• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জে নির্মাণাধীন সড়কে রাতের আঁধারে ফেলা হয় পচা ইট

প্রকাশ:  ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দিনের বেলা লোকজনকে দেখানোর জন্য কিছুটা ভালো মানের ইট বা সুড়কি ফেলা হলেও রাতের আঁধারে সেগুলোর সাথে মিশানো হয় পচা ও নাম্বারবিহীন ইট। এছাড়া সড়কটিতে পানি জমে থাকাবস্থায় কাদামাটির ওপর বালি ফেলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ঠিকাদারের লোকজনকে এ ব্যাপারে বললেও তারা কর্ণপাত করছে না। ইতোমধ্যেই সড়ক নির্মাণে অনিয়মের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন লোকজন। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের আলোনিয়া গুদারাঘাট বাজার হতে এখলাশপুর-রায়পুর সড়কের।
সরেজমিন ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে সিসিবি প্রকল্পের আওতায় ৮৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের আলোনিয়া গুদারা ঘাট বাজার হতে এখলাশপুর-রায়পুর সড়ক থেকে মালি বাড়ির কালভার্ট পর্যন্ত ১০২০ মিটার অংশের কার্পেটিংয়ের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমআই ট্রেডিং এন্ড কোং। গত সেপ্টেম্বর থেকে সড়কের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নি¤œমানের ইট দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সড়কটি। এদিকে কাজ শুরু করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নি¤œমানের ইটের ব্যবহার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, সড়কের কাজে শুরু থেকেই নানা অনিয়ম শুরু হয়। বৃষ্টিতে ভেজা কাদা মাটি রাস্তা থেকে না সরিয়ে তার ওপর বালি ফেলেছে ঠিকাদারের লোকজন। তাদের তখন বাধা দেয়া হলেও তারা শোনেনি। তারপর থেকেই শুরু হয় সড়কে ইটের কাজ, তারা নি¤œমানের ইট ব্যবহার করলে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ মানুষজন তাদের বাধা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনকে দেখানোর জন্য দিনের বেলায় কিছুটা  ভালো মানের ইট সড়কে ফেলা হয়। কিন্তু রাত নামলেই তারা নি¤œমানের ও নষ্ট ইট ওই ইটের সাথে মিশিয়ে দেয়। দিনের প্রথম অংশে নি¤œমানের ইট ব্যবহার করে পরের অংশে ভালো ইট উপরে দিয়ে দেয়, যাতে মনে হয় ভালোমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। 
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন জানান, গত বেশ ক’দিন ধরে আমিসহ লোকজন সড়কে ফেলা নি¤œমানের ও পচা ইট উঠিয়ে নিতে বাধ্য করেছি। সাইটে থাকা লোকজনকে বারবার সড়কের কাজে নি¤œমানের ইট ব্যবহার করতে নিষেধ করলেও তারা শুনছে না। 
বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিনও একই অভিযোগ করে বলেন, নি¤œমানের ইট হাত দিয়ে ধরলেও পাউডার হয়ে যায়। এই ইট দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে কয়েক মাসের মধ্যেই সড়ক নষ্ট হয়ে যাবে। 
ইউপি সদস্য আলী হোসেন জানান, তারা কাদামাটির ওপর বালি ফেলছে, যা পরিপূর্ণ অনিয়মের মধ্যে পড়ে। এখন আবার শুরু করছে নি¤œমানের ইট ব্যবহার। তাদেরকে অনেকবার আমি সাবলীলভাবে বাধা দিয়েছি, তারা শোনেনি। দিনে কাজ চলমান সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কেউ থাকে না। তবে রাতের আঁধারে ইট-বালি এনে দিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মানুষজন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিরাজ জানান, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ পেয়ে সরেজিমন গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন কয়েকটি ইট বুক বরাবর উপর থেকে মাটিতে ফেলে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করে কাজের অনিয়ম ঢাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ জানান, সড়ক নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমআই ট্রেডিং এন্ড কোং-এর মালিক আলমগীর গাজী কিছু ইট খারাপ পড়েছে স্বীকার করে বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই সড়কটি নির্মাণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ‘আপনার কাজ অনিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা বলেন নি।

সর্বাধিক পঠিত