• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

ক্রিকেট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য চাঁদপুরের মাহমুদুল হাসান ও শামীম পাটওয়ারী

প্রকাশ:  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ক্রিকেটের মোড়ল ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। দলের গর্বিত ১৫ সদস্যের মধ্যে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার দুজন। এরা হলেন : শামীম পাটওয়ারী ও মাহমুদুল হাসান জয়। মজার বিষয় খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে এই দুজনই চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমি থেকে যাত্রা শুরু করেন। তারা দুজনই ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির প্রধান কোচ শামীম ফারুকীর ছাত্র। বর্তমানে তারা বিকেএসপির ছাত্র হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের সদস্য।
চট্টগ্রামে ভারতের সিবিএ দলের টেস্ট ম্যাচে শামিম পাটওয়ারী অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি করে এতোদিন আলোচনায় থাকলেও কিছুটা আড়ালেই ছিল মাহমুদুল হাসান জয়ের কথা। অবশেষে সেমি-ফাইনালে সেঞ্চুরি করে দলের বিজয় নিশ্চিত করে নিজের জাত চেনালেন এই কৃতী ক্রিকেটার।
জয়ের জন্ম ফরিদগঞ্জ গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামে। বাবা ব্যাংকার আব্দুল বারেক চাঁদপুর নতুনবাজার শাখায় কর্মরত। মা হাছিনা বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে জয় তৃতীয়। রামপুর সরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ার পর তিনি ভর্তি হন রামপুর বাজার মাদ্রাসায়। সেখানে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। পরে চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির প্রধান শামীম ফারুকীর হাত ধরে বিকেএসপিতে ভর্তি হন। এখন উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে, মানবিক বিভাগে পড়াশোনা চলছে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তার বড় ভাই রাশেদুল হাসান জুমন জানান, জয় গ্রামে থাকতেই ক্রিকেটের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। স্কুল ছুটি হলেই বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির পাশে মাঠে ছুটে যেত। ব্যাট ও বলের সঙ্গে তখনই তার মিতালি।
পঞ্চম শ্রেণির পাঠ চুকানোর পর তিনি জয়কে নিয়ে যান চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির প্রধান কোচ শামীম ফারুকীর কাছে। সেখানেই জয়ের শক্ত হাতে ব্যাট ধরার হাতেখড়ি। মাত্র দুবছরের মধ্যেই প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই জয় ২০১৪ সালে চলে যান বিকেএসপিতে। তিনি আরো জানান, এশিয়া কাপ দিয়ে শুরু হয় মাহমুদুল হাসান জয়ের বিশ্ব ভ্রমণ। আজ জয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য।
বাবা আব্দুল বারেক ও মা হাছিনা বেগম বলেন, জয়ের ব্যাটিং নৈপুণ্যে আমরাও আনন্দিত এবং গর্বিত। তাদের বিশ্বাস জয় তার প্রতিভা দিয়ে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে।
অন্যদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামের ছেলে শামীম পাটওয়ারীর বাবা হামিদ পাটওয়ারী, মা রিনা বেগম গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শামীম সকলের ছোট। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক এবং ধানুয়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। তার পর বিকেএসপিতে। এখন উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে, মানবিক বিভাগে পড়াশোনা চলছে।
শামীমের ক্রিকেটার হওয়ার গল্প শোনান তার বড় ভাই মামুন। শামীম গ্রামে থাকতেই ক্রিকেটের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। স্কুল ছুটি হলেই বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির পাশে মাঠে ছুটে যেতেন। ব্যাট বলের সঙ্গে তখন থেকেই তার সম্পর্ক।
নবম শ্রেণির পাঠ চুকানোর পর চাচাতো ভাই ওমর শহীদ নিয়ে যান চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির প্রধান কোচ শামীম ফারুকীর কাছে। মাত্র দুবছরের মধ্যেই তার প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই শামীম বিগত ২০১৪ সালে চলে যান বিকেএসপিতে।
বড়ভাই মামুন আরো জানান, সিবিএ ক্রিকেট দলের বিপক্ষে তার আলো ছড়ানো ২২৬ রানের ইনিংস দিয়ে শুরু হয় শামীমের অনূর্ধ্ব ক্রিকেট টিমে তার শক্ত অবস্থান।
বাবা হামিদ পাটওয়ারী ও মা রিনা বেগম আজ খুশি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে তার ছেলে বাংলাদেশকে সম্মান এনে দিয়েছে দিয়েছে।
চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির প্রধান শামীম ফারুকী বলেন, এতোদিনের পরিশ্রম আজ সার্থক করলো শামীম এবং জয়। তিনি বলেন, চেষ্টা করেছি শিশু-কিশোরদের দক্ষ করে তৈরি করার। তাদের সেভাবে ঝালাই এবং যোগ্য করে গড়ে তুলতে চেয়েছি। আমার দুজন ছেলে জাতীয় এবং বিশ্বপর্যায়ের ক্রিকেটে অবদান রাখতে পারছে_এর চেয়ে আনন্দ কি হতে পারে!
এদিকে দেশের ফেরার পর চাঁদপুরে আসলে মাহমুদুল হাসান জয় ও শামীম হোসেনকে বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু জানান, চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জয় ও শামীমকে গণসংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
ফরিদগঞ্জের গর্বিত দুই সন্তান নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী নোমান জানান, মাহমুদুল হাসান জয় ও শামীম পাটওয়ারী আমাদের ফরিদগঞ্জ তথা চাঁদপুরকে গর্বিত করেছে। আশা করছি আগামী দিনগুলোতে তাদের দেখে ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে আরো মেধাবী ক্রিকেটার তৈরি হবে।