কচুয়া-ঢাকা সড়কে সুরমা সুপার বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে
মালিক সমিতি ও কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে কচুয়া-ঢাকা সড়কে সুরমা সুপার পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। এতে এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা প্রায় ৫ হাজার যাত্রীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে কচুয়া, শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ হতে ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে কচুয়া, শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জগামী সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সুরমা বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে সুরমা বাস মালিক সমিতির সভাপতি সালাম সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন মজুমদার জানান, কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলমের প্ররোচনায় কিছু ব্যক্তি শ্রমিক পরিচয়ে ২৪ আগস্ট বুধবার কচুয়া কাউন্টার দখল করে নেয়। এ সময় তারা কেরানী শফিকুল ইসলামকে মারধর করে কাউন্টার থেকে তাড়িয়ে দিয়ে প্রত্যেক বাস থেকে ২শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করে। কচুয়া বিশ^রোড এলাকায় ৫টি গাড়ির ব্যাটারি ও চাবি নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্যে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুব আলম জানান, এই পরিবহনে হাজীগঞ্জ থেকে আমার একটি বাস চলাচলের সুযোগ দিলেও নতুন আরেকটি বাস শাহরাস্তি বাস টার্মিনাল থেকে চলাচলের অনুমতি চাইলে সুরমা সুপার বাস মালিক সমিতি আমার সাথে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। কিছু দিন পূর্বে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আমার বাস থেকে ব্যাটারি খুলে নিয়ে যায় এবং বাস ভাংচুর করে। তাই আমার লোকজন জনসম্মুখে তাদের গাড়ির ব্যাটারি খুলে নেয়।
তিনি আরো দাবি করেন, বাস শ্রমিক সংগঠনের জিপির নামে দৈনিক ১৭শ’ ২০ টাকা উত্তোলন করে। সেই টাকা বাস শ্রমিক সংগঠনের গুটিকয়েক আত্মসাৎ করে। তাদের প্রতি সংগঠনের অধিকাংশ শ্রমিক ক্ষুব্ধ। এ ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে কেরানি শফিকুল ইসলামের পরিবর্তে জিপির টাকা আদায় করছে।
গতকাল বুধবার সকালে রহিমানগর সুরমা যাত্রী ছাউনিতে গেলে ঢাকা অভিমুখী প্রায় অর্ধশত যাত্রীকে অপেক্ষমান অবস্থায় দেখা যায়। যাত্রী রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মনির হোসেন, জায়েদ হাসান, তৃণা আক্তার, মাহমুদা আক্তার ও জান্নাত আক্তার জানান, এই রূটে অন্য কোনো বাস না থাকায় আমরা সবসময় সুরমা বাস দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকি। হঠাৎ করে আজ বাস সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা ভোগান্তিতে পড়েছি। দ্রুত সমস্যাটির সমাধান করে সুরমা সুপার বাস সার্ভিসটি চালু হবে বলে প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সমস্যার সমাধান করে শীঘ্রই বাস চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্যে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে বলা হয়েছে।
কুকুরের মতো পেটালো খেলতে আসা শিক্ষার্থীদের ॥ ঘটনা তদন্তে কমিটি
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥ কুকুরের মতো দফায় দফায় পেটালো খেলতে আসা শিক্ষার্থীদের। তাদের অপরাধ, কেনো খেলায় বিজয়ী হলো। ফরিদগঞ্জে গত মঙ্গলবার ৪৯তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের ফুটবল খেলায় এই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৯ জনকে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে খেলার মাঠে হামলা ও পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় বুধবার (৭ সেপ্টম্বর) ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটিকে ২ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর আগে মারধরের সঙ্গে উপজেলা সদরের ফরিদগঞ্জ এ.আর. পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিলো বলে শোল্লা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ৪৯তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম খেলা ছিলো। খেলায় ফরিদগঞ্জ এ.আর. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মুখোমুখি হয় শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে খেলা শেষ হয়। পরে টাইব্রেকারে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ৩-১ গোলে বিজয়ী হয়। এতে তারা আনন্দ-উল্লাস করছিলো। ওই সময়ে আনন্দ-উল্লাস বন্ধ করে দ্রুত গাড়িতে উঠে মাঠ ত্যাগ করার জন্যে ক’জন কিশোর ও তরুণ বিজয়ীদের নির্দেশ দেয় ও বাক্বিত-ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে বেশ কিছু সংখ্যক ছেলে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে কয়েক দফায় বেদম মারধর করে। অন্যরা শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্যে তাদের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ফরিদগঞ্জ এ.আর. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দায়ী করেন। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা হকিস্টিক, রড, লাঠিসোটা নিয়ে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় ও বেদম মারধর করে। ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানার জন্যে ফরিদগঞ্জ এ.আর. পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি যতটুকু জেনেছি বহিরাগত কিছু লোক এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে খেলার মাঠে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনা নিয়ে বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, ইউএনও তাসলিমুননেছাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি সভায় বসেন। তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। একই সাথে কমিটিকে আগামী দুইদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের নিদের্শনা দেন। বিয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।