• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে চাঁদপুরে আলোচনা সভা

প্রফেসর ড. মশিউর রহমানের যে বক্তব্যে শ্রোতারা আন্দোলিত হলেন

প্রকাশ:  ৩০ জুন ২০২২, ১৩:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বক্তব্যের দ্বারা যে মানুষকে উজ্জীবিত করা যায়, মানুষ আন্দোলিত হয়, তা দেখিয়ে গেলেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান। তাঁর দৃপ্তকণ্ঠের বলিষ্ঠ বক্তব্যে মানুষকে আন্দোলিত করেছে। শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনেছে তাঁর বক্তৃতা।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সেদিন চাঁদপুর স্টেডিয়ামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মশিউর রহমান। তাঁর বাগ্মীতায় সকলে মুগ্ধ হন। তাঁর অসাধারণ বক্তব্যে উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা এবং শ্রোতারা শিহরিত হোন। সেদিন দেয়া তাঁর ১১ মিনিটের বক্তৃতার মধ্যে ৭ মিনিটের বক্তৃতা হুবহু তুলে ধরা হলো।
তিনি বলেছেন, আজ প্রমত্তা পদ্মায় বাংলাদেশের আত্মবিশ^াস জেগেছে। আজ প্রমত্তা পদ্মায় বাংলাদেশের দক্ষতা জেগেছে। আজ পদ্মায় আমাদের সৃজনশীলতা এবং চ্যালেঞ্জ জেগেছে। এবং যার হাত ধরে জেগেছে, আপনারা সবাই কিছুক্ষণ আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। তাঁর আবেগতাড়িত ভাষণ শুনেছেন। অনেকে অনেক কিছু দিয়ে পদ্মাকে ব্যাখা করে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, পদ্মায় এই যে সেতু হয়েছে, তা আর কিছু না, তা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার শোককে শক্তিতে পরিণত করার একেকটা বড় বড় স্তম্ভ। তাঁর পথ কি কখনো ফুলেল ভরা ছিল? তিনি যখন বাংলাদেশে আসলেন, তাঁর ফিরে আসা। তিনি যে বেলজিয়ামে ছিলেন সেদিন ১৯৭৫’এর পনেরোই আগস্ট। প্রিয় বোনকে নিয়ে স্বামীর গবেষণা কেন্দ্র, সেখান থেকে বেড়াতে এসেছিলেন বেলজিয়ামে মাত্র একদিনের জন্য ছুটির দিন কাটাবেন। ছুটির দিন কাটানোর বোন এবং স্বামীকে নিয়ে সেই সময় প্রত্যুষে পৃথিবীর সবচাইতে কঠিনতম সংবাদ-সপরিবারে পিতা-মাতা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী সকলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। তারপর তাঁর প্রতিটি দিন তো চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। বাংলাদেশে ফিরতে ছ’টি বছর সময় লেগেছে। এর কখনো কখনো নাম পরিবর্তন, কখনো কখনো তাঁর আশ্রয়ের অভাব, কখনো বোনের বিয়েতে টিকিট কেটে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার অভাব। সেই সবকিছু সামলে নিয়ে আপনাদের প্রিয় দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন সিদ্ধান্ত নিলো ওই কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দেয়ার একমাত্র সাহসী সন্তান বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনি তখন দলের আহ্বানে দেশে ফিরলেন। ফিরে এসে রক্তাক্ত ৩২ নম্বরে পিতা-মাতাকে যেখানে হত্যা করা হয়েছে, সেই জায়গাতে মোনাজাত করতে যাওয়ার প্রবেশের অধিকার তৎকালীন জিয়া সরকার দেয়নি। ৩২ নম্বরে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে সেদিন স্রষ্টার কাছে আকুতি করেছিল, সেটি কি তাঁর চ্যালেঞ্জের দিন ছিলো না? তারপরে তাঁর পথ চলায় ৯০ পর্যন্ত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে প্রতিটি দিন কি চ্যালেঞ্জের যায়নি। ৯০ এর আন্দোলন এক হাতে গড়ে তুললেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ভাত এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র নেতৃত্ব শেখ হাসিনার। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় বসতে পারলেন না। সেটি কি তাঁর চ্যালেঞ্জের দিন ছিল না ? অতঃপর আবার তিনি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় নামলেন। গণতন্ত্র নিশ্চিত করলেন। সামরিক শাসনের অবসান করলেন। তারপরও কি গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। আবার ছোবল হেনেছে এবং কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মুজিব ভক্ত, শেখ হাসিনা ভক্ত মানুষ সেদিন দীপু মনির যে প্রশংসা, তাঁর যে অবদান, তিনি আপনাদের প্রিয় দীপু মনি, আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষামন্ত্রী, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আন্দোলন করেছিলেন প্রিয় নেত্রীর মুক্তির। সেদিন নির্মলেন্দু গুণ দাঁড়িয়ে কবিতা পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যার মুক্তির। সেই সব পথ কি তাঁর খুব সুন্দর ছিল? সবি চ্যালেঞ্জের ছিল। অতঃপর তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করার অতন্দ্র প্রহরীর মতো বাংলাদেশকে সাজানো-গোছানোর সংকল্প নিয়ে তিনি যে পথ হেঁটেছেন, তার প্রতিটি দিন চ্যালেঞ্জের। ঠিক তেমনি পদ্মা সেতু নির্মাণও একি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। তিনি যখন যা কিছু এদেশের জন্যে ইতিবাচক করতে চেয়েছেন, হায়েনার দল তখন সেইসব কাজে প্রতিবার বাধা দিয়েছেন। আর তিনি সেই বাধা লংঘন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। এটিই বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে আমার মনে হয়, পদ্মা সেতুর এই ইট, বালু, সিমেন্ট, কংক্রিট আর কিছু নয়, এই হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শোককে শক্তিতে পরিণত করার কঠিন ভিত। এই ভিত আর কোনদিন কেউ ধ্বংস করতে পারবে না।
আসুন আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে পুনরায় ক্ষমতায় থাকার নিশ্চিত করে, বাংলাদেশের প্রান্তে প্রান্তে ঘুরে ঘুরে সব জায়গায় তাঁর স্বপক্ষে নৌকায় ভোট আদায় করে তার এই ঋণের শোধ আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে দেই। সেটিই হবে আজকের দিনে তাঁর জন্য আমাদের উপহার। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী হতে হবে শুধুমাত্র নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী করা জন্য নয়, এটি করতে হবে বাংলাদেশের এই পদ্মা সেতুর ভিতকে, শোককে শক্তিতে পরিণত করতে, বঙ্গবন্ধুকে সবসময় আমাদের শক্তির আঁধারে পরিণত করতে। আগামী দিনে বহুবার আওয়ামী লীগকে এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে হবে, সেবায় থাকতে হবে। তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে জায়গায় পৌঁছোবে, আমি নিশ্চিত শতবর্ষের বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা ইউরোপের ধনাঢ্য কোনো দেশ হবে না। বাংলাদেশ হবে মানবিক রাষ্ট্রের, সেই দৃষ্টান্ত যাতে অন্য উন্নত দেশ অনুসরণ করবে, এ আমার গভীর বিশ্বাস এবং এ বিশ^াস নিয়ে আমৃত্যু আমরা বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ থাকবো। আপনাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
প্রফেসর ড. মশিউর রহমানের এই কাব্যিক এবং দৃপ্ত কণ্ঠের বক্তব্যে উপস্থিত শ্রোতারা শিহরিত হোন, আন্দোলিত হোন। তখন মুহুর্মূহু করতালি দিয়ে সভাস্থলকে মাতিয়ে তোলা হয়।

 

সর্বাধিক পঠিত