• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

২২ বছরে ভারতের এক রাজ্যে ডাইনি সন্দেহে এক হাজার মানুষকে হত্যা

প্রকাশ:  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এখনও ভারতের রাজ্যে রাজ্যে ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে হত্যা বা মারধরের অভিযোগ আসে। এই কুসংস্কারে সবচেয়ে এগিয়ে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। ২০০০ সালে বিহার থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় ঝাড়খণ্ডকে। তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ২৪ জন এই কুসংস্কারের বলি হয়েছেন।

গত ২ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার লুকিয়া গ্রামে এক নারীকে ডাইনি অপবাদে মারধর করেন স্থানীয়রা। মৃত্যু হয় তার। মাকে রক্ষা করতে ছুটে যান অজয় ও সঞ্জয় ওঁরাও নামে দুই ছেলে। রক্ষা পাননি তারাও। তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে চলে নির্মম নির্যাতন। দুই ভাই গুরুতর আহত হন। এখন অজয়ের চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। এ ঘটনায় পুলিশ যে অভিযোগ দায়ের করে সেখানে মূল অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন স্বয়ং পঞ্চায়েত প্রধান। সবমিলিয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।

২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি খুনতি জেলার অদকি থানার তিরলা গ্রামে এক যুগলকে পিটিয়ে হত্যা করেন প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, তারা ‘কালাজাদু’ জানতেন। যদিও পাঁচ দিন পর এ খবর প্রকাশ্যে আসে।

১২ জানুয়ারি। আবারও ডাইনি সন্দেহে মারধরের ঘটনা ঘটে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে। থেতাই থানার কুড়পানি গ্রামে এক নারীকে ডাইনি অপবাদে মারধর করা হয়। অভিযুক্তের ভাষ্য অনুযায়ী, ঝড়িয়ো নামে এক প্রতিবেশীর ‘কুনজর’-এ অকালে মারা যান তার স্ত্রী। এখনও রাঁচির এক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নারী।

২৭ জানুয়ারি। ডাইনি সন্দেহে আবারও একটি হত্যার ঘটনা ঝাড়খণ্ডে। খুনের বীভৎসতা চমকে দেওয়ার মতো। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই নারীকে হত্যার পর গাড়িতে তার দেহ লুকিয়ে রাখেন অভিযুক্তরা। তারপর গাড়িটিকে খুনতি থানা এলাকার একটি নির্জন জঙ্গলে ফেলে রাখেন চার অভিযুক্ত। এই হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পেশায় নার্স। পুলিশি জেরায় সালোমি মিজ নামে ওই নার্স জানান, হঠাৎ তার ছেলের মৃত্যু হয়। নার্সের সন্দেহ, নোরা লকড়া নামে তার ভাড়াটে ডাকিনী বিদ্যা করে তার ছেলেকে মেরে

২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। গুমলা জেলায় পাঁচ জনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে আট জনের বিরুদ্ধে। সেখানেও কারণ সেই এক-ডাইনি অপবাদ। তার আগের দুই মাসে তিন জন এই কুসংস্কারের বলি হন। ঝাড়খণ্ড পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সাত বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে ডাইনি সন্দেহে খুনের ঘটনা ঘটে ৩৫টি।

সিআইডির প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালে ডাইনি সন্দেহে ৪৬ জন নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালে ৩৯, ২০১৭ সালে ৪২, ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ২৭ এবং ২০২০ সালে ২৮ জন এই কুসংস্কারের বলি হয়েছেন। ২০২১ সালের পুরো তালিকা এখনও আসেনি। তবে পুলিশের খাতায় এমন ২৪টি খুনের মামলা হয়েছে। গত সাত বছরে ঝাড়খণ্ডে ২৩০ জনের মৃত্যুর কারণ হলো ডাইনি অপবাদ। গত ২২ বছরে সংখ্যাটা এক হাজারের বেশি।

সর্বাধিক পঠিত