• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর শহরে হরিজন পল্লীতে নির্মিত হচ্ছে আধুনিকমানের বহুতল বিশিষ্ট আবাসন

সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর সম্পন্ন

প্রকাশ:  ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১০:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের আর অবহেলিত মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে না। তাদের জন্যে আধুনিকমানের বহুতল বিশিষ্ট আবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। ইউএনডিপির অর্থায়নে এবং চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে এই আবাসন প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা এলাকায় আবাসন প্রকল্পটি হবে। প্রথমে ৫ তলা বিশিষ্ট দুটি ভবন নির্মাণ করা হবে। যেখানে ৮৮টি পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। এছাড়া এ আবাসনের জন্যে যে মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে সেখানে ২৬৪টি পরিবার স্থায়ীভাবে বাস করতে পারবে। প্রজেক্ট বৃদ্ধি করা হলে পরবর্তী ধাপে আরো যে ভবন নির্মাণ করা হবে সেগুলোসহ এই আবাসন প্রকল্পে মোট ২৬৪টি দরিদ্র জনগোষ্ঠী (হরিজন) পরিবার বসবাস করতে পারবে। এসব তথ্য জানালেন চাঁদপুর পৌরসভার এলআইইউপিসিপি, ইউএনডিপি, টাউন ম্যানেজার মোঃ আব্দুল হান্নান। তিনি আরো জানান, হরিজন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও জীবনমানের উপযোগী করে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ এই আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে চাঁদপুর পৌরসভা ও ইউএনডিপির যৌথ আয়োজনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন নির্মাণ বিষয়ক অবহিতকরণ ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর গতকাল ১৮ এপ্রিল সোমবার চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মোঃ মাসুম পাটওয়ারী। তিনি ঢাকায় অবস্থান করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপির ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার যুগেশ প্রাধানাংসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। আর চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভায় কর্মরত প্রকল্প টিম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, সিনিয়র ক’জন সাংবাদিক, কাউন্সিলরবৃন্দ, পৌরসভার কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিগণ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল ও সঞ্চালনা করেন চাঁদপুর পৌরসভার এলআইইউপিসিপি, ইউএনডিপি, টাউন ম্যানেজার মোঃ আব্দুল হান্নান। বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার টিএলসিসির সদস্য কাজী শাহাদাত, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াছ ও সুশীল সমাজ প্রতিনিধি রাধা গোবিন্দ গোপ।
সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবের ফলে চাঁদপুর শহরে একদিকে যেমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ার কারণে সৃষ্ট সামর্থ্য ও সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ইউএনডিপি চাঁদপুর পৌরসভার টাউন ম্যানেজার মোঃ আঃ হান্নান জানান, পদ্মা-মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত চাঁদপুর পৌরসভায় জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট দারিদ্র দূরীকরণে এবং ২০৩০ সালের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার, এফসিডিও এবং ইউএনডিপির সহায়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে ২০১৮ সালে শুরু হয় এলআইইউপিসি প্রকল্প বাস্তবায়ন। ২০২৩ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় শহরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প কর্তৃক দরিদ্র বসতিতে জলবায়ু সহনশীল ক্ষুদ্র অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিক্ষা ও পুষ্টি সহায়তা এবং দক্ষতামূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ফলে অনলাইনে নিবন্ধিত মোট ২২ হাজার ৫শ’ দরিদ্র পরিবারকে সংগঠিত করে ৯৭টি কমিউনিটি সংগঠন গঠন করা হয়েছে এবং সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ৯০টি কমিউনিটি বেজড্ কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। যা পৌরসভার বার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেটে সংযুক্ত করা হয়েছে। ২৫০০ জন নারী নেতৃত্ব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পেয়ে কমিউনিটিতে উন্নয়নমূলক কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কমিউনিটি সংগঠন প্রায় ১ কোটি টাকা সঞ্চয় জমা করে নিজেরা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রায় ৩শ’ জন সুশীল সমাজের নেতা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং কমিউনিটিতে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। প্রকল্প থেকে ২ বছরব্যাপী ১ হাজার পরিবারের গর্ভবতী নারী ও প্রসূতি মাকে পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কাউন্সেলিং দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৬শ’ জন সদস্যকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করা হয়েছে। আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ও শিক্ষা সহায়তা প্রদান করে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭ হাজার ৫শ’ ১০ মিটার ড্রেন, ড্রেন স্লাব ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, ৫৩টি গভীর নলকুপ স্থাপন এবং ১১২টি স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্পের বাজেটের পাশাপাশি পৌরসভার নিজস্ব তহবিল বরাদ্দ দিয়ে কাজের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে চাঁদপুর পৌরসভা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর পৌরসভা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্প ‘চাঁদপুর শহরের হরিজন কমিউনিটির জলবায়ূ সহিষ্ণু ৮৮টি পরিবারের জন্যে আবাসন নির্মাণ’ কাজ শুরু হলো। উক্ত কাজের অবহিতকরণ সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে প্রকল্পের অন্যান্য ভালো অর্জনগুলোর মতো এই আবাসন নির্মাণ কার্যক্রম সকলকে সাথে নিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন করা হবে।

সর্বাধিক পঠিত