আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে ভাবনায় আলী এরশ^াদ মিয়াজী
চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমাকে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে তৃণমূলের অনুরোধ
দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নিকট আমার আহ্বান রইলো, দলের দুঃসময় থেকে এই দলের রাজনীতি শুরু করে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, সকল লোভ-লালসাকে তুচ্ছ করে আজো আছি এবং যতদিন বেঁচে থাকবো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে লালন করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবো। দীর্ঘ এই পথচলায় সকল কিছু বিবেচনা করে আমাকে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত করবেন-এটাই আমার প্রত্যাশা।
গোলাম মোস্তফা ॥ চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর সদর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিঃ-এর চেয়ারম্যান ও আসন্ন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী এরশ^াদ মিয়াজী বলেছেন, আমি দীর্ঘদিন চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত নেতা-কর্মী, সমর্থকদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছি। নেতা-কর্মীদের যে কোনো সমস্যায় আমি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। পুরো উপজেলায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের পক্ষ থেকে তথা তৃণমূল থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমাকে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমি তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আসন্ন চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে ভাবনায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। প্রশ্নোত্তর আকারে তার পূর্ণাঙ্গ ভাবনাটি নিচে তুলে ধরা হলো :-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আগামী ১১ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং তার পূর্বে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সম্মেলন। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আলী এরশ^াদ মিয়াজী : জেলার অধীনস্থ ইউনিটগুলোর সম্মেলনের আয়োজন আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলাধীন প্রত্যেকটি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের মাঝে যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি আসবে তাদের গতিশীল নেতৃত্বে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি সম্মেলনের মাধ্যমে কেমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন?
আলী এরশ^াদ মিয়াজী : তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে যাদের নিবিড় সম্পর্ক এবং তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সুখ-দুঃখে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব আসুক-এটাই আমার প্রত্যাশা।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি নিজে কি কোনো পদে প্রার্থী?
আলী এরশ^াদ মিয়াজী : আমি দীর্ঘদিন চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত নেতা-কর্মী, সমর্থকদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছি। নেতা-কর্মীদের যে কোনো সমস্যায় আমি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। পুরো উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের পক্ষ থেকে তথা তৃণমূল থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমাকে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমি তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আসন্ন চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?
আলী এরশ^াদ মিয়াজী : বিএনপির তথাকথিত আন্দোলনে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি মোটেও উদ্বিগ্ন বা বিচলিত নই।
কারণ, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে বিএনপি, জামাত জোট আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিলো তার ফলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে যে খাদে পড়েছিলো সেখান থেকে তারা আজো উঠতে পারছে না। তাছাড়া বিএনপি যে ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে তা সম্পর্কে এদেশের মানুষের জানা রয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়ে তারা সচেতন রয়েছে। বৈশি^ক করোনা মহামারী ও রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তারই প্রভাবে বাংলাদেশে সাময়িক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এটি আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে সহসাই কেটে যাবে। ইনশাআল্লাহ। অতএব এদের আন্দোলন নিয়ে ভাবার সময় আমাদের নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কী উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
আলী এরশ^াদ মিয়াজী : বিএনপি আন্দোলনের নামে কোনরূপ নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে এদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশি^ক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?
আলী এরশ^াদ মিয়াজী : ইনশাআল্লাহ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখাসহ সারা বিশ্বে বাংলাদেশের যে গৌরবোজ্জ্বল ভার্বমূতি সৃষ্টি হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে এদেশের জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।
আলী এরশ^াদ মিয়াজী : আমার রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘদিন ধরে যে সমন্বয় ও সম্প্রীতি নিয়ে আস্থার সাথে আমরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ পরিচালনা করে আসছিলাম, আমার আশা থাকবে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটি পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল রাজনীতির ইতিহাস ঐতিহ্য অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি আমার দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নিকট আমার আহ্বান রইলো, দলের দুঃসময় থেকে এই দলের রাজনীতি শুরু করে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, সকল লোভ-লালসাকে তুচ্ছ করে আজো আছি এবং যতদিন বেঁচে থাকবো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে লালন করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবো। দীর্ঘ এই পথচলায় সকল কিছু বিবেচনা করে আমাকে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত করবেন-এটাই আমার প্রত্যাশা রইলো।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী এরশ^াদ মিয়াজী ১৯৭২ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ছাত্র রাজনীতি শেষে ১৯৭৫ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ওই বছর তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার ৭নং তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হন। পরে উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ওই অবস্থায় ১৯৯০ স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ২০০৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে অদ্যাবধি এই দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ১০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি জামাত জোটের নাশকতা প্রতিরোধে চাঁদপুর সদর উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষা করে এবং পরবর্তীতে নাগরিক সমাবেশের মাধ্যমে তা প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি বর্তমানে চাঁদপুর সদর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিঃ-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনি চাঁদপুর সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংক লিঃ-এর বর্তমান সম্পাদক। চাঁদপুর সমবায় ব্যাংকের দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালক ও ৬২নং গুণরাজদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ছিলেন।