• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বোগদাদ বাস কি সিরিয়াল কিলার?

প্রকাশ:  ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
 বোগদাদ বাস সার্ভিস এখন এক আতঙ্কের নাম। দিন যতই যাচ্ছে বোগদাদ বাসের চাপায় পিষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত বোগদাদ বাস সার্ভিসের কবলে পড়ে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বোগদাদ বাসের বেপরোয়া চলাচল নিয়ে চাঁদপুরের পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি এ পর্যন্ত কম হয়নি। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কাই করেনি বোগদাদ বাস কর্তৃপক্ষ। এ বাসের সর্বশেষ বলি স্কুল শিক্ষিকা নাজমা আক্তার (৫৫)। একের পর এক প্রাণহানি হলেও কেন কমছে না বোগদাদ বাসের বেপরোয়া চলাচল? যেন বাস সার্ভিসটি সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে?
মাত্র ৫ মিনিট অনলাইন ঘেঁটে দেখা যায়, কয়েক বছরে বোগদাদ বাসের দুর্ঘটনায় সড়কে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই শনিবার দুপুরে বোগদাদ বাসের চাপায় বাকিলা এলাকায় এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত মোঃ ইমাম হোসেন (৩২) উপজেলার সিংগাইর এলাকার মৃত ইব্রাহিম মাস্টারের ছেলে। 
২০১৭ সালের ২ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে হাজীগঞ্জ উপজেলায় যাত্রীবাহী বোগদাদ বাসের সঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে এক রিকশা যাত্রী নিহত এবং ৩ জন আহত হন। মৃত ব্যক্তি হাজীগঞ্জ উপজেলার রামরা বড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মুকবুল হোসেন (৩২)। দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন, অটোরিকশা যাত্রী মাকসুদা বেগম (৫৫), রবিন (৩০) ও অটোরিকশা চালক মহরম বেপারী (২০)। চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ত্রিনাথ সাহা জানান, চাঁদপুর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। অটোরিকশা দেবপুর বাজার এলাকা অতিক্রমকালে বিপরীত দিক থেকে বোগদাদ বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীরা গুরুতর আহত হলে তাদেরকে দ্রুত সদর হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় যাত্রী মুকবুল হোসেন মারা যান।
২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর শনিবার বিকালে হাজীগঞ্জ পৌর ধেররা এলাকায় চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের বোগদাদ পরিবহনের একটি বাস চাপায় বৃদ্ধ আলী মিয়া (৭০) নিহত হন। পুলিশ ঘাতক বোগদাদ বাসটি জব্দ করে। নিহত বৃদ্ধ হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং কালচোঁ ইউনিয়নের নওহাটা গ্রামের বাসিন্দা। হাজীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন রনি বলেন, চালক ও হেলফার পলাতক। বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের শাহরাস্তির মৌতা বাড়ি এলাকায় বোগদাদ বাস দুর্ঘটনায় শাহরাস্তিতে গীতা রাণী ও কুমিল্লার বিভা রাণী ভৌমিক নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরগামী বোগদাদ বাসটি শাহরাস্তির মৌতা বাড়ি এলাকা অতিক্রমকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে দুই যাত্রী মারা যান। শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান জানান, দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। গাড়িচালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন। 
২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে হাজীগঞ্জ উপজেলার কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বলাখাল ধেররা নামক স্থানে বোগদাদ বাস মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন : বেলাশর এলাকার সুজন (৩০), মনির (৩৫) ও সোহাগ (৩৫)। নিহতদের সঙ্গে আসা রাহিম জানান, তারা দুপুর ১২টায় কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর ঘুরতে আসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ছয়জন দুটি মোটরসাইকেলযোগে তারা চাঁদপুরে আসছিল। পথিমধ্যে হাজীগঞ্জের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লাগামী একটি বোগদাদ বাস প্রথমে মোটরসাইকেলটিকে এক পাশ থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন রাস্তায় পড়ে যায়। এসময় বাসটি তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এসে দেখি দুইজনের মরদেহ পড়ে আছে। তাদের ওপর দিয়ে বাস চলে যাওয়ায় দুইজনেরই মাথা থেঁতলে গেছে। একজন কিছুক্ষণ জীবিত থাকলেও অল্প সময়ের ভেতরে তার মৃত্যু হয়। হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুনুর রশীদ জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাজিগঞ্জ বাজার থেকে বাস ও চালককে আটক করা হয়েছে। 
২০২২ সালের ৫ মে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে হাজীগঞ্জের বাকিলা সংলগ্ন গোগরা এলাকায় বোগদাদ বাস চাপায় শিশু ইভা (৩) নিহত হন। 
২০২২ সালের ২১ নভেম্বর সর্বশেষ সোমবার সকাল ১০টার দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী নাজমা আক্তার (৫৫) নিহত হন। তিনি উত্তর শাহতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকা ছিলেন। পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি আটক করেছে। এর চালক পলাতক। উত্তর শাহতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সোহেল রুশদী বলেন, নাজমা আক্তার ওই অটোরিকশায় চড়ে চাঁদপুর থেকে বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে সদর উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা চাঁদপুরগামী বোগদাদ পরিবহনের একটি বাস ওই অটোরিকশাকে সামনে থেকে চাপা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে গেলে নাজমা আক্তার গুরুতর আহত হন। তৎক্ষণাৎ মুক্তার হোসেন নামে আরেক অটোরকিশাচালক নাজমা আক্তারকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুশান্ত বিশ্বাস তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বোগদাদ বাসের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ এখন সময়ের দাবি। নতুবা সড়কে প্রাণহাণির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করে সচেতন মহল।