• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর নদী বন্দর নাকি সিএনজি চালকদের ‘বাবার সম্পত্তি’

প্রকাশ:  ১৩ মার্চ ২০২১, ২২:০৩ | আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২১, ২২:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে। একদিকে পন্টুন দখল করে ব্যবসা পরিচালনা অপরদিকে যাত্রীদের নিয়ে সিএনজি চালকদের টানাটানি। দীর্ঘদিন এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, চাঁদপুর মডেল থানাসহ সকল সংশ্লিষ্ট দফতর ব্যবস্থা নিলেও ভোগান্তি নির্মূল সম্ভব হচ্ছে না।

প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় দিন দিন হকার, কুলি ও সিএনজি চালকদের আধিপত্য ও উৎপাত বেড়েই চলছে। বাধ্য হয়ে সিএনজি চালকদের দৌরাত্ম্য থামাতে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের কর্মকর্তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

এর আগে গত বছর ৯ নভেম্বর তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকারের সভাপতিত্বে বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক কায়সারুল ইসলাম ও চাঁদপুর সদর মডেল থানার আয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রত্যেক সিএনজি চালককে নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল এবং তা বাস্তবায়নের জন্য এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ৩ মাস অতিবাহিত হলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

এ বিষয়ে সরেজমিনে ভোগান্তির ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে এক পর্যায়ে সিএনজি চালকরা এ প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হন। এ সময় তারা দাবি করেন, ‘এ নদী বন্দরটি তাদের বাবার সম্পত্তি। এখানে তাদের যা খুশি তাই করবেন। কেউ এতে বাধা প্রদান করতে পারবে না। এবং বন্দরের অভ্যন্তরে যদি কোনো ছবি অথবা ভিডিও নিতে হয় তাহলে তাদের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে।’

এছাড়াও সরেজমিনে শুক্রবার রাত আটটায় চাঁদপুর নদী বন্দর ঘুরে দেখা যায়, এমভি ঈগল-৩ যাত্রীবাহী লঞ্চটি ঢাকা থেকে চাঁদপুর এসে পৌঁছায়। লঞ্চটি ঘাটে নোঙর করার আগেই তার চারপাশ ঘিরে ফেলে কুলি ও সিএনজি চালকরা। এতে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয় ঘাটে। যাত্রীদের স্বাভাবিক ও নিরাপদভাবে লঞ্চ থেকে নিচে নামার ন্যূনতম জায়গাটুকুও তারা রাখেননি।

এছাড়াও তারা যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করতে থাকেন। এ সময় অনেককে তার পরিবারের নারী সদস্যদের আগলে ধরে নিরাপদে বের করে আনার চেষ্টা করতেও দেখা যায়। অনেকে বাধ্য হয়ে সিএনজি চালকদের ধমকও দেন। লঞ্চের মুখ থেকে শুরু করে গেট-২ পর্যন্ত চালকদের দাঁড়িয়ে এলোপাতাড়ি চিৎকার-চেঁচামেচি করতে দেখা যায়।

এ সময় চলতি পথে একজন যাত্রী বলেন, ভাই ভিডিওগুলো একটু ভালো করে করেন, এদের উৎপাত খুব বেশি। জরুরি এর একটা বিহিত করা দরকার। না হলে বন্দরে চলাচল অনিরাপদ হয়ে যাবে।

মো. জাফর খান নামে একজন যাত্রী বলেন, ভাই খালি ভিডিও কইরেন না, এগুলো পাবলিশও কইরেন। তাহলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসবে এবং তাতে অন্তত এদের শিক্ষা হবে। এছাড়াও নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সামনে কিভাবে তারা যাত্রীদের হয়রানি করতে পারে অনেক যাত্রী তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

যাত্রীদের এমন ভোগান্তি নির্মূলে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গত ১১ মার্চ বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক কায়সারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি আবেদন চাঁদপুর সদর মডেল থানা ও নৌ পুলিশ ফাঁড়ি বরাবর পাঠানো হয়েছে।

আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, যাত্রী পরিবহনের বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর সমূহের মধ্যে চাঁদপুর নদীবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বন্দর ব্যবহার করে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়াও ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। যাত্রীদের নিরাপদ নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ মিডিয়া সিএনজি চালক সমিতির সমন্বয়ে মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এই মতবিনিময় সভায় সিএনজিচালকদের ইউনিফর্ম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কিন্তু এতকিছুর পরও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি। যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নদীবন্দর ব্যবহারকারী নারীদের সম্মান রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর নদী বন্দরের উপ-পরিচালক একেএম কায়সারুল ইসলাম জানান, যদিও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আধুনিক নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ কল্পে ডিজাইন/নকশা চূড়ান্তকরণসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের দাফতরিক কর্মসমূহ চলমান রয়েছে এক্ষেত্রে বর্তমানে যেটুকু সুযোগ সুবিধা আছে তার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে নদী বন্দরের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। যাত্রী ভোগান্তি কমাতে মডেল থানা ও নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে আবেদনও করেছি।

সর্বাধিক পঠিত