• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে পণ্য

প্রকাশ:  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:২৫ | আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে নানা ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার। যার প্রায় শতভাগই রূপ নিচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর বর্জ্যে। তবে এসব ওয়েস্টেজ প্লাস্টিকসামগ্রী এবং খালি প্লাস্টিকের বোতল এখন আর ফেলে দেয়ার সামগ্রী নয়। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের যথেষ্ট চাহিদা ও মূল্য রয়েছে।

পরিচ্ছন্ন কর্মী, পথশিশু আর ছিন্নমূল মানুষ রাস্তা বা উদ্যান থেকে ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের বোতলসহ প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত সামগ্রী সংগ্রহ করে শহরে এবং গ্রাম গঞ্জের ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করছে। দেশের সর্বত্র এমন চিত্র কমবেশি সবার চোখে পড়ে। চাঁদপুরসহ দেশের অনেক অঞ্চলে কিছু মানুষের পেশায় পরিণত হয়েছে প্লাস্টিকের বর্জ্য সংগ্রহ। আর ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি অনেক দূর এগিয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারকরণ প্রক্রিয়ায়। এখন প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে আসছে বৈদেশিক মুদ্রাও। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে কারখানাও গড়ে উঠেছে। এ কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে এলাকার নারী-পুরুষ।


জানা গেছে, ছিন্নমূল মানুষ, পথশিশু আর পরিচ্ছন্নকর্মীরা প্লাস্টিকের বোতল, গৃহস্থালির প্লাস্টিক কিংবা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে বিভিন্ন ভাঙ্গারির দোকানে। ভাঙ্গারির দোকান থেকে এসব চলে আসে রিসাইকেলিং কারখানায়। তারপর এগুলো পরিষ্কার করে তৈরি করা হয় প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কাঁচামাল। যার একটা অংশ রপ্তানি হয় চীন, কোরিয়া, ভারত ও ভিয়েতনামে। অপরদিকে মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত প্যাকেজিং কাজের জন্যে তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের সুতা। ফলে এসব রপ্তানি করে একদিকে যেমন আয় হচ্ছে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা, অন্যদিকে দেশের কারখানায় এ কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে কমে গেছে প্লাস্টিক কাঁচামাল আমদানি নির্ভরতা। পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতল রিসাইক্লিং হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্যও খানিকটা রক্ষা হচ্ছে।

মানুষের ফেলা প্লাস্টিকের ওইসব বর্জ্য পরিশোধিত করা হচ্ছে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে পরিবেশবান্ধব এ কাজটি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী উত্তম কুমার দে। ১০নং ঘাটের হাজী শরীয়ত উল্লা রোডে মেসার্স জুঁই প্লাস্টিক ইন্ড্রাস্ট্রির সাইনবোর্ডে এগুলো করছেন। এখানকার কর্মচারীরা জানান, আনুমানিক ৫৩ শতাংশ জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে বর্জ্য পরিশোধন কাজে। যেখানে পেড (পেপসি, সেভেনআপ, টাইগার, স্পীড জাতীয় বোতলের ৫ সুঁতা কাটিং), মুলাম (প্লাস্টিকের চেয়ার, বালতি, বদনার মতো বিভিন্ন আইটেমের ৮ সুঁতা কাটিং কুচা হয়) তৈরি হয়। এছাড়াও আরএফএল বা পিপি রয়েছে। যা থেকে কেকরা সুঁতা তৈরি হয়। কর্মচারীদের সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ১ টনের মতো কাজ হয় এখানে। যা করতে ২৫ জন পুরুষ এবং ১৫ জন নারীসহ ৪০ জন কর্মচারী এই কাজগুলো করে থাকে। তবে মালের চাপ কমবেশি অনুযায়ী কর্মচারীর সংখ্যাও কমবেশি হয়। ওখানে কর্মরত কজন কর্মচারী আরো জানান, জেলার ৭/৮টি কাটিং সাইটের মধ্যে এটি অন্যতম প্রাচীন। তাই এখানকার তৈরি পেড যায় চিটাগাংয়ে আর মুলাম যায় ঢাকায়। তবে সুঁতাগুলো এখান থেকেই বিভিন্ন মোকামে যায়। কেননা জেলায় কেকরা সুঁতা একমাত্র এখান থেকেই তৈরি হয়।

মেসার্স জুঁই প্লাস্টিক ইন্ড্রাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী উত্তম কুমার দে জানান, এখানে পেড, মুলাম ও সুতা তৈরি করা হয়। পেডগুলো বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। যার উপর ১০% ইনসেপ্ট দেয় সরকার। মুলামের কুচা দ্রব্য দিয়ে বিভিন্ন রিসাইকেলিং প্লাস্টিক মালামাল তৈরি হয়। যার মধ্যে বদনা, বালতি, চেয়ারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরি করা হয়। আর কেকরা সুঁতাটা এখানকার পুরাণবাজারে পাঠানো হয়।

তিনি জানান, ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছোট্ট পরিসরে এ কাজটি তিনি শুরু করেন। এটি টোকাই, হকার ও ভাঙ্গারীর মোট তিন শ্রেণীর প্রায় ১২ হাজার শ্রমিকের বিশাল কর্মযজ্ঞ। তাই এ শিল্প ব্যবসাটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে চাই প্রচুর ঋণ। কিন্তু আমি কোনো ঋণের ব্যবস্থা না পাওয়ায় হতাশ।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এএইচএম রাসেদ বলেন, সত্যিকার অর্থে পরিবেশবান্ধব এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আমরাও চাই টিকে থাকুক। তাই সরকারিভাবে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ থাকলে আমরা অবশ্যই তাদের জন্যে সে ব্যবস্থা করে দেবো।


চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, পুরাণবাজারে প্লাস্টিক বর্জ্য যেভাবে পরিবেশবান্ধবভাবে রিসাইকেলিং করা হচ্ছে, তা সত্যিই একটি চমৎকার উদ্যোগ। এখন এখানে ৫০ জন মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা হলেও তা বাড়ানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে ওরা যদি সহযোগিতা চায় তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।