ফরিদগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর উপর এমএ ওয়াদুদ সেতু
অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না দুই পাড়ের লাখো মানুষের
কথা ছিলো চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে সেতুটির। তাতে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষার প্রহর গোনা সেতুর দুই পাড়ের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে। কিন্তু ৫ বছরেও যেনো অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। এই কাক্সিক্ষত এবং স্বপ্নের সেতুটি হলো ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতু। এরই মধ্যে ২০১৭-এর পর ২০২২ শেষ হতে চললো।
এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চরণবলিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ (৬৫)। প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুই বেলা এসে চায়ের দোকানে বসে চা পান করেন আর তাকিয়ে থাকেন নির্মাণাধীন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর দিকে। তাকিয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নিজেদের জমি দিয়েছি এই সেতুর জন্য। সেতু হলে দুই পাড়ের মানুষের জন্য ভালো হবে এই ভেবে। কিন্তু বছরের পর বছর যাচ্ছে, সেতুর কাজ শেষ হয় না। মরার আগে দেখতে পারবো কিনা জানি না।
ওপার চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামের বাসিন্দা মাধব দাস (৪৫)। তিনিও ক্ষুব্ধ। কারণ একটাই। আশপাশের দোকানিসহ এলাকাবাসীর কথাÑসেতুর কাজ শেষ হবে কবে। নদীর উপর মূল সেতুর কাজ দুই বছর পূর্বে সম্পন্ন হলেও সেতুর সংযোগ অংশ ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায়, ‘হইয়াও হইল না শেষ’ এই অবস্থা বিরাজ করছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যে সরকার প্রবাহমান নদীর উপর একের পর এক সেতু নির্মাণ করছে। ফলে শুধু দুই পাড়ের নয়, সেতু সংযোগকারী সড়কটি দিয়েও চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা উপকৃত হয়। উন্নয়ন হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক গতিধারা। কিন্তু নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে সুফলের পরিবর্তে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। যেমনটি হয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর উপর ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর ক্ষেত্রে। গত ৫ বছরেও সেতুটির সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নির্মাণকাজে ধীরগতি।
ডাকাতিয়া নদীর উপর ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চরণবলিয়া গ্রাম ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বগার গুদাড়া এলাকা দিয়ে ২৭৭ মিটার দীর্ঘ ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই সংসদীয় আসনের সদস্য ডাঃ দীপু মনি ও ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যৌথভাবে সেতুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নবারণ টেড্রার্স লিঃ সেতুটির মূল নদীর উপরের কাজটি সম্পন্ন করে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথভাবে কাজ শুরু করে। নির্মাণকাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা জুন ২০২৩ পর্যন্ত করা হয়।
সরজমিনে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সেতুর নির্মাণকাজ এলাকায় গেলে দেখা যায়, সেতুর ফরিদগঞ্জ উপজেলা অংশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ৮/১০ জন শ্রমিক সেতুর ডায়াফাক্টের কাজ করছে। অপর পাড়ের পিয়ারের ক্যাপের কাজ শেষে একটি ডায়াফাক্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট প্রকৌশলী নাঈমুর রহমান।
তিনি জানান, সেতুর সংযোগ অংশের জন্যে দুই পাড়েই নির্মাণকাজ চলছে। চাঁদপুর সদর অংশের কাজ অনেকখানি শেষ হয়েছে। এখন ফরিদগঞ্জ অংশের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সেতুর সংযোগ অংশ ও সড়কের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হবে। প্রতিদিন রাতে-দিনে গড়ে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছে। গত দুই মাস ধরে কাজে গতি এসেছে বলে তিনি জানান।
এদিকে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন (৩০), মনির হোসেন (৩৮), আলাউদ্দিন (৩৪), মিজান (৬০), শফিকুর রহমান (৭০)সহ বেশ কজন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কাজের ধীরগতি ও শ্রমিক কম দিয়ে কাজ করানোর কারণে ডায়াফাক্টের পিয়ারের ক্যাপের রডে মরিচা ধরছে। ঠিকমত এখানে নির্মাণসামগ্রীও আনা হয় না।
বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধীরলয়ে কাজ করছে। কবে যে শেষ হবে বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে এলজিইডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস হোসেন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ডিসেম্বর ২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে জুন ২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগেই পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার আশা করছি।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর-হাইমচর আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির পিতা ভাষাবীর মরহুম এমএ ওয়াদুদের নামানুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়।