• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ভূমি অফিসের সহযোগিতা

ফরিদগঞ্জে জাল দলিল দিয়ে সরকারি সম্পত্তি খারিজের অভিযোগ ভ্রাম্যমাণ

প্রকাশ:  ১০ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়, অথবা নিজের ঘরের ইঁদুর যদি নিজের ঘরের ক্ষতি করে তাহলে সেখানে রক্ষাকবজের দায়িত্ব পালন করবে কে? বলছিলাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার আষ্টা মৌজার খাস সম্পত্তি ভূমি অফিস কর্তৃক সহযোগিতা করে জাল দলিল দিয়ে মশিউর রহমান পাটোয়ারী নামের একজনকে খতিয়ান সৃজন করে দেয়ার বিষয়ে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার আষ্টা মৌজার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা সরকারের সম্পত্তি রক্ষা না করে তাদের যোগসাজশে সরকারি সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে খারিজ করে দেন। খারিজ নং : ৬৬৭১/২০২১, খারিজ খতিয়ান নং : ৬৫৩।
অভিযোগকারী রেজওয়ানুল হক তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, উক্ত জাল খতিয়ানে মোট ৩৩ শতাংশ সরকারি সম্পত্তির খতিয়ান সৃজন করা হয়। তিনি বলেন, ৬৬৭১ খারিজ নং ও খতিয়ান নং : ৬৫৩তে যে জাল দলিল দেয়া আছে, তা হলো ফরিদগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়, জাল দলিল নং : ২০৪৫, তারিখ : ০৮-০৪-১৯৬৫খ্রিঃ। দলিলের দাতা ক্ষিতিশ চন্দ্র বসু ও জ্যোতিষ চন্দ্র বসু, উভয়ের পিতা মৃত ললিত চন্দ্র বসু, সাং : আষ্টা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর। গ্রহীতা মশিউর রহমান পাটোয়ারী, পিতা মৃত শফিউল্লাহ আটোয়ারী, সাং আষ্টা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর। জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ। কিন্তু জাল দলিলের নম্বরে নকল উঠালে দেখা যায়, সঠিক দলিলটি হলো ফরিদগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় দলিল নং-২০৪৫, তারিখ : ২৭-০৪-১৯৬৫খ্রিঃ। দাতা প্রাণ গোপাল দত্ত, পিতা মৃত মনমোহন দত্ত, সাং গোবিন্দপুর, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর। আর  দলিলের গ্রহীতা হলেন আবদুল লতিফ পাটোয়ারী, আব্দুল বারেক পাটোয়ারী, আব্দুল হাকিম পাটোয়ারী, পিতা মৃত হাসমত উল্লাহ পাটোয়ারী, গোবিন্দপুর , ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর। জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ।
অভিযোগকারী এই প্রতিনিধিকে আরো বলেন, খারিজ খতিয়ানটি করে দিতে মশিউর রহমানের সাথে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়। সেই চুক্তির মূল হোতা ফরিদগঞ্জের গল্লাক বাজার ভূমি অফিসের সহকারী আনোয়ারুল আজিম। জাল দলিল সংগ্রহের হোতা আনোয়ারুল আজিম নিজেই। অভিযোগকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করেন, বর্তমানে আষ্টা গ্রামটি জাল দলিলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আষ্টা মৌজাটির প্রায় অর্ধেক সম্পত্তি সরকারি খাস সম্পত্তি, তাই যে যেভাবে পারছে দখলে নিচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জাল দলিল মূলে খারিজের গ্রহীতা মশিউর রহমান পাটওয়ারীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি তার সাথে দেখা করার জন্যে বারবার অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে গল্লাক বাজার ভূমি অফিসের তহশীলদার আবদুস সাত্তারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, খারিজটির বিষয়ে প্রথমে তিনি অবগত ছিলেন না। এ খারিজটির বিষয়ে তার সহকারী আনোয়ারুল আজিম সব জানেন।
আনোয়ারুল আজিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি শুধু একা নয়, সাত্তার সাহেবও এ খারিজের চুক্তিভিত্তিক টাকার ভাগ নিয়েছেন। এ সময় সংবাদকর্মীদের সামনেই দুজনের মধ্যে অশালীন কথাবার্তার সৃষ্টি হয়। পরে তারা সংবাদকর্মীদের খারিজটি ক্যানসেল করে দেয়ার আশ্বাস দেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার বলেন, অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার বলেন, বিষয়টি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। জাল দলিল দিয়ে খারিজি খতিয়ান করলে এবং তা প্রমাণিত হলে অনেক বড় ধরনের শাস্তি ভোগ করতে হয়। এ বিষয়ে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।

 

সর্বাধিক পঠিত