• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের চাঁদপুরে এক বছর মাদক

উদ্ধারে রেকর্ড ॥ চাঞ্চল্যকর খুনের রহস্য দ্রুততম সময়ে উন্মোচন যার উল্লেখযোগ্য সাফল্য

প্রকাশ:  ২৩ মার্চ ২০২২, ১১:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম-(বার), ২০২১ সালের ১৮ মার্চ চাঁদপুর জেলায় যোগদান করেন। চলতি বছরের ১৭ মার্চ এ জেলার পুলিশ প্রধান হিসেবে তাঁর কর্মকালের এক বছর পূর্ণ হলো। এই এক বছরে চাঁদপুরের আইন-শৃঙ্খলাসহ নানা দিক দিয়ে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের বেশ সাফল্য রয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে-মাদক উদ্ধার এবং চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার রহস্য দ্রুততম সময়ে উন্মোচনসহ আসামী আটক। দেখা গেছে যে, ক্লুলেস এসব ঘটনার রহস্য দ্রুততম সময়ে উন্মোচনসহ প্রকৃত আসামীদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আর এটি পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের চৌকশ নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। দেখা গেছে যে, ঘটনার ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে মূল আসামী পুলিশের জালে আটকে গেছে। আর সম্প্রতি মাদক উদ্ধার তো জেলা পুলিশের অনেক বড় সাফল্য। একদিনে জেলার একাধিক স্থান থেকে প্রায় ৪০ কেজির মতো গাঁজা উদ্ধারের ঘটনাও রয়েছে। এছাড়া এই একবছর চাঁদপুর জেলা পুলিশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন এবং জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন, অপরাধ দমন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, অবৈধ অস্ত্র, সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও ডাকাত গ্রেফতারসহ সর্বসাধারণের সেবা প্রাপ্তিতে বিশেষ অবদান রাখেন জেলার এই পুলিশ প্রধান। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে চাঁদপুরের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে চাঁদপুরবাসী মনে করছেন। পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের চাঁদপুরে একবছর কর্মকালীন সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের যে বিবরণ জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে তা নি¤েœ তুলে ধরা হলো।
অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার : বর্তমান আইজিপির মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসারে চাঁদপুর জেলাকে শতভাগ মাদকমুক্ত করাকে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০০ কেজি গাঁজা, ২৫০০ বোতল ফেন্সিডিল, বিদেশীসহ বিভিন্ন প্রকারের প্রচুর মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। ৭৯৭ টি মামলায় মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় এবং সেবনের সাথে জড়িত এ পর্যন্ত ৮৮৭ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। এছাড়া ফরিদগঞ্জ থানায় অবৈধ অস্ত্র মামলায় ২ জনকে গ্রেফতার পূর্বক তাদের নিকট হতে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারী পরোয়ানা ও সাজা পরোয়ানা তামিল : চাঁদপুর জেলায় বিগত ১ বছরে ৪,৬৪০টি গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ৪৬২ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পরোয়ানা তামিল করে আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
ক্লুলেস মামলার রহস্য উদ্ঘাটন : চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন থানায় রুজুকৃত ক্লুলেস ৭টি খুন ও ৩টি ডাকাতি মামলা রুজু হয়। এ মামলাগুলো পুলিশ সুপার, চাঁদপুর এর সঠিক দিক নির্দেশনায় এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে অতি দ্রুত সময়ে মামলার রহস্য উম্মোচন হয়।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলকভাবে সমাপ্ত হয়। সাধারণ জনগণকে নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দেয়া পুলিশ সুপার, চাঁদপুরের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পরিচায়ক বলে মনে করে জেলাবাসী। যে কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন হয়। যা ইতিমধ্যে সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজে ব্যাপক সাড়া ফেলে। চাঁদপুরবাসীর কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছেন পুলিশ সুপার, চাঁদপুর।
পুলিশ নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ : পুলিশ সুপার চাঁদপুর জেলায় যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত ২টি ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে শতভাগ স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ২০২১ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। আর টিআরসি নিয়োগ-২০২২ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। স্বচ্ছতার নিদর্শন স্বরূপ নিয়োগপ্রাপ্ত রিক্রুট প্রার্থীদের তালিকায় এতিম, রিক্সাচালক ও অসহায় পরিবারের মেধাবী তরুণ ছেলে মেয়েসহ যোগ্যতার ভিত্তিতে সকল প্রার্থী চাকরি পায়। যা ইতিমধ্যে চাঁদপুর জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। পুলিশ বাহিনীর এমন স্বচ্ছ নিয়োগে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস-আস্থা তৈরি হয়েছে সাধারণ জনগণের মনে। দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করায় চাঁদপুরবাসীর কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসিত হচ্ছেন পুলিশ সুপার, চাঁদপুর।
করোনাকালীন মানবিক সহায়তা : করোনাকালীন গণমানুষের জীবনযাত্রা যখন স্থবির হয়ে পড়েছে, হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে তখন পুলিশ সুপার, চাঁদপুর জেলায় প্রায় ৬,০০০ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় অসংখ্য মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা : কুমিল্লা জেলার ১টি মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো তখন পুলিশ সুপার, চাঁদপুর এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে চাঁদপুর জেলার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।
নাগরিক সেবা প্রত্যাশীদের জন্যে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
(ক) প্রবাসী কল্যাণ হেল্প ডেক্স স্থাপন : পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা চাঁদপুর জেলার প্রবাসীদের জন্যে বিশেষ সেবা চালু করেছে জেলা পুলিশ, চাঁদপুর। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ হেল্প ডেস্ক। প্রবাসীদের যে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য চাঁদপুর জেলায় প্রবাসী কল্যাণ হেল্প ডেস্ক চালু করা হলো। সেবা প্রদানের জন্যে অফিসার পদায়ন করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টা বিরতিহীন সেবা প্রদানের জন্যে প্রবাসী কল্যাণ হেল্প ডেস্কের জন্যে ১টি হটলাইন (০১৩২০-১১৫৯৭০) নাম্বার চালু করেন। চাঁদপুরের যে কোনো প্রবাসী যে কোনো সময় নিজের অথবা নিজের পরিবারের যে কোনো সেবার জন্য এই নাম্বারে কল দিয়ে পুলিশিং সেবা নিতে পারবেন। এই হটলাইন নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার অ্যাপ সমূহ রয়েছে।
(খ) ওয়ানস্টপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা : অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবার মাধ্যমে বিদেশগামী যাত্রীদের দোরগোড়ায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পৌঁছে দিতে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নীচতলায় একটি ডেক্স চালু করেন। বিদেশগামীগণ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে দালালসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হয়রানি ও বিলম্বতার শিকার হচ্ছেন। এ হয়রানি লাঘবের জন্যে বিনামূল্যে অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ফরম পূরণ, তদন্ত কার্যক্রম শেষে ৩ দিনের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ডেলিভারির বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।
(গ) নারী ও শিশু হেল্প ডেক্স গতিশীল করা : নির্যাতিত নারী ও শিশুদেরকে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্যে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আলাদা একটি নারী ও শিশু হেল্প ডেক্স স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত নারী ও শিশু হেল্প ডেক্সে নারী অফিসার পদায়ন করে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
(ঘ) বডিওর্ন ক্যামরা ব্যবহার : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি-২০২২ পুলিশ সুপার, চাঁদপুর ট্রাফিক বিভাগসহ অন্যান্য ইউনিটে কর্মরত ৩৬ পুলিশ সদস্যের বডিওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার চালু করেন। যার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রম নজরদারি করা হবে। পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পুলিশের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ :
(ক) দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান : পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নে চাঁদপুর জেলার প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের বাধ্যতামূলক দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু করা হয়েছে। বার্ষিক মাস্কেট্রি, কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কোর্স চালু করা হয়।
(খ) পুলিশের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিতকরণ : চাঁদপুর জেলা পুলিশের সকল সদস্যের কর্মস্থলে উপস্থিত নিশ্চিত করতে একটি অ্যাপস্ চালু করা হয়। প্রত্যেক পুলিশ সদস্য প্রতিদিন ৩ বেলা উক্ত অ্যাপস্ এর মাধ্যমে হাজিরা প্রদান করেন। উক্ত অ্যাপসের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
(গ) কোর্ট পুলিশ আধুনিকায়ন : জেলা পুলিশের দক্ষতা উন্নয়নে ও পুলিশকে আধুনিকায়ন করতে সদর কোর্টে প্রতিটি ডেক্সে কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে। কোর্টের সকল তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়। সাক্ষীদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত করা হয়।
(ঘ) ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং পুলিশ লাইন্স মেসের খাবার মাানসম্মত ও পরিকাঠামো উন্নয়ন : চাঁদপুর জেলা পুলিশের মনোবল চাঙ্গা ও শারীরিক ফিটনেস ধরে রাখার লক্ষ্যে পুলিশ সুপার, চাঁদপুর পুলিশ লাইন্স, চাঁদপুর মাঠে আন্তঃজেলা পুলিশ সুপার কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২২ আয়োজন করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দাবা টুর্নামেন্ট ও আইজিপি কাপ কাবাডি খেলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পুলিশ সদস্যদের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে পুলিশ লাইন্স, চাঁদপুরের মেস উন্নতমানের খাবার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি নিজেই স্বশরীরে পুলিশ মেসে উপস্থিত হয়ে খাবার মানসম্মত হয়েছে কিনা যাচাই-বাছাই করে দেখেন এবং পুলিশ মেস-এর পরিবেশ সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে পুলিশ মেসের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের বিষয়ে নিয়মিত দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।