• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে নয়টি ঘর পুড়ে গেছে

খোলা আকাশের নিচে পরিবারগুলো

প্রকাশ:  ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া। মাত্র দুই সপ্তাহ পূর্বে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় নূতন ক্লাসের বই পেয়েছে। নূতন বইয়ের আনন্দে মাতোয়ারা ছিলো এতোদিন। কিন্তু আগুন তার আনন্দকে বিষাদে পরিণত করলো। আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হওয়া বসতঘরের ছাইয়ের মধ্যে তার পুড়ে যাওয়া বইটি খুঁজে পেয়ে চোখের জল ফেলেছে। ছোট্ট শিশুটির বুকের চাপা আর্তনাদ কতোটা গভীর, সেটি তার দুই চোখ বেয়ে পড়া অশ্রুই প্রমাণ করে। শুধু সামিয়া নয়, রোববার রাতের অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো প্রতিটি পরিবারের আর্তনাদের চিত্র করুণ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের হুগলি গ্রামে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার ঘটনায় গ্রামের হাটখোলা বাড়ির ৭টি পরিবারের ৯টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন ও ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজনের ঘন্টাব্যাপী চেষ্টার কারণে ওই বাড়ির আরো ২৫/৩০টি ঘর রক্ষা পায়। আগুনে অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ ভস্মীভূত হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। আগুনে সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে ওই বাড়ির সিরাজুল ইসলামের বসতঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়লে পাশে থাকা মাইনুদ্দিন, শফিউল্লাহর বসতঘরসহ মোট ৯টি ঘর পুড়ে যায়। পরে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ায় জীবন বাঁচাতে বাড়ির লোকজন নিরাপদে আশ্রয় নেয়।
প্রায় এক ঘন্টার আগুনের ভয়াল থাবায় ওই ৭টি পরিবারের নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, দলিলাদি, খাবার ও আসবাবপত্র এমনকি শিশুদের বইসহ শিক্ষা উপকরণ পর্যন্ত পুড়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আহছান উল্যাহ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭ পরিবারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে ওই পরিবারগুলো সচ্ছল থাকলেও আগুনের ছোবলে পরিবারগুলো একেবারে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এমনকি তাদের দুইবেলার খাবারের অর্থ পর্যন্ত পুড়ে গেছে।
ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হই এবং বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলিমুন নেছা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুঃখজনক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মী গাজী মমিন ও আঃ কাদির জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছে। পুড়ে ছাই হওয়া স্থানে লোকজনকে সঞ্চিত স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ খুঁজতে দেখা গেছে। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়েছে ছোট্ট শিশু সামিয়ার পুড়ে যাওয়া বই হাতে চোখের জল ফেলার করুণ চিত্রটি। আমরা আশা করছি, জনপ্রতিনিধি, সমাজের দানশীল ব্যক্তি এবং প্রশাসন এই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াবেন। যাতে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

 

সর্বাধিক পঠিত