• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর শহরে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো সীমিত আকারে চলছে ॥ অনেক ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ

প্রকাশ:  ০৩ এপ্রিল ২০২০, ২২:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা পাচ্ছে না চিকিৎসাসেবা। কিছু ডাক্তারের অজুহাত ও গাফিলতিতে রোগীরা পাচ্ছে না এই চিকিৎসা সেবা। আর ডাক্তারদের বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিতিতে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো স্বল্প পরিসরে চালু রাখলেও  চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।  এই ধরনের অভিযোগে গত ১ এপ্রিল  চাঁদপুর শহরে ঘুরে  ডাক্তারদের চেম্বার ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
চাঁদপুরে শহরের শিশু ডাক্তারদের মধ্যে ডাঃ জমির উদ্দিন আহমেদের প্রাইভেট চেম্বার রেলওয়ে হকার্স মার্কেটে, যেটি গত ২০ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। ডাক্তার সাহেব চাঁদপুরের বাইরে রয়েছেন এমন অজুহাতে চেম্বারটি বন্ধ। তাঁর ব্যক্তিগত নাম্বারটিও বন্ধ। তাঁর চেম্বারের সহকারী জানান, তিনি ঢাকায় রয়েছেন। তাই চেম্বারটি বন্ধ। কবে নাগাদ খুলবে তা তিনি বলতে পারবেন না। ডাঃ সুজিত কুমার, তিনিও শিশু বিশেষজ্ঞ। তাঁর প্রাইভেট চেম্বার শহরের মিশনপাড়ায়। তিনিও একই তারিখ থেকে তাঁর প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার চেম্বারের স্টাফরা গত ২০ তারিখ থেকেই হঠাৎ করে আসছেন না। তাই একা একা রোগী দেখা সম্ভব নয় বলে চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছি। আরেক শিশু ডাক্তার ডাঃ মোঃ আজিজ মিয়াও একই সময়ে বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁর প্রাইভেট চেম্বার। ডাঃ মিনু রাণী সরকার গাইনী বিশেষজ্ঞ। তিনিও একই সময় তাঁর প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।
ডাঃ  মিলন সরকার অর্থোপেডিক্স বা হাড় ভাঙ্গা জোড়ার ডাক্তার। তিনিও চেম্বার বন্ধ করে তাঁর ও সহকারীর মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনিভাবে এ শহরের শতকরা হিসেবে ৯০ ভাগ ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ।
শুধু তাই নয়, এ  সকল ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারের সামনে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তারা তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এমনকি তাদের বাসার গেটগুলোতেও তালা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের ব্যক্তিগত এবং সহকারীদের মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ রয়েছে। তারা রোগীদের রোগগুলোর  বিষয়ে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এ অবস্থায় রোগীরা অনেকটাই অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন।
অপরদিকে চাঁদপুর শহরের আনাচে-কানাচে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো সামান্য আকারে চালু রয়েছে। শহরের এই হাসপাতালগুলোতে শুধুমাত্র কোনো কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা জনিত রোগী এবং কোনো সিজারিয়ান বা প্রসূতি রোগী ছাড়া অন্য কোনো রোগী তারা কোনোক্রমেই ভর্তি করাচ্ছেন না। আর জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে কোনো রোগী ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে চাইলে বা প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে চাইলে কেউই সেই রোগীকে এলাউ করছেন না।
স্বল্প পরিসরে প্রাইভেট হাসপাতাল চালু কেনো রাখছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা শুধুমাত্র গাইনি ডাক্তার এবং সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি আহত হলে তার চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনে ডাক্তারকে হাসপাতালে পাচ্ছি না। তাদেরকে যতই যোগাযোগ করে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, তারা আসছেন না। সেটাই আমাদের অসহায়ত্ব প্রকাশের কারণ।
করোনা ভাইরাস নামক ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে জনগণকে রক্ষার জন্যে ঘোষিত সাধারণ ছুটির পূর্বেই কিছু ডাক্তারের অমানবিক কর্মকা- শুরু হয়েছে। অথচ এ জনগণকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার নামে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে কিছু ডাক্তার তাদের পকেট ভর্তি করেছে। এই অর্থের লোভে তারা সাধারণত নামে-বেনামে শহরের আনাচে-কানাচে, গ্রাম গঞ্জে প্রাইভেট হাসপাতাল ও প্যাথলজি গড়ে তুলেছেন। এমনকি এরা জনগণের টাকায় একের অধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। অথচ এই জনগণের দুঃসময়ে  তাদের অমানবিক কর্মকা-ে মানুষ হতাশায় ভুগছেন। শুধু তাই নয়, ডাক্তাররা অর্থ বিত্তের মালিক হলেও এ দুঃসময়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পাশে নেই। এমনকি তাদের প্রাইভেট চেম্বার বা তাদের নিজস্ব প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে যারা কর্মচারী হিসেবে চাকুরি করেন তাদেরকে তারা ন্যূনতম সহযোগিতার হাত বাড়াননি বলে জানা গেছে।