আজ জাতীয় শোক দিবস
আজ ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫ তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। এদিনটি বাঙালি জাতির জন্যে অত্যন্ত শোকাবহ একটি দিন। এদিন রচিত হয়েছিলো ইতিহাসের ঘৃণ্য কলঙ্কিত এক অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অমানিশায় হায়েনারা বেরিয়ে গেলো, সপরিবারে সংহার করলো ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেদিন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে চেয়েছিলো একটি আদর্শকে হত্যা করতে। কিন্তু না, তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বাঙালি জাতির হৃদয়ে যে আদর্শ গেঁথে আছে, সে আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি ঘাতকরা। তাই বঙ্গবন্ধু মরেনি। বাঙালির হৃদয়ে-মননে তিনি অবিনশ্বর, অবিনাশী।
'যদি রাত পোহালেই শোনা যেতো/বঙ্গবন্ধু মরে নাই/যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই/তবে বিশ্ব পেতো এক মহান নেতা/আমরা ফিরে পেতাম জাতির পিতা'। সত্যি, বাঙালির হৃদয়ে, মননে এমন ইচ্ছা জাগে অবিরত। ১৯৭৫ সালের পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। আর তখনি এ দিবসটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এভাবেই চলে ২০০১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটিসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের বিষয়টি বাতিল করে দেয়।
এরপর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে মহামান্য হাইকোটের্র এক ঐতিহাসিক রায়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটিসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে ঢাকাস্থ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হঠাৎ প্রবেশ করে সে সময়কার কিছু সংখ্যক উচ্চাভিলাষী বিপথগামী সেনা অফিসার। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও বিদেশীদের চক্রান্তে এবং নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের সেদিন ওই হায়েনারা নৃশংসভাবে গুলি করে বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। বিশ্ব ইতিহাসের কলঙ্কিত এ হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য নায়ক ছিলো সে সময়কার আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী বাংলার মীরজাফর খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, এ হত্যাকা-ের যেনো বিচার না হতে পারে সে জন্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোনো সভ্য জাতির ইতিহাসে বিরল।
বঙ্গবন্ধু হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন এবং হত্যা পরবর্তীতে মীর জাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ খন্দকার মোশতাককে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিন্দা ও ঘৃণা জানিয়ে এসেছে বাঙালি জাতি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে যায়। কারণ, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন এ দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে। আর সেই মহান নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ জাতির ললাটে কলঙ্কের তিলক পড়ে যায়। সেই তিলক দীর্ঘ ষড়যন্ত্র ও ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে মুছে ফেলা হয়।
জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলায়ও সরকারিভাবে এবং দলীয়ভাবে নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি।