• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

‘আমি পত্রিকা ছেড়ে দিতে চাইলেও পত্রিকা আমাকে ছাড়ে না’

প্রকাশ:  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 মতলব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ রফিক সরকার। ১৯৯২ সাল থেকে মতলব উপজেলায় পত্রিকা বিক্রি করছেন। পত্রিকা বিক্রেতা দেলোয়ারের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে গ্রামাঞ্চলে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ওই সময় উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল পত্রিকা বিক্রিতে অর্জিত অর্থ। নব্বই দশকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রায় ৫ শতাধিক পত্রিকা বিক্রি হতো। মোবাইলে মোবাইলে পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার জন্য অর্ধশত পত্রিকা বিক্রি করেন এখন। বর্তমানে ভাড়ার টাকা দিয়ে পত্রিকা এনে বিক্রি করে পোষায় না। পুরানো ব্যবসা ছাড়তে মন চায় না। বর্তমানে পত্রিকা বিক্রির পাশাপাশি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি বলেন, প্রাত্যহিক পত্রিকা নিতে সকালে মতলব বাজারে চলে আসি। পুরানো অভ্যাস ছাড়তে পারি না। কোনো দিন পত্রিকা না নিতে পারলে কী যেন হারিয়ে গেছে মনে হয়। যতদিন বেঁচে থাকবো পত্রিকার সাথে থাকবো।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে দেলোয়ার ও দেওয়ান সুরুজ আমাকে মতলবে এনে পত্রিকা বিক্রির কাজে লাগান। ওই সময় দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক জনতা পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। দেলোয়ারের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে সেই সময় তিনি প্রতিদিন প্রায় ১৪/১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পত্রিকা বিক্রি করতেন। পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। পত্রিকা বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন ওই সময়ে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের দিনেও সকাল ১০টার মধ্যে পত্রিকা নিয়ে আসতেন। তার থেকে নিয়েই পত্রিকা বিক্রি করতেন। 
রফিক বলেন, আমার বাবার কোনো সহায়-সম্পত্তি ছিল না। পত্রিকা বিক্রি করে ১ ছেলে, ২ মেয়ে স্ত্রীসহ ৪ জনের সংসার চালিয়েছি। বড় মেয়ে বিএ পাস করেছে, আর ছোট মেয়ে ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পাস করেছে। একমাত্র ছেলে ২০০৬ সালে মোটরসাইকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে। 
তিনি বলেন, পত্রিকা বিক্রিতে পরিবারিক কোনো বাধা ছিল না। সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে উঠিয়ে দেয়া হতো পত্রিকা বিক্রি করতে। পত্রিকা আমার পরিবারের অংশ হয়ে গেছে। পত্রিকাকেই ভালোবেসে আছি। পত্রিকা বিক্রি ভালভাবে উপভোগ করছি। পত্রিকা বিক্রিতে পরিবারের মধ্য থেকে নয়, বাহির থেকে অনেকের গালমন্দ শুনেছি। তবে অনেকেই পত্রিকা বিক্রিতে বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন। পত্রিকা বিক্রি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। পত্রিকার দাম বৃদ্ধি, ইন্টারনেট, অনলাইন পত্রিকার কারণে অনেকেই পত্রিকা কিনে না, পড়তে চায় না। রাজনৈতিক, দলীয় কোন্দল, মারামারি, গুম, হত্যা ও রহস্য উদ্ঘাটনের সংবাদ থাকলে পত্রিকা বেশি চলে। 
রফিক বলেন, পত্রিকা বিক্রি অব্যাহত রাখতে চাই। জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রি করতে চাই। আমি পত্রিকা ছেড়ে দিতে চাইলেও পত্রিকা আমাকে ছাড়ে না। পত্রিকা বিক্রিতেই হোক জীবনের অবসান। 

 

সর্বাধিক পঠিত