• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

পুরাণবাজারে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১

প্রাণ গেলো করোনা-চিকিৎসকদের সেবা দেয়া নিরীহ হোটেল কর্মচারীর

প্রকাশ:  ০১ জুলাই ২০২০, ১১:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে মাদক বিক্রির ভাগাভাগি ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে শামীম গাজী (২৪) নামের এক নিরীহ পথচারী নিহত হয়েছেন। গতকাল ৩০ জুন মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এর আগে ২৯ জুন রাতে ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজার সুইপার কলোনী মোড়ে (মেয়র সড়ক) স্থানীয় দু গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে শামীমের উপর হামলা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়, সেখান থেকে রেফার করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকালে তার মৃত্যু হয়।


নিহত শামীম গাজী পুরাণবাজার মধ্য শ্রীরামদী এলাকার তাজু সর্দারের সেজো ছেলে। শামীম চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সম্মুখে রোটারী ভবনে অবস্থিত হোটেল গ্র্যান্ড হিলশার রিসিপশনে চাকুরি করতেন এবং করোনার চিকিৎসকদের হোটেল-সেবা দিতেন। দাম্পত্যজীবনে তিনি লামিম নামের ৯ মাসের এক কন্যাসন্তানের জনক।

 


পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল পুরাণবাজারের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির খানের সাথে মাদকের বিষয় নিয়ে মধ্য শ্রীরামদীর চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা হেলালের ঝগড়া হয়। এ ঘটনার রেশ ধরে হেলালের পক্ষে ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত পাটওয়ারীর ছোটভাই রাসেল ও মাদক কারবারী হেলাল এবং জহির গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে জহির গ্রুপের সবুজ খান (২৪) নামের এক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে রোববার (২৮ জুন) রাসেল গ্রুপের কালু ও আবুলকে পেয়ে মারধর করে জহির গ্রুপ। মূলত ওই ঘটনার রেশ ধরেই সোমবার সন্ধ্যায় এ দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে তুমুল মারামারি হয়। যার বলি হয় নিরীহ হোটেল কর্মচারী শামীম।

 


নিহত শামীমের পিতা তাজুল সর্দার জানান, আমার ছেলে হোটেল গ্র্যান্ড হিলশায় রিসিপশনে চাকুরি করতো। প্রতিদিন সকাল ৮টায় কাজে যেতো, আবার রাত সাড়ে ৮টায় বাড়ি ফিরে আসতো। দুপুরের খাবার নিয়ে যেতো। ঘটনার সময় টিফিন ক্যারিয়ার হাতে সে হোটেল থেকে ফিরছিলো।

 


কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো জানান, আমার ছেলে দুই বছর হলো বিয়ে করেছে। তার লামিম নামে ৯ মাসের একটা শিশুসন্তান রয়েছে। ওরা দু পক্ষ মারামারি করে আমার নিরীহ ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

 


প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত ম্যারকাটিজ রোড এবং মধ্য শ্রীরামদীর কবরস্থান এলাকায় দু গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

 


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদকের বিষয় নিয়ে ম্যারকাটিজ রোডের জহিরের সাথে মধ্য শ্রীরামদীর হেলালের বাক্বিত-ার বিরোধ থেকে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় জহির ও রাসেল এ দুই গ্রুপ ধারালো অস্ত্র, টর্চলাইট নিয়ে একে-অপরকে ধাওয়া করে এবং বৃষ্টির মত কাচের বোতল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন ওসমানীয়া মাদ্রাসা ও সুইপার কলোনীর নিকটস্থ মেয়র রোড এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই ঘটনায় আশপাশের বেশকিছু দোকানপাট ও বাড়িঘর এবং অটোবাইক হামলার শিকার হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানিকের মুদি দোকান।

 


খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি নাসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এবং ইন্সপেক্টর মোঃ মাসুদের নেতৃত্বে পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

 


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং শান্ত রয়েছে। অপরাধীদের ধরার জন্যে ডিবি, থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ রেইড দিচ্ছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 


তিনি বলেন, যেহেতু মার্ডার হয়েছে, এ ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে মামলা করা হয়নি।

 


এদিকে পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ জানান, যে কারণে মারামারির সূত্রপাত, তার একটি মোবাইল কলের অডিও উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। সন্দেহভাজন ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।