• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর-ঢাকা নৌ-রুটে লঞ্চে কেবিন-ক্যান্টিনে নানা ভোগান্তি

প্রকাশ:  ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

নৌ রুটে অনেকটা আরামদায়ক ও স্বল্প সময়ে চাঁদপুর থেকে রাজধানী ঢাকা যাতায়াত করা সহজ হয়ে গেছে। তাই শুধু চাঁদপুর নয়, পার্শ¦বর্তী ফেনী, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর জেলাসহ এ অঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রীর কাছে এই নৌরুট বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। যদিও বিআইডব্লিউটিএ অনেকাংশ দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করলেও এখানে আধুনিক নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি দীর্ঘ দেড়যুগেও। টার্মিনালে প্রবেশ মুখে সরকারের নির্ধারিত টিকেট কেটে প্রবেশের পর বিন্দুমাত্র যাত্রীসেবার ব্যবস্থা নেই। পুরো টার্মিনালে বসার নির্ধারিত স্থান কিংবা টয়লেট ব্যবস্থাও নেই। এখানে যাত্রীদের নাগরিক সুবিধাতো দূরের কথা কখনো কখনো তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এ রুটে চলাচল করছে। চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী ও ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী সকল লঞ্চই বিলাসবহুল। প্রতিদিন প্রায়  অর্ধশত জাহাজ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করছে। পদ্মা সেতুর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে নৌ পরিবহন খাত কিছুটা লোকসানের মুখে পড়লেও প্রভাবহীন চাঁদপুর-ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ রুটে যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ নৌরুটটি ব্যবসায়িকভাবেও বেশ লাভজনক হয়ে ওঠেছে। অথচ বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে যাত্রী সেবা অত্যন্ত নাজুক বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। লঞ্চের কেবিনগুলোতে প্রায়ই অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে চাঁদপুর-ঢাকাগামী বিলাসবহুল লঞ্চের কেবিনে তরুণী ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার একবার বিভিন্ন লঞ্চে অভিযান পরিচালনা করে বেশ ক’জনকে আটক করেছেন। যারা নানা অসামাজিক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। লঞ্চের কেবিনের ভাড়া বেড়েছে কিন্তু যাত্রীসেবার মান অত্যন্ত নাজুক। জানা যায়, অধিকাংশ লঞ্চের কেবিনের একই বেডসিট অর্থাৎ বিছানার চাদর যাত্রী চলে যাবার পর পরিবর্তন না করে একই চাদর ফের ব্যবহার করা হয়। যা ব্যবহৃত হয় বেশ ক’দিন ধরে।
    বর্তমানে এ রুটে লঞ্চের ক্যান্টিনগুলোতে সকল প্রকার খাবারের দাম যাত্রীদের কাছে অস্বাভাবিক বেশি রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে ক্যান্টিন মালিকদের বিরুদ্ধে। লঞ্চ ক্যান্টিনগুলোতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের গলাকাটা দাম যাত্রীদের নিরুপায় হয়েই দিতে হচ্ছে। একরকম জিম্মি হয়েই অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেক লঞ্চে খাওয়া শেষে মাছ মাংস থেকে গেলে কিংবা অবিক্রিত থাকলে তা নদীর পানিতে ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়া হয়। পরে ফের রান্নার সময় ফ্রিজ থেকে বের করে তরকারিতে দিয়ে গরম করে পরিবেশন করার অভিয়োগ ওঠেছে কয়েকটি লঞ্চের ক্যান্টিন মালিকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চে অতিরিক্ত দাম নিয়ে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয় এমন অভিযোগ ওঠেছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এছাড়া বোতলজাত ও প্যাকেটজাত সকল পণ্যের গায়ের মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। কয়েক বছর আগে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারিত মূল্য তালিকা দেয়া হলেও কোনো লঞ্চে তা মানা হচ্ছে না। প্রতিটি লঞ্চের কোন একটিতেও নেই মূল্য তালিকা।
এমভি রফরফ লঞ্চের যাত্রী শরীফ হোসেন জানান, লঞ্চগুলোর মালিক প্রতিনিধিরা কেন্টিন পরিচালনায় খোঁজ খবর রাখেন না। যার কারণে লঞ্চের ক্যান্টিন মালিকরা ইচ্ছেমত খাবারের দাম বৃদ্ধি রেখে বিক্রি করে আসছে। টিপু সুলতান নামে আরেক যাত্রী বলেন, দাম বেশী নিলেও সমস্যা নেই, কিন্তু খাবারের মানটা ভাল হওয়া দরকার। কারণ মানুষ অনেক সময় দূর দূরান্ত থেকে জার্নি করে লঞ্চে এসে খাবার গ্রহণ করেন। তখন খাবারের মান নিয়ে যাচাই করার সময় থাকে না। তাই যে কোন খাবার পেলেই কিনে খেতে হয়। আর প্যাকেটজাত সকল পণ্যই বেশি দাম দিয়ে কিনে নিতে হচ্ছে।
দুই-একদিন পর শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। সেহেরি ও ইফতারের সময় সঠিক এবং খাবারের প্রকৃত দাম নির্ধারণ করে দেয়া উচিত বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। তিনি আরো বলেন, কেবিনের যাত্রী চলে গেলে সেই বেডসিট বা বিছানার চাদর, বালিশের কভার পরিবর্তন করা দরকার, জীবানুনাশক স্প্রে করা দরকার, কিন্তু একটি লঞ্চেও তার কিছুই করা হচ্ছে না। অথচ কেবিন ভাড়া পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ রাখা হচ্ছে।
এমভি রফরফ-৭ লঞ্চের ক্যান্টিন মালিক হাজী জাকির বলেন, আমরা লঞ্চে সব সময়ই প্যাকেজ অনুসারে খাবার বিক্রি করে থাকি। মুরগি, মাছ ও ডাল দিয়ে ১৮০টাকা দামে প্যাকেজ খাবার বিক্রি করি। তিনি বলেন, আমাদেরকে বাধ্য হয়েই খাবারের দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার টাকা লঞ্চ মালিককে ভাড়া দিতে হচ্ছে। স্টাফ, বাবুর্চির হাজিরাসহ প্রতিদিন লঞ্চে খরচ আছে সাড়ে আট হাজার টাকা। তাছাড়া জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। আধা ঘন্টা পর পর লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। তাই  যাত্রী আগের মতো হচ্ছে না। যে কারণে কেন্টিন নিয়ে এখন বিপাকে আছি। তাই খাবারের দাম একটু বেশিই রাখা হয়। ওই লঞ্চের টং দোকানী বলেন, আমাকে প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। এছাড়া মালামাল আনার জন্য লেবার খরচ দিতে হয়। সব মিলিয়ে খরচ বেশি পড়ে। তাই প্যাকেটজাত পণ্য বেশি বিক্রি করতে হয়।
জমজম লঞ্চের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার জানান, আমরা লঞ্চের ক্যান্ট্রিন এবং দোকানে নির্ধারিত মূল্যে খাবার বিক্রি করার নির্দেশ দিয়ে থাকি। আমরা রান্না করা খাবারের দাম বাজার অনুসারে নির্ধারণ করতে বলেছি। আর প্যাকেটজাত পণ্য নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতেও তাদের বলা হয়েছে।
জেলা ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোশারেফ হোসেন বলেন, লঞ্চে প্যাকেটজাত পণ্যের দাম বেশি নেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। যারা বেশি নিচ্ছেন তারা আইন লঙ্ঘন করছেন। আর যারা নিজেরা খাবার তৈরি করেন, তাদেরকে সহনশীল দামে বিক্রি করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি লঞ্চে খাবারের নির্ধারিত মূল্য তালিকা রাখার কথা থাকলেও কেউ তা পালন করছে না। এছাড়া ভোক্তা অধিকার আইনে প্যাকেটজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি রাখা আইনগত অপরাধ। কোনোভাবেই প্যাকেটের নির্ধারিত মূল্যের বেশি বিক্রি করা যাবে না। আর কেউ বিক্রি করলে এর জন্য জেল-জরিমানা হতে পারে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা বলেন, লঞ্চে খাবারের দাম বৃদ্ধি রাখা ও মান খারাপের এরকম অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান করবো। দাম বেশি রাখা ও কেবিন নিয়ে যে সমস্যা তা পরির্তন না করলে আমরা মোবাইল কোর্ট করবো।

 

সর্বাধিক পঠিত