সাকিব-কাণ্ডে উত্তপ্ত সারাদেশ, সামাজিক মাধ্যমে নানা মন্তব্য
আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ এতদিনে ঠাঁই নিয়েছে অনেকটা গল্পে। সাকিব আল হাসানের কল্যাণে আজ খানিকটা যেন ফিরে এলো এ দ্বৈরথের আলোচনা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় স্টাম্প ভেঙেছেন সাকিব। পরের ওভারে স্টাম্প তুলে মেরেছেন আছাড়। এরপর তেড়ে গেছেন আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের দিকে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। পরে ক্ষমা চাইলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, শাস্তি হবে সাকিবের।
স্টাম্প ভাঙলেন সাকিব
ঘটনার সূত্রপাত আবাহনীর রান তাড়ার পঞ্চম ওভারে। আবহনীর মুশফিকুর রহিমকে করা সাকিবের বলটা লেগেছিল তার পায়ে। দুই হাত তুলে আবেদন করেন সাকিব। আম্পায়ার ইমরান পারভেজ নাকচ করেন ওই আবেদন। কয়েক সেকেন্ড না যেতেই সাকিব যেন হারিয়ে ফেললেন নিজেকে। স্টাম্পে লাথি মেরে ভেঙে ফেললেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বললেন আম্পায়ার ইমরান পারভেজের সঙ্গে। এরপর সতীর্থরা এসে সাকিবকে টেনে নেন। ওই ঘটনা থামল সেখানেই। সাকিব চলে গেলেন ফিল্ডিং করতে।
স্টাম্প তুলে সাকিবের আছাড়
স্টাম্পে লাথি মারার পরের ওভারে আবার মেজাজ হারান সাকিব। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের খেলা চলছিল। পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি আসায় খেলা বন্ধ করলেন আম্পায়ার। মাঠকর্মীদের দিকে ইশারায় কাভার আনতে বলেন আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। তখন হঠাৎই রেগে যান সাকিব। মুখোমুখি হন আম্পায়ারের, ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে আম্পায়ারকে শাসান তিনি। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাকিবের রাগের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের তিনটি স্টাম্পই উপড়ে ফেলেন তিনি। দেন আছাড়ও। এরপর তিনি ধীরে ধীরে যেতে থাকেন ড্রেসিং রুমের দিকে।
সুজনের দিকে সাকিবের তেড়ে যাওয়া
মাঠে দুই দফা উত্তেজনার রেশ সাকিব টেনে নিয়ে আসেন মাঠের বাইরেও। ড্রেসিং রুমে ফিরে যাওয়ার সময় আবাহনীর ডাগ আউট লক্ষ্য করে কিছু একটা বলতে দেখা যায় সাকিবকে। এর জবাবে এগিয়ে আসেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন।এরপর সাকিবকে দেখা যায় সুজনের দিকে তেড়ে যেতে। সুজনকেও দেখা গেছে ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে সাকিবের দিকে এগিয়ে আসতে। সতীর্থ ও স্টাফরা মিলে শান্ত করেন সাকিব ও সুজনকে।
সাকিবের কাজকে ‘যৌক্তিক’ বলছে মোহামেডান
সাকিবের এমন উদ্ধত আচরণকে যৌক্তিক মনে করছে মোহামেডান। দলটির ম্যানেজার শিপন বলেন ‘সাকিবের উদ্ধত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। আপনারা মাঠে ছিলেন, আপনারা দেখেছেন। আম্পায়াররা খেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই গ্রাউন্ডসম্যানরাসহ কিউরেটরও ছাতা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে মাঠে নেমে গেছে।’
সুজনের সঙ্গে সাকিবের কথা কাটাকাটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় সাকিব এটাই (খেলা বন্ধ করা) বলতে গিয়েছিলেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনকে। তখন দুজনের কথা কাটাকাটি হয়।’
সাকিবের এই কাণ্ডে আপনাদের দলগত সমর্থন আছে কি না জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে শিপন বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করব না। অফিশিয়ালি জানিয়ে দেওয়া হবে।’
সুজনের কাছে ক্ষমা ও আবাহনীর বক্তব্য
সুজনের সঙ্গে ঘটনায় সাকিবকে দায়ী করেছে আবাহনী। দলের ম্যানেজার মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সাকিব যাওয়ার সময় আবাহনীর নামে কটু কথা বলতে বলতে যায়। সেটি নিয়েই তাকে শান্ত করতে গিয়েছিলেন আমাদের কোচ। তবে সে ভুল বুঝে তেড়ে আসে। সেটি মোটেও ভালো দেখায়নি।’
পরে সুজনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সাকিব, এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর সাকিব এসেছিলেন আমাদের ড্রেসিংরুমে। তিনি আমাদের কাছে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সেখানে খালেদ মাহমুদ সুজনও ছিলেন। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। পরে দুজনে বুক মিলিয়েছেন।’
ভক্তদের কাছে সাকিবের ক্ষমা প্রার্থনা
পুরো ঘটনার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সাকিব। লিখেছেন, ‘প্রিয় ভক্ত ও অনুসারীরা, আমি ক্ষমা চাচ্ছি, আমার মেজাজ হারানোর জন্য এবং ম্যাচটা সবার জন্য শেষ করে দেওয়ায়, বিশেষত যারা ঘরে বসে খেলাটা দেখছিলেন। আমার মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের এভাবে আচরণ করা ঠিক হয়নি। কিন্তু কিছু সময়ে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি চলে আসে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়ে যায়।’
এটিকে ‘মানবিক ভুল’ (হিউম্যান এরর) উল্লেখ করে সাকিব লিখেছেন, ‘আমি আমার মানবিক ভুলের জন্য দল, ম্যানেজম্যান্ট, টুর্নামেন্ট অফিশিয়াল ও আয়োজকদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আশা করি, আমি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করব না। আপনাদের ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ।’
সাকিবের শাস্তির বিষয়ে ম্যাচ রেফারির রিপোর্টের অপেক্ষা
সাকিবের এমন আচরণের ঘটনায় শাস্তির ব্যাপারে সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ‘খেলার মাঠে অনেক কিছুই হয়। আজকে আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচ ছিল। সেখানে আমরা অনেক উত্তেজনা দেখলাম। সাকিব আল হাসানকে ঘিরে কিছু ঘটনা আমরা দেখেছি। এটা ফেসবুক লাইভ, ইউটিউব থেকেও সবাই দেখতে পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টা দুঃখজনক। ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেখানে এমন উত্তেজনাপূর্ণ সময় এসে যেতে পারে। তবে আমরা আশা করব খেলোয়াড়রা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এই খেলাটি আইসিসি স্বীকৃত ম্যাচ। এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ম্যাচ রেফারি, আম্পায়াররা আছেন। তারা একটা রিপোর্ট দেবেন। সবকিছুরই নিয়ম আছে। কোন নিয়ম ভাঙলে কী শাস্তি, সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র : ঢাকা পোস্ট