‘প্রেমের মরা জলে ডুবে না’
৪ মাসে ১ বার তালাক, ২ বার বিয়ে! অভিভাবকের বাধার মুখে উভয়েরই আত্মহত্যার চেষ্টা
অবুঝ দুটি প্রাণ, অবুঝেই বাঁধলো ঘর। কোর্ট মেরিজ নামক সহজ সিস্টেম তাদের অসুন্দর পথকে করে দিয়েছে অধিকতর সহজ। ৪ মাসের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়েছে ২ বার, তালাক হয়েছে ১ বার। ২য় বিয়ের ৬ দিনের মাথায় পুলিশের সহযোগিতায় মেয়েকে উদ্ধার করে আনে তার পরিবার। চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদেরকে বিচ্ছেদ করার চেষ্টার কারণে উভয়ই আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের নজরদারির কারণে এ যাত্রায় তারা বেঁচে গেলেও শঙ্কা এখনো থেকে গেছে। যে কোনো সময় তারা যে কোনো কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
ফরিদগঞ্জ কেআর প্রত্যাশী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া আক্তার ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস ছাত্র মোঃ অপু দীর্ঘদিন প্রেমের দরিয়ায় নাও চালিয়েছেন। কচি দুটি মনে হঠাৎ করেই রঙিন ফানুস উড়তে থাকে। এবার তারা বিয়ে করবে। অপুর বন্ধুদের সহযোগিতায় চলতি বছরের ২৭ জুলাই তারা চাঁদপুর কোর্টে গিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। এ বিয়ের জল গড়িয়েছে বহুদূর।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাঁসা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাসুদ আলমের বড় মেয়ে মারিয়া ও ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের আব্দুল হামিদ গাজীর ছেলে মোঃ অপু গাজী পালিয়ে বিয়ে করে। তাদের গোপন বিয়ের খবর আর গোপন রইলো না। মেয়ের মাসহ আত্মীয়-স্বজন মারিয়াকে মোটিভেশন করিয়ে ছেলেকে তালাক দেয়। কিন্তু অপুর প্রেমের শক্তির কাছে আবারও নতজানু হতে হয় মারিয়াকে। সকল বাধা-বিপত্তিকে পায়ে দলে তারা আবারও বিয়ে করেন। এবারও তারা কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়। তবে মারিয়া হলফনামায় তথ্য গোপন করে অসত্য তথ্য দিয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর রোববার কোর্টে গিয়ে ২য় বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা। বিয়ের পর অপু তার বৌকে নিয়ে উঠেন ভগ্নিপতির বাড়ি ফরিদগঞ্জের মিরপুরে। সেখানে তারা সুখেই দিনাতিপাত করছিলো। তাদের সুখে অসুখ হয়ে আসীন হন মারিয়ার মা তাছলিমা বেগম। তিনি এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের আলোকে থানার এএসআই মহিউদ্দিন ছেলের অভিভাবকের সাথে কথা বললে তারা মারিয়াকে গত ২৬ নভেম্বর তার মায়ের হাতে তুলে দেন।
এদিকে মারিয়াকে তার মায়ের হেফাজতে দেয়ার কয়েক ঘণ্টার পর সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মারিয়া আত্মহত্যা করতে গেছে এ সংবাদ শুনে অপুও তার ঘরে থাকা কীটনাশক খাওয়ার চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে মারিয়ার মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা দিইনি এটা তাদের কপাল’। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেনি। রুমের দরজা বন্ধ দেখে আমি চিৎকার করি, তখন সে নিজেই দরজা খুলে দেয়’।
এ বিষয়ে মারিয়া আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি।’ ‘কেনো আত্মহত্যা করতে গেলে’ এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে, ‘জানি না’। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মারিয়া বলে, ‘পুলিশ বলেছে আমি যদি এ বাড়িতে (বাপের বাড়ি) না আসি, তাহলে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাবে। তাকে যদি ধরে নিয়ে গিয়ে মারে, সে ভয়ে আমি চলে আসি’।
এ বিষয়ে তাছলিমা বেগমের গার্ডিয়ান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ছেলে মেয়ে দুজনেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক, তাই আমরা বিষয়টি এখানেই শেষ করতে চাই। আর মেয়ের বাবা জানুয়ারিতে দেশে আসবে, তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে’।
ছেলের বাড়িতে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ সময় তার বাবাকেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অপুর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপু এই মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন প্রেম করেছে এবং তারা বিয়েও করেছে। এটা নিয়ে সমস্যাও হয়েছে, তাই ছেলে বিষ খাওয়ার চেষ্টা করেছে। দুটি মুখের দিকে তাকিয়ে দুই পরিবারের উচিত এই বিয়ে মেনে নেওয়া’।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না।
এএসআই মহিউদ্দিন বলেন, মারিয়ার মা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। মেয়েকে পাওয়ার পর তিনি অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। এটা এএসআই মহিউদ্দিন জানেন। তিনি এটা ডিল করছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ের অভিভাবক যদি চায় তাহলে আমরা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করবো।