মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল
চাঁদপুরে শিক্ষা বিস্তারে পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীদের অবদান অনেক
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি শোক জ্ঞাপনসহ শোকার্ত হৃদয়ে অনাড়ম্বর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা (এমএইচ) উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। গতকাল ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাঠে অনুষ্ঠিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। তিনি গত দুদিনে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশপূর্বক পরিবার-পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই দেশটির সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক। দেশটিসহ সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে বাংলাদেশ গভীরভাবে শোকাহত। এ ঘটনা বাংলাদেশ আজকে জাতীয়ভাবে শোক পালন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন বিপদের সময় দেশটির পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন। তাদের সাহায্যার্থে মেডিকেল টিম, ওষুধসহ অন্যান্য সাহায্য পাঠিয়েছেন। আজকের এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ পুরস্কার বিতরণ আয়োজনটি পূর্ব নির্ধারিত থাকায়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুষ্ঠানটি করতে হয়েছে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যে একটি উৎসবের দিন। খেলাধুলার ক্ষেত্রে এদিন তারা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলায় পারদর্শী হতে পারাও গৌরবের বিষয়। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি কৃতী খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্যে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দেন।
তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম কথা হলো মানবতা। তাই আমাদের সকলকে মানবতা ও মানবিকতাসম্পন্ন মানুষ হতে হবে। আমরা যদি মানবিক গুণাবলির অধিকারী না হতে পারি, তাহলে আমার দ্বারা রাষ্ট্র, সমাজ বা কোনো মানুষই উপকৃত হবে না।
তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন বহুতল ভবন। যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছে। এ চিত্র শুধু চাঁদপুরেই নয়, সারা দেশে দৃশ্যমান। আর তা সম্ভব হয়েছে আমাদের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনির কারণে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর সাংসদ থাকাকালীন ডাঃ দীপু মনি চাঁদপুরের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি হাইমচর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো চাঁদপুর শহর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ দিতে হবে। আমাদের এই দাবিও পূরণের পথে। ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে, এখন শুধু বাস্তবায়নের পথে।
তিনি তাঁর বক্তব্যে পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চাঁদপুরে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীদের অবদান রয়েছে। তারা শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে এখনো কাজ করছেন। তিনি উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের গতি যদি আমরা অব্যাহত রাখতে চাই, তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে হবে। আওয়ামী সরকারকে নির্বাচিত করতে হবে। তিনি চাঁদপুর পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রমও তুলে ধরেন এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিয়ে যেতে পৌরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়ের সভাপ্রধানে অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী মাঝি, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি ও দাতা সদস্য তমাল কুমার ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র দাস।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহীন সুলতানা ও মোহাম্মদ হোসাইনের যৌথ পরিচালনায় অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, পুরাণবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আলী হোসেন, ২নং সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র গোস্বামী, পৌর মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌসি বেগম, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান বাদল, বিপ্লব কুমার গোপ, জাকির হোসেন খান শিপন, অভিভাবক সদস্য সাংবাদিক মিজানুর রহমান, জাকারিয়া ভূঁইয়া বতু, শাহজাহান মাতাব্বর, মোঃ মোবারক হোসেন বেপারী, পারভেজ খানসহ সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীগণ। তাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে ক্রীড়া অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। প্রায় ১২শ’ শিক্ষার্থীর শিক্ষাগ্রহণের সকল সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বর্তমান সময় অবধি বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞানাগার না থাকায় প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র দাস শেখ রাসেল আইসিটি ল্যাব স্থাপনের লক্ষ্যে প্রধান অতিথি জিল্লুর রহমান জুয়েলের মধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সুদৃষ্টি কামনা করেন এবং বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের সুবিধার্থে আরো একটি বহুতল ভবন নির্মাণের দাবি জানান।
বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদেরসহ ক্লাস পর্যায়ে মেধাবীদের মাঝেও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।