ঈদের বাজারে আগুন
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে ঈদের পোশাকের বেচা-বিক্রি। তবে ক্রেতাদের জন্যে খারাপ খবর হলো, এ বছর বিভিন্ন মার্কেটে ঈদের পোশাকে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ অধিক অর্থ খরচ করতে হবে।
ফরিদগঞ্জ বাজার, রূপসাবাজার, গৃদকালিন্দিয়া বাজার, নয়াহাট বাজার, কালিরবাজার, পাটওয়ারী বাজারসহ উপজেলার বাজারগুলোতে কাপড়ের দোকানে ঘুরে একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। অন্য সময়ের চেয়ে চওড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ঈদের পোশাক।
এ বিষয়ে জানতে প্রথম রমজান থেকে বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার পাইকারি মার্কেটগুলো থেকে পণ্য পাইকারি ক্রয় করতে গেলে সেখানে তাদের প্রতিটি পণ্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এক থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যান্ড ও পোশাকের মান বিবেচনায় কোনো কোনো পোশাকের পাইকারি মূল্যই বেড়ে হয়েছে হাজার-বারোশ’ টাকা। দোকানিরা জানান, কোনো মাল আমরা ১০ টাকা কমে কিনতে পারলে ১০ টাকা কমে বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু মূল জায়গাতেই তো দাম বেড়েছে। আমরা বেশি টাকায় পণ্য কিনে কম দামে বিক্রি করা তো সম্ভব নয়। দাম বেশি হওয়ায় অনেক দোকানে আসা ক্রেতারা পোশাক দেখে দরদামে মিল না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের দাবি, কোনো পণ্য পঞ্চাশ-একশ’ টাকা বেশি হলে তবুও আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। কিন্তু পাঁচশ’ টাকার পোশাক যদি সাতশ’ টাকা চাওয়া হয় তখন আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।
ক্রেতাদের সাথে বলে জানা যায়, পূর্বে যে সকল থ্রি-পিচ বিক্রি হতো পাঁচশ’ টাকা, একই থ্রি-পিচ এখন আমাদের কিনতে হচ্ছে সাতশ’ টাকায়। মানভেদে সাতশ’ টাকার থ্রি-পিচ নয়শ’ টাকা, একহাজার টাকার থ্রি-পিচ বারোশ’ টাকা এবং বারোশ’ টাকার থ্রি-পিচ কিনতে হচ্ছে পনেরোশ’ টাকা থেকে ষোলোশ’ টাকায়।
পুরুষদের পোশাকেও একই দৃশ্য। গত বছর যে শার্ট বিক্রি হতো তিনশ’ পঞ্চাশ টাকা থেকে চারশ’ টাকা, এ বছর সেগুলো কিনতে হচ্ছে ছয়শ’ টাকায়। কিছুটা ভালো মানের শার্ট কিনতে যেখানে খরচ করতে হতো পাঁচ-ছয়শ’ টাকা, সেখানেই শার্ট কিনতে খরচ করতে হচ্ছে আটশ’ পঞ্চাশ থেকে নয়শ’ টাকা। পাঁচশ’ টাকার পাঞ্জাবি ছয়শ’ থেকে সাতশ’ টাকা এবং সাতশ’ পঞ্চাশ টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে নয়শ’ টাকায়। চারশ’ পঞ্চাশ টাকার লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ছয়শ’ টাকায়।
বাচ্চাদের পোশাকেও একই দৃশ্য। দুইশ’ পঞ্চাশ টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে তিনশ’ পঞ্চাশ টাকারও বেশি। বয়স ও মানভেদে ছয়শ’ টাকার পোশাক সাতশ’ পঞ্চাশ এবং বারোশ’ টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে পনেরোশ’ টাকায়। ভিন্ন বয়সের মানুষের জুতাতেও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে দাম। পূর্বের দামের চেয়ে প্রতিটি জুতা এক থেকে তিনশ’ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ বাজারের জাকিয়া বস্ত্র বিতানের পরিচালক জাকির পাটওয়ারী শুভ জানান, আমরা যেখান থেকে মাল পাইকারি কিনি সেখানেই প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা। এ কারণেই অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রতিটি পণ্য কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। মোকামে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদেরকে পণ্যের ক্রয়মূল্য অনুপাতে বিক্রি করতে হবে।
দুই মেয়ের জন্যে থ্রি-পিচ কিনতে আসা সাবিনা আক্তার জানান, সেলাই করার জন্যে মেয়েদের পোশাক রমজানের শুরুতেই কিনতে হয়। এ বছর থ্রি-পিচ কিনতে এসে দেখি, দোকানদাররা অনেক বেশি দাম চাচ্ছে। কয়েক দোকানে ঘুরে দেখেছি, দোকানদাররা অধিক মূল্য চাওয়ার কারণে এখনো কিনিনি। পোশাকের দাম এক-দেড়শ’ দুইশ’ টাকা বেশি হলেও আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। আঠারোশ’ থেকে দুই হাজার টাকার থ্রি-পিচ দোকানদার চাচ্ছে পঁচিশশ’ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা। পোশাকের এমন মূল্য হলে তো আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে না।
দাম স্থিতিশীল রাখতে গত ২৮ মার্চ বুধবার ভোক্তা অধিকার চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নূর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল ফরিদগঞ্জ বাজারে তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করেন। ভোক্তা অধিকারের প্রতিনিধি দলটি এ সময় বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে ঘুরে ত্রিশ শতাংশের বেশি লাভে পণ্য বিক্রি না করার জন্যে বলেন এবং অতিরিক্ত লাভে পণ্য বিক্রির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হবে বলে দোকানদারের অবগত করেন।