আওয়ামী লীগ কি এবার নারী সাধারণ সম্পাদক পাবে?
যেকোনো সংকটে আওয়ামী লীগের নারী নেতৃত্ব অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি সংকটে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নারী নেতারাই সামনে দাঁড়িয়েছেন, দলের অস্তিত্ব রক্ষা করেছেন এবং দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারা অন্তরীণ তখন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছাই আওয়ামী লীগকে পথ দেখিয়েছেন। তার কারণেই আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব রক্ষা করতে পেরেছিল। পঁচাত্তরের পর জোহরা তাজউদ্দীন, বেগম সাজেদা চৌধুরীর হাতেই আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব রক্ষা করতে পেরেছিল। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে যারা আওয়ামী লীগকে তখন বিনির্মাণ করেছিলেন তাদের মধ্যে জোহরা তাজউদ্দীন ও সাজেদা চৌধুরী অন্যতম। আর এ কারণেই সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে শেখ হাসিনা যখন ১৭ মে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আসেন তখন নারী নেতারাই শেখ হাসিনাকে প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক যখন বাকশাল করে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যান তখন বেগম সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। এরকম বহু উদাহরণ দেয়া যায়। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে শেখ হাসিনার হাত ধরেই আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সুবর্ণ সময় পার করছে। নারী নেতৃত্ব তাই আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটাই ইতিবাচক বলে অনেকে মনে করেন।
বেগম সাজেদা চৌধুরীর পর আওয়ামী লীগে কোনো নারী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান নাই। দীর্ঘদিন পর এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ কি এবার নারী সাধারণ সম্পাদক পাবে? এই প্রশ্নটা উঠার প্রধান উপলক্ষ হলেন ডাঃ দীপু মনি। ডাঃ দীপু মনি একাধারে শিক্ষামন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। রাজনীতিমনস্ক এবং রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা ডাঃ দীপু মনি আওয়ামী লীগের নারী নেতাদের মধ্যে উজ্জ্বল। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন নেতা হিসেবেও পরিচিত। দু’দফা মন্ত্রী থাকার কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও রয়েছে তাঁর পরিচিতি এবং ইতিবাচক ইমেজ।
ডাঃ দীপু মনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। ছাত্রজীবনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হন। আইভি রহমানের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পর তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হন এবং আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। মিষ্টভাষী, সদালাপী এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের অধিকারী ডাঃ দীপু মনি। মন্ত্রণালয় কর্মকা-ের ব্যস্ততার মধ্যেও রাজনৈতিক কর্মকা-ে তাকে সরব দেখা যায়। দলের কর্মসূচিতে যখন অন্যান্য মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি তখন ডাঃ দীপু মনির উপস্থিতি প্রশংসার সৃষ্টি করে। তবে ডাঃ দীপু মনির ব্যাপারে কিছুটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তাঁর নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর বিভক্ত। সেখানে তাঁর একটা প্রতিপক্ষ রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ রয়েছে। প্রতিপক্ষদের পাশ কাটিয়ে ডাঃ দীপু মনি কি হতে পারবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে, আগামী ডিসেম্বরে যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সূত্র : বাংলা ইনসাইডার।