যানজট থেকে শহরবাসীর মুক্তি মিলছে না
সৃষ্ট পদ থেকেও বেশি লোকবল নিয়ে ট্রাফিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি : পুলিশ সুপার * ব্যবস্থাপনা নিয়ে জেলা পুলিশের সাথে সহসা বসবো : পৌর মেয়র
জনগণের কাছে যানজটই এখন চাঁদপুর শহরের প্রধান সমস্যা। কারণ যানজটের কবলে পড়ে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় জনগণকে। তবে শহরের সব সড়কে যানজট সমস্যা খুব প্রকট আকারে নেই। প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়কে যানজট খুব তীব্র আকার ধারণ করে। এর কয়েকটি কারণ হিসেবে দেখা গেছে, শহরের মোড়গুলো প্রশস্ত নয় এবং প্রধান সড়কগুলো একেবারেই সরু। এর সাথে যোগ হয়েছে শহরে সিএনজি অটোরিকশা এবং ইজিবাইকের (অটো) কোনো স্ট্যান্ড না থাকা। পৌরসভা থেকে স্ট্যান্ড ইজারা দেয়া হয় ঠিক, প্রতি গাড়ি থেকে টোলও আদায় করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড নেই। তবে এই সমস্যা অনেক পুরানো। শহরে এ পর্যন্ত কোনো অটোস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড করতে না পারাকে পৌর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন শহরবাসী। আর এই ব্যর্থতা কয়েক যুগের। বর্তমান মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল আলাদা অটোস্ট্যান্ড এবং সিএনজি স্ট্যান্ড করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। যতটুকু জানা গেছে, তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী স্ট্যান্ডগুলো হয়ে গেলে শহরের যত্রতত্র আর পার্কিং করার সমস্যাটি থাকবে না। মেয়র জুয়েল শহরের প্রধান প্রধান মোড়গুলো প্রশস্ত করার কাজও হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে চিত্রলেখা মোড়কে অনেক প্রশস্ত করা হয়েছে। অন্য মোড়গুলোকেও প্রশস্ত করার কাজ চলছে।
এদিকে শহরে নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড না থাকার কারণে যেখানে সেখানে ইজিবাইক এবং সিএনজি অটোরিকশা পার্কিং করা হচ্ছে। আবার দেখা যায় যে, রাস্তার যেখানে মন চায় সেখানেই অটো, সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকে, পার্কিং করে রাখে। এবার সেটা রাস্তার মোড় হোক আর রাস্তার মাঝখানে হোক তাতে অদক্ষ এবং আনাড়ি চালকের কিছুই যায় আসে না। তাকে রাস্তার মাঝখানে বা মোড়ে দাঁড়িয়েই যাত্রী উঠাতে এবং নামাতে হবে। এদিকে শহরে যানবাহন চলাচলের অব্যবস্থাপনাকেও অনেকে দায়ী করলেন দীর্ঘ যানজটের জন্যে। তবে কারণ যাই হোক, শহরবাসী যানজট থেকে মুক্তি চাচ্ছে। আর সড়কে যানবাহন চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্যে পৌর মেয়র, পুলিশ সুপার এবং আরো কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বসে তাঁদের সুচিন্তিত মতামত নিয়ে চূড়ান্তভাবে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়ার প্রতি শহরবাসী মত দেন। যার দ্বারা শহরে দীর্ঘ সময়ের যানজট হয়তো থাকবে না।
চাঁদপুর শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক হচ্ছে আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়ক এবং জেএম সেনগুপ্ত রোড। একটা জেলা শহরের জন্যে এবং প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার শহরের জন্যে মাত্র চারটা সড়ক সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক একটা খুব বেশি নয় মনে হয়। পুরানবাজার অঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলসহ শহরের আশপাশ থেকে শহরে আসা-যাওয়ার সড়ক এই চারটিই। আর এই চারটি সড়কেই রয়েছে কোথাও চার রাস্তার মোড়, কোথাও পাঁচ রাস্তার মোড়। এই মোড়গুলোতে চারদিক থেকে এবং পাঁচ দিক থেকে গাড়ি এসে মোড় অতিক্রম করে থাকে। মোড়গুলো এমনিতেই প্রশস্ত নয়, তার সাথে আরো যোগ হয় গাড়ি চালকরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পুরো মোড়জুড়ে শত শত গাড়ির জটলা পাকিয়ে রাখা। তাছাড়া আরো রয়েছে সরু রাস্তা। সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক, অথচ অত্যন্ত সরু এই রাস্তাগুলো। জনসংখ্যা বাড়ছে, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সড়কের প্রশস্ততা বাড়ে নি, সড়কের সংখ্যাও বাড়ে নি।
এদিকে সড়কের মোড়ে মোড়ে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে সংস্থার উপর, সে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ঠিকভাবে সাজানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম, (বার) এবং এ জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মোঃ জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। পুলিশ সুপার জানান, পুরো জেলার জন্যে ট্রাফিক পুলিশের সৃষ্ট পদ হচ্ছে মাত্র ২৪টি। তারপরও আমি এদিক সেদিক থেকে এনে এই সংখ্যা আরো বাড়িয়ে পুরো জেলায় কোনোরকমভাবে চালাচ্ছি। তাদের দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি করাচ্ছি। তাদেরও তো বিশ্রামের সময় প্রয়োজন। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানের জন্যে আমি হেড কোয়ার্টারে লিখেছি। দেখা যাক কী হয়। তবে তিনি চাঁদপুর শহরে রাস্তা প্রশস্ত করা এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে বাইপাস সড়ক করার কথা বেশ জোর দিয়ে বললেন। একইসাথে তিনি শহরে কোনো স্ট্যান্ড না থাকার বিষয়টিও বেশ গুরুত্বের সাথে বললেন। স্ট্যান্ড হলে মোড়ে মোড়ে যানজটের সমস্যা অনেকাংশ কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হয় টিআই জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সাথে। তিনি জানালেন, ২০২০ সালে তিনি যখন চাঁদপুর জেলায় যোগদান করেন, তখন এখানে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা ছিল ৭৩ জন। এই সংখ্যা কমে এখন রয়েছে ৪৮ জনে। এই ৪৮ জন ট্রাফিক দিয়ে পুরো জেলাকে কভার দিতে হচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতা এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র সড়কে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। গতকাল বেলা ১২টার সময় শহরের পালবাজারের সামনে থেকে ব্রিজে উঠার অ্যাপ্রোচ সড়কের পুরো অংশে দেখা গেলো অটোবাইকের জটলা। এই দৃশ্য নিত্যদিনের। তখন পৌরসভা থেকে নিযুক্ত ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তাকারী দু’জনকে বেশ তৎপর দেখা গেলেও মনে হচ্ছে যেনো তারাও পেরে উঠতে পারছে না দুষ্ট প্রকৃতির অটোচালকদের সাথে। তখন সেখানে কোনো ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যায় নি। এর কিছুক্ষণ পর শপথ চত্বর মোড় এলাকায় এসে দেখা গেলো মাত্র একজন ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করছেন। সাথে পৌরসভার কর্মী একজনও রয়েছেন। শহরের হার্ট পয়েন্টখ্যাত পাঁচ রাস্তার মোড়ে এ জায়গাটিতে একজন ট্রাফিকের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় পাঁচদিক থেকে আসা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
চাঁদপুর শহরে যানজটের পুরো বিষয় নিয়ে কথা হয় পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের সাথে। তিনি এ ব্যাপারে তাঁর বেশ কিছু সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার কথা জানালেন। তিনি জানান, আমরা শহরের প্রধান প্রধান মোড়গুলো প্রশস্ত করার কাজ করছি। ইজিবাইকের জন্যে নতুন ডিজিটাল নাম্বার প্লেট করেছি, যার দ্বারা অবৈধ গাড়ি চিহ্নিত করা যায়। পূর্বের ২৮শ’ লাইসেন্স থেকে প্রায় দেড় শ’ লাইসেন্স কমিয়েছি যারা লাইসেন্স নবায়ন করে নাই। ডিজিটাল প্লেট সরবরাহের পর অবৈধ গাড়ি রাস্তায় না নামানোর জন্যে পৌরসভা থেকে মাইকিং করিয়েছি। তাতে অনেক অবৈধ গাড়ি নিজ থেকেই শহর ছেড়ে চলে গেছে। তারপরও আমরা পৌরসভা থেকে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু গাড়ি আটক করেছি। আবার হয়তো রাস্তায় অবৈধ গাড়ি নামতে পারে। আমরা প্রশাসনের সহায়তায় পুনরায় অভিযান চালাবো। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তার জন্যে আমি পৌরসভা থেকে অ্যাপ্রোন পরিহিত কর্মী দিয়েছি। মেয়রের দৃষ্টিতে এখন শহরে যানজটের কারণ হচ্ছে অব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন, আমি সহসা পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে বসবো শহরের যানজট নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করতে। এছাড়া শহরে সিএনজি স্ট্যান্ড এবং অটোস্ট্যান্ড করার বিষয়ে তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা জানালেন।