উত্তম অর্জন বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ : অংশগ্রহণে পঞ্চগড় পৌরসভা ও চাঁদপুর পৌরসভা
‘চাঁদপুরে পৌর পরিষদের পরিবর্তন হয়েছে, অগ্রগতি থামেনি, বরং বেড়েছে- এটা ব্যতিক্রম’
চাঁদপুরে পৌরসভার উত্তম অর্জন (বেস্ট প্র্যাকটিস) বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ হয়েছে গতকাল ৩ আগস্ট ২০২২ বুধবার। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশের সর্ব-উত্তরের জেলার পঞ্চগড় পৌরসভা এবং চাঁদপুর পৌরসভা। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের এলিট চাইনিজ রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্প (টএওওচ-ওওও)-এর আয়োজনে অত্র প্রকল্পের জিআইসিডি-এর টিম লিডার মোঃ আজহার আলীর নেতৃত্বে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মফিজউদ্দিন হালদারের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণটি শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ এবং শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। তারপর পরিচয় পর্ব ও ফুলেল শুভেচ্ছার পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেয়র জাকিয়া খাতুন ও টিম লিডার মোঃ আজহার আলী।
প্রশিক্ষণে চাঁদপুর পৌরসভা বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম ভূঁইয়া, নগর পরিকল্পনাবিদ সাজ্জাত ইসলাম ও সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা চন্দ্রনাথ ঘোষ চন্দন এবং পঞ্চগড় পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুর রহমান।
এ দুটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের পর অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে টিম লিডার মোঃ আশরাফ আলী বলেন, চাঁদপুর পৌরসভায় দ্বিতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প (টএওওচ-ওও) ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে শেষ হবার পরও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ ও সিস্টেম ডেভলপ করে অভ্যন্তরীণ আয় ক্রমশ বৃদ্ধির যে প্রবণতা লক্ষ্য করলাম, নিঃসন্দেহে সেটা আশাব্যঞ্জক। এ কথা অকপটে বলতেই হয়, চাঁদপুর পৌরসভায় পৌর পরিষদের পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অগ্রগতি থেমে না থেকে বরং বেড়েছে, যেটা ব্যতিক্রম।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র তাঁর বক্তব্যে চাঁদপুরের ভৌগোলিক অবস্থান, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, ১২৫ বছর বয়সী পৌরসভার উন্নয়ন ও সুনামের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পে পুনরায় অন্তর্ভুক্তির আবশ্যকতা রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি টিম লিডার মোঃ আশরাফ আলীর সহযোগিতা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন। পঞ্চগড়ের মেয়র জাকিয়া খাতুন নূতন মেয়র হিসেবে চাঁদপুর শিখতে এসেছেন এবং এখানকার ভালো দিকগুলো তার পৌরসভায় বাস্তবায়নের প্রয়াস চালাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি চাঁদপুর পৌর পরিষদ ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আতিথেয়তায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, সবাইকে ট্যাক্সের আওতায় আনতে হবে। রাজস্ব বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ট্যাক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যখন দায়িত্ব নিলাম তখন দেখলাম পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক দিনের বেতন বকেয়া রয়েছে। তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পৌর কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ না করে আমরা কেউ কোনো সম্মানী নিবো না। এতে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে পৌর পরিষদের একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
প্রশিক্ষণটি ছিলো একেবারে অংশগ্রহণমূলক ও প্রাণবন্ত। পঞ্চগড়ের পৌর কর্মকর্তা ও প্যানেল মেয়র-কাউন্সিলরগণ বার বার প্রশ্ন করে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় জানা ও বোঝার প্রয়াস চালান।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাবেক সভাপতি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, ইউএনডিপির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পের চাঁদপুর টাউন ম্যানেজার আঃ হান্নান, চাঁদপুর পৌরসভার সহকারী কর নির্ধারক আসাদুজ্জামান, পঞ্চগড় পৌরসভার স্যানিটারী ইন্সপেক্টর হুমায়ন কবির, কাউন্সিলর সাইদুর ইসলাম, মোস্তফা কামাল মিলন, আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ অংশ নেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে চাঁদপুর পৌরসভার টিএলসিসির প্রায় ১৫ বছরের পুরানো মেম্বার কাজী শাহাদাতকে চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী মাঝি ও ফরিদা ইলিয়াছের নেতৃত্বে কাউন্সিলরগণ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
প্রশিক্ষণে অংশ নেন চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হাসান মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা, প্যানেল মেয়র অ্যাডঃ হেলাল হোসাইন, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান দর্জি, সফিকুল ইসলাম, চানমিয়া মাঝি, ইউনুছ সোয়েব, ইকবাল হোসেন বাবু পাটওয়ারী, অ্যাডঃ কবির হোসেন চৌধুরী, খায়রুল ইসলাম নয়ন, প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াস, মহিলা কাউন্সিলর খালেদা আক্তার, আয়শা রহমানসহ অন্যান্য মহিলা কাউন্সিলর, পৌরসভার সকল বিভাগের প্রধান ও নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি)-এর নির্বাচিত সদস্যরা।