কড়ৈতলী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কড়ৈতলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিত্র
ফরিদগঞ্জের ২ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা সেবা স্থবির
পাশাপাশি দুটি হাসপাতাল। মনোমুগ্ধকর ডিজাইনের বিশাল পাকা দুটি ভবন। হাসপাতালে চতুর্পার্শ্বের পরিবেশও দেখার মতো এবং জনবহুল এলাকা। একসময় এখানে দৈনিক শত শত জটিল ও কঠিন রোগীর চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু এখন আর এ দৃশ্য দেখা যায় না। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা এবং জেলার বড় কর্মকর্তাদের দেখভালের অভাবে হাসপাতাল দুটির এ অচলাবস্থা। হাসপাতাল দুটিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী এসে ডাক্তার এবং ঔষধের জন্যে অপেক্ষায় থেকে চলে যায়। আর সরকারের ব্যর্থতার বিভিন্ন ব্যঙ্গ কথা বলে তারা বদনাম ছড়ায়।
এমনই অবস্থা ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের কড়ৈতলী বাজার সংলগ্ন কড়ৈতলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কড়ৈতলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের।
১ আগস্ট সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কড়ৈতলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কড়ৈতলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে গেলে দেখা যায় বিশাল পরিসরে সুদৃশ্য ভবনের হাসপাতাল ২টি। যার সৌন্দর্য যে কোনো মানুষের নজর কাড়ে। এ সময় দেখা যায় বাউন্ডারি দেয়ালের গেট খোলা। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, মূল হাসপাতাল ভবনে তালা দেয়া। হাসপাতালের সামনে দেখা যায় চিকিৎসা ও ঔষধের জন্যে অপেক্ষমান প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মহিলা ও পুরুষ রোগী। কেউ কেউ খানিকটা অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছে। একই সময়ে ১০০ গজ দূরে কড়ৈতলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও গেট এবং ভেতরের রুমগুলোতে তালা মারা। এ সময় গেইটের সামনে অপেক্ষমান বেশ কিছু রোগীকে দেখা গেছে। তারাও খানিকটা অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছে। এ সময় উপস্থিত কমপক্ষে ১৫ রোগীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রচণ্ড এই গরমের মধ্যে ওষুধ নিতে এসেছি। কিন্তু ডাক্তার নাই, হাসপাতালে তালা মারা, তাই চলে যাচ্ছি।
হাসপাতাল দুটির ঠিক পাশের বাড়ির ফরিদ হোসেন বলেন, তিনি প্রতিদিন দেখেন হাসপাতালের সামনে অসংখ্য রোগী, তারা ডাক্তার এবং ওষুধের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। পরে তারা কোনরকম সেবা না পেয়ে চলে যান। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত একজন পিয়ন মাঝে মাঝে এসে রোগীদের কী কী ওষুধ দিয়ে আবার চলে যান।
ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান বলেন, তার বাড়ি হাসপাতালের পাশেই। প্রতিদিনই তিনি দেখেন হাসপাতালের সামনে অসংখ্য রোগী এসে ভিড় করে। হাসপাতালে ডাক্তার এবং কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী না থাকায় কোনরকম চিকিৎসা সেবা না নিয়েই তারা আবার চলে যায়। এ সময় তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায়। যার কারণে সরকারের বদনাম হচ্ছে। আমি সরকার দলীয় একজন নেতা হিসেবে হাসপাতাল দুটিতে উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এলাকার সমাজসেবক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এ হাসপাতাল দুটির পাশেই আমার বাড়ি। হাসপাতাল দুটির মূল চিত্র সবসময় তার চোখে পড়ে। তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জের এই অঞ্চলের লাখো মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্যে এ হাসপাতাল দুটি নির্মিত হয়। অবহেলিত এই অঞ্চলের লাখো গরিব মানুষের পক্ষে চাঁদপুর অথবা ফরিদগঞ্জে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়া সম্ভব নয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই হাসপাতাল দুটিতে যারাই দায়িত্ব পালন করতে আসেন, প্রত্যেকের সাথেই এই অঞ্চলের মানুষের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু উপর মহলের দেখভালের ঘাটতির কারণে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখানে থাকতে চান না। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এক পিয়ন মাঝে মাঝে এসে রোগীদের কিছু ওষুধ দিয়ে চলে যায়। আমি মাঝে মধ্যেই দেখি রোগীরা এখানে এসে সেবা না পেয়ে চলে যায়। আমি সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় হাসপাতাল দুটির প্রতি নজর দেয়ার জন্যে আকুল আবেদন করছি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাঃ আশরাফ আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আপাতত কোনো লোক নেই। তবে একজন লোক দ্বারা মাঝে মাঝে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মোঃ তসলিম মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কথা বলতে চাইলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কড়ৈতলী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বর্তমানে কোনো লোক নেই। এই সাব-সেন্টারটিতে ডাক্তার পদায়ন নেই। মেডিকেল এসিস্টেন্ট ছিলো, সেও বদলি হয়ে গেছে অনেকদিন হয়। তবে একেবারে বন্ধ থাকে কথাটা সঠিক নয়। প্রতিদিনই খোলা হয়। রোস্টার অনুযায়ী ঘুরে-ফিরে কেউ না কেউ দায়িত্ব পালন করেন। তারপরও যেহেতু অভিযোগ আসছে, বিষয়টা আমি দেখবো।
উপজেলা মাতৃমঙ্গল তথা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিষয়ে জেলা পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ জানান, লোকবল সংকটের কারণে সপ্তাহে দুদিন শনিবার ও মঙ্গলবার এই মাতৃমঙ্গলটি খোলা হয় এবং সার্ভিস দেয়া হয়। তিনি জানান, জেলায় ৮১টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের জন্যে ভিজিটর আছেন ৭৮ টাতে। বদলি হয়ে বর্তমানে আছে ৫৯ জন। রোস্টার অনুযায়ী এরাই শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে সেবা দিয়ে থাকেন। শনিবার ও মঙ্গলবার যে এটি খোলা থাকে এ সংক্রান্ত সাইনবোর্ডও সেখানে আছে বলে তিনি জানান।