শিক্ষার্থীদের ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’, নতুন অভিযাত্রায় শিক্ষামন্ত্রী
ধন্য সেই পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা দর্শনের মূল বিষয়বস্তুই ছিল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আদর্শ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৈষম্যহীন ও যুগোপযোগী করতেও কাজ করেছেন নিরন্তর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতা যেন অর্থহীন না হয় সেদিকেই বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এগোচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি।
শিক্ষার মানের ওপরই সর্বোচ্চ জোর দিয়েছেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ‘টার্গেট’ নিয়েছেন দেশের প্রথম এই নারী শিক্ষামন্ত্রী। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা যোগের মাধ্যমে তিনি ‘মডেল’ হিসেবে দাঁড় করাতে চান বাংলাদেশকে। উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণার সমন্বয় সাধন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। শুরু থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মানবসম্পদের জ্ঞানীয় মনকে ফোরআইয়ের নেতৃত্বে পৌঁছে দিতে শিক্ষিত দক্ষ কর্মশক্তি তৈরি করার আকাক্সক্ষা নিয়েই পথ চলছেন। ইতোমধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ফোরআই চালুর পোক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি প্রতিযোগিতামূলক, উদ্ভাবনী ও দক্ষ দেশ হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থাকে কার্যকর ও সুসংহত করার স্বপ্ন বুনেছেন। শিক্ষার্থীদের দক্ষ, যোগ্য ও মানবিক বোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে অনুকরণ নয়, উদ্ভাবনকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আনন্দের সঙ্গে শেখাতেই ইতোমধ্যেই দেশের ৬২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু করে দিয়েছেন। বই তুলে দিয়েছেন নতুন পাঠক্রমের।
২০২৩ সাল থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সমাজকে এবং শিক্ষকদের প্রশ্ন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখবে। হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই নিয়ে পাইলটিং। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে দু’দিন ছুটি পাচ্ছে।
২০২৪ সাল থেকে উঠে যাচ্ছে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিভাজন। ওই বছর থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা নামে শিক্ষার্থীদের আলাদা বিভাগ নিতে হবে না। প্রতি শুক্র ও শনিবার দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই।
নতুন পাঠক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নেই জোর দেওয়া হয়েছে। মূল দায়িত্বে থাকছেন শিক্ষাগুরুরাই। এজন্য প্রত্যেক বিষয়ের একজন করে শিক্ষককে নতুন পাঠক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে একজন করে একাডেমিক সুপারভাইজারকেও। জেলা পর্যায়ে কো-ট্রেইনার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা উপজেলা পর্যায়ে তৈরি করবেন মাস্টার ট্রেইনার। সারা দেশে নতুন পাঠক্রম শুরুর আগেই মাস্টার ট্রেইনাররা সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবেন।
প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ের থাকবে বঙ্গবন্ধু, এমন অভিযাত্রা নিয়েই মূলত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের হাওরাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন করার পাশাপাশি ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন’ শীর্ষক এক আলোচনায় যোগ দিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছেন সেই কথাই।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে চাই। আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তৈরি করতে চাই। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ শব্দগুচ্ছ পরিবর্তন করে ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ করারও নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এই সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এই নির্দেশনা দিয়েছে।