• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্যাহ চাঁদপুর শহরের নিজ বাসায় খুন

প্রকাশ:  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, শহীদ জাবেদ মুক্ত স্কাউটের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল্যাহকে ছুরিকাঘাতে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। জানা যায়, গতকাল শনিবার বিকেলে রফিকুল্যাহ নিজ বাসা চাঁদপুর শহরের নতুনবাজারস্থ হোটেল সফিনার ৩য় তলায় বিশ্রামে ছিলেন। মাগরিবের নামাজের পর তার বাসায় থাকা মিরাজ নামে একজন দেখেন   কে বা কারা রফিকুল্যাহকে ছুরিকাঘাতে খুন করেছে। মিরাজ তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখেন শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত ও একটি ছুরি তার শরীরে বিদ্যমান। পরে মিরাজের ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা রফিকুল্যাহকে উদ্ধার করে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিরাজ জানান, রফিকুল্যাহ কাকা বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন। আমি নিচে এসে হোটেল অফিসে কিছুক্ষণ সময় কাটাচ্ছিলাম। কাকার কাছে মাঝে মধ্যে এক তরুণ বয়সের ছেলে আসতো। তাকে আমি ভালোভাবে চিনি না। তবে মুখচেনা চিনি। আজও সে কাকার বাসায় গিয়েছে। অফিস ঠিক করে বাসায় ঢুকবো এ সময় মাগরিবের আজান দেয়। আমি সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বাসায় ঢুকে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় কাকা পড়ে আছেন। এ অবস্থায় যে ছেলেটি মাঝে মধ্যে কাকার কাছে আসতো সে দৌড়ে চলে যাচ্ছিল। কাকার রক্তাক্ত শরীর দেখে তানিম ভাইসহ সকলকে ডাক-চিৎকার দিয়ে ডেকে এনে কাকাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ সাগর মজুমদার সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাৎক্ষণিক এ ঘটনার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজনসহ শহরের লোকজন রফিকুল্যাহর বাসায় ও হাসপাতালে ভীড় জমাতে থাকে। নিহত রফিকুল্লাহ বেপারী ওরফে রফিকুল্যাহ কোম্পানীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরির বেশ ক’টি আঘাত দেখা যায়। শুধু তাই নয়, একটি ছুরি তাঁর শরীরে গেঁথে থাকে।
এদিকে পুলিশ নিহত রফিকুল্যাহ সাথে সার্বক্ষণিক থাকা মিরাজকে আটক করেছে। অবশ্য এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আপাতত আমাদের হেফাজতে নিয়েছি।
রফিকুল্যাহর মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, পৌর মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। এ সময় শত শত জনগণ হাসপাতালে ভীড় জমায়।
এদিকে মৃত্যুর ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে আসেন চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ ও এসআই জাকিরের নেতৃত্বে মডেল থানা পুলিশ ফোর্স। তার কিছুক্ষণের মধ্যে হাসপাতালে আসেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়। তিনি নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, এটি একটি হত্যাকা-। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যবসায়ী, পারিবারিক বন্ধুবান্ধবসহ সকল দিক মাথায় রেখে তদন্ত করছি। আমরা দেখবো তিনি কাদের সাথে চলাফেরা করেছেন, কারা তার কাছে আসা-যাওয়া করতো, সকল দিক মাথায় রেখে সামনে এগুচ্ছি। 
তিনি আরো বলেন, মরহুমের বাসায় থাকা মিরাজকে আমরা আপাতত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের হেফাজতে রেখেছি। এটাকে আটক বলা যাবে না।
উল্লেখ্য, রফিকুল্যাহ হচ্ছেন চাঁদপুর শহরের লন্ডনঘাটের বাসিন্দা প্রখ্যাত ব্যবসায়ী মরহুম হেদায়েত উল্লাহ কোম্পানীর চতুর্থ পুত্র। তাঁর বড় ভাই শহীদুল্লাহ জাবেদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ এবং তৃতীয় ভাই সফিউল্লাহ (মরহুম) ছিলেন জেলা স্কাউটের দীর্ঘদিনের সম্পাদক। নিহত রফিকুল্যাহ বিবাহিত হলেও বর্তমানে তার সংসারে স্ত্রী বা অন্য কেউ নেই। 
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশ পুলিশ হেফাজতে পোস্টমর্টেমের জন্য রাখা হয়েছে। অপরদিকে নিহতের জানাজা এবং দাফন-কাফনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
নিহত রফিকুল্যাহর নিকট স্বজনদের কাছ থেকে এবং রফিকুল্যাহর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মিরাজের কাছ থেকে জানা যায়, যে তরুণ এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে প্রায়ই রফিকুল্যাহ নিজেই ফোন করে আনতেন। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিনেও তিনি তাকে ফোন করে এনেছেন। তবে ছেলেটির নাম-ঠিকানা কেউ বলতে না পারলেও ছেলেটির বাসা চাঁদপুর শহরের ওয়্যারলেস এলাকায় বলে জানা গেছে।
এদিকে এ ঘটনার বিচার চেয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, পৌর মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। তাঁরা হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বের করে যেনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়। যাতে করে আর কোনো  অপরাধী অপরাধ করার সাহস না পায়।
খুনিকে আটক করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্যার হত্যার ঘটনায় খুনিকে আটক করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নিহতের সাথে সার্বক্ষণিক থাকা মিরাজের বক্তব্য অনুযায়ী আমরা এ ঘটনার ক্লু উদ্ঘাটনে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে খুনির বিষয় আমরা যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করেছি, সেই তথ্যমতে জেলা পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার একাধিক টিম মাঠে নেমে পড়েছে। আশা করছি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা হত্যার ক্লু উদ্ঘাটনে সক্ষম হবো। তবে এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
জেলা স্কাউটের শোক
চাঁদপুর জেলা স্কাউট সহকারী কমিশনার রফিকুল্যাহ মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জেলা স্কাউটের সম্পাদক অজয় ভৌমিক। তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান এবং অবিলম্বে খুনিদের আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সর্বাধিক পঠিত