহ জাল ও নৌকা জব্দ

প্রকাশ:  ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর  থেকে সড়ক ও নৌ রুটে ট্রলার, পিকআপ এবং  কভার্ড ভ্যান করে এবার শত শত মণ জাটকা ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে পাচার হয়েছে। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে জাটকা রক্ষায় মাছ না ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু একশ্রেণীর জেলে  আইন না মেনে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই নিয়মিত নদীতে যায় এবং জাটকাসহ অন্য মাছও তারা ধরছে।জাটকার সাথে এখন নদীর পাঙ্গাশ পোনাও নিধন  প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এমনকি জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মধ্যেও জাটকা নিধন বন্ধ হয়নি।
চাঁদপুর শহরসহ উপজেলা সমূহের গ্রামে-গঞ্জে হকারি করে  বিভিন্ন বাজারে জাটকা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
এবার নদীপথে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্নস্থানে এবং সড়কপথে কোস্টগার্ড ও  চাঁদপুর সদর থানা পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাটকা পাচার করার সময় জব্দ করা হয়। এতেই প্রমাণ হয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন শত শত নৌকা ও ট্রলার নদীতে নামছে। তাদের নিধনকৃত জাটকা  প্রচুর ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।

এর জন্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, তদারকি ও পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবকে দায়ী করছেন মৎস্য পেশাজীবী, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। সরেজমিনে দেখা গেছে, জাটকা অধ্যুষিত চাঁদপুরের হাইমচর মেঘনা নদীতে অবাধে জাটকা ইলিশ ধরছেন জেলেরা। জেল-জরিমানার তোয়াক্কা না করেই তারা জাটকা শিকার করছেন। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা কৌশলে বিভিন্ন বাজারে এসব জাটকা বিক্রি করছেন। এখন আবার চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের আশপাশের মেঘনা নদীতে কিছু জেলে বরশি দিয়ে মাছ ধরছে।তাদের বরশিতে ছোট ছোট পাঙ্গাশ পোনা ধরা পড়ায় সেই মাছ শহর এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রি করতেও দেখা গেছে ।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, জাটকা বড় হলে পূণাঙ্গ ইলিশে এবং পাঙ্গাসের পোনাগুলো বড় হবার সুযোগ পেলে বড় আকৃতির পাঙ্গাসে পরিণত হতো।মৎস্য বিভাগের নজর নেই সেই দিকে।  
জানা যায়,মতলব উত্তর উপজেলা একলাশপুর থেকে শুরু করে বোরোচর,আমিরাবাদ, চাঁদপুর সদর উপজেলা বিষ্ণুপুর, তরপুরচন্ডী,কল্যানপুর, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন নদী এলাকা, শহরের যমুনা রোড, টিলাবাড়ি, পুরান বাজার হরিসভা রনাগোয়াল, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দোকান ঘর, রামদাসদী খাল, বহরিয়া লক্ষ্মীপুর হরিনা ফেরি ঘাট সংলগ্ন খাল আখনের হাট, মেঘনার পশ্চিমে ইব্রাহিমপুর চর এলাকা এবং হাইমচর উপজেলার বিস্তৃর্ণ নদী জুড়ে অগণিত জেলে নদীতে গেছে এবং জাটকাসহ অন্য মাছ নিধন করেছে।

সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন  বেড়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মৎস্য বিভাগ তথা টাস্কফোর্সের অভিযানের ফাঁক-ফোকরে যারাই নির্বিচারে জাটকা নিধন করে চলেছে  ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে শংকা মৎস্য বিশেষজ্ঞদের। সাধারণভাবে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের অপরিণত ইলিশ জাটকা নামে পরিচিত।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নভেম্বর থেকে আট মাস নদীতে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। ওই সময়ের মধ্যে জাটকা ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় বা মজুদ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এসবের তোয়াক্কা না করে সরকার দলের প্রভাবে নেতারা, কিছু কর্মকর্তাদের যোগশাজসে জেলেদের দিয়ে নদীতে জাটকা নিধন অব্যাহত রেখেছে। রাতভর জাটকা ধরার পর চিহ্নিত কিছু লোক রাত দশটার পর এবং ভোর বেলায় জাটকা ক্রয়-বিক্রয় মেতে রয়েছে। ধাক্কার পরিমান বেশি হলে ট্রলারে নদী পথে ও গাড়ি দিয়ে সড়ক পথে জাটকা মাছ পাচার করছে।
এই জাটকা মাছ ক্রয় বিক্রয় করে কিছু লোক ইতিমধ্যে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের জেলা টাস্কফোর্সের এক প্রেসনোটে জানানো হয়েছে  নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরার অপরাধে এবার রেকর্ড পরিমানে জেলে আটক হয়ে কারাগারে গেছেন।বিপুল পরিমাণ  জাল নৌকা ও জাটকা মাছ জব্দ হয়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়,জাটকা নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রমের শুরু থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে জেলা ও উপজেলার টাস্কফোর্স।  কোন ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। নৌ পুলিশ কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে তৎপর রাখা হয়েছে। নিয়মিত অভিযান এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে।
‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে মেঘনা নদীতে নৌ র‌্যালী ও মাইকিং করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারিং করাসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি আদেশ পালন করা হচ্ছে কিনা তা তদারকিও করা হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে কেউ জাটকা ইলিশ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জাটকা নিধনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নানাভাবে অভিযান চলছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন , ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ জাটকা নিধন। নিষেধাজ্ঞার দুই মাস জাটকা ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ বা বহন করলে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘জাটকা ইলিশ ধরব না, দেশের ক্ষতি করব না’ স্লোগান সামনে রেখে ১ মার্চ হতে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে জাটকা নিধন প্রতিরোধ অভিযান শুরু হয় । যা আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত চলবে।

সর্বাধিক পঠিত