• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

রামপুরে সুলতানী আমলের মসজিদ পরিদর্শনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

প্রকাশ:  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামে জঙ্গল পরিষ্কার করে উদ্ধার হওয়া সুলতানী আমলের প্রাচীন মসজিদটি পরিদর্শনে এসে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেন প্রত্নতাত্তি্বক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ হান্নান মিয়া। তিনি এ মসজিদটি গতকাল পরিদর্শন করেন। এদিকে মসজিদটি সন্ধান পাওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রতিনিধি দল আসে। তারা এসে যা কিছু উদ্ধার করেছে তার সঠিক দৃশ্যমান রেখে সংস্কারের জন্যে একটি বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার সে বরাদ্দ এবং সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ না করায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই কাজের যেভাবে ড্রয়িং ডকুমেন্ট করা আছে সেভাবেই কাজ করতে হবে। এ কাজটি বাজারের সাধারণ ইট দিয়ে নয়, এই মসজিদটি যে ইট দিয়ে বানানো হয়েছে ঠিক সেই ইট ব্যবহার করতে হবে। বাজারের মডার্ন ইট ব্যবহার করে সংস্কার কাজে লাগানো হলে ইতিহাস বিকৃতি হবে। এটা যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে এ সংস্কার কাজ করতে হবে।

গতকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ১১টায় এ মসজিদ পরিদর্শন শেষে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদে কিছু সময় অবস্থান নেন মহাপরিচালক। এ সময় তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আল মামুন পাটোয়ারী।

উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোঃ আতাউর রহমান, সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ মোশারেফ হোসেন, উপ-পরিচালক মোঃ আমিরুজ্জামান, আঞ্চলিক পরিচালক রাখি রায়, চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জামাল হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি খন্দকার মাহফুজ আলম, ফিল্ড অফিসার মোঃ খাইরুল বাশার, মোঃ শাহিন আলম, প্রত্নতত্ত্ব প্রকৌশলী মোঃ ফিরোজ আহমেদ, রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মির্জা মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহমুদ লিটু এবং জঙ্গল পরিষ্কারে সহায়তাকরী বৃদ্ধ আজিজ তালুকদার।

২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল সুলতানী আমলের এ মসজিদটি পরিদর্শনে আসে। ওই সময় তারা মসজিদটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও আকৃতি মেপে নির্ণয় করেন এবং এর দেয়াল, প্রাচীর ও গম্বুজ-মিম্বর পরীক্ষা করে দেখেন। আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায় বলেন, এ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনকে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্যে প্রশাসনিক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যে যে ব্যবস্থা নেয়ার কথা আমরা তা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, এ মসজিদটি সুলতানী আমলের। এটা আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে নিশ্চিত হতে পেরেছি। এলাকার কৃতী সন্তান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির পরামর্শ নিয়ে এটিকে প্রত্নতত্বের একটি নিদর্শন হিসেবে রাষ্ট্রপতির আদেশে গেজেটভুক্ত করা হয়। আমাদের অধিদপ্তর থেকে মসজিদটিকে নিয়ে আরো কর্মকা- চালানো হবে। আমরা চাই এই মসজিদটি প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে চাঁদপুরের জন্যে গর্ব করার মতো পর্যায়ে দাঁড়িয়ে থাকুক। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট জঙ্গল পরিষ্কার করে সুলতানী আমলের এ মসজিদটি পুরোপুরি দৃশ্যমান করা হয়। এ সংবাদ সোস্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র প্রচার হলে পরদিনই ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শওকত ওসমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমাসহ স্থানীয় প্রশাসন মসজিদটি দেখার জন্যে ছুটে যান এবং এটিকে সাময়িক রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়ে আসেন। তারপর থেকেই সেই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই সকাল বিকেল শত শত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। দর্শনার্থীদেরও প্রত্যাশা, এই প্রাচীন মসজিদটি রক্ষা এবং সংস্কারে সরকার দ্রুত এগিয়ে আসবে এবং পদক্ষেপ নিবে।