• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে জ্বালানি তেল সরবরাহ হবে পাইপ লাইনে

প্রকাশ:  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:০৭ | আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:২৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

কম সময় ও খরচে এবং নিরাপদে রাজধানীতে জ্বালানি তেল সরবরাহে দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩৭ দশমিক ৭১ কিলোমিটার (১৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট) জ্বালানি পরিবহন পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কুমিল্লায় একটি পূর্ণাঙ্গ ডিপো, পাইপলাইনের এলাইনমেন্ট এবং ভবিষ্যত নগরায়ন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় ৬৭ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রুট নতুন করে পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

২০১৮ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। নতুন ডিপো ও রুট পরিবর্তনের কারণে আরো এক বছর ৬ মাস বাড়তি সময় চেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় চায় বিপিসি।

বিপিসি সূত্র জানায়, বিপিসি’র অর্থায়নে গৃহীত এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ২৩৭ কিলোমিটার, কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার এবং ফতুল্লা থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন (১০ ইঞ্চি ব্যাস) স্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লায় নতুন করে একটি পূর্ণাঙ্গ পেট্রোলিয়াম ডিপো নির্মাণ করা হবে। এতে মূলত কুমিল্লা ও ফেনীর আশপাশের জেলা উপকৃত হবে। ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন স্টোরেজ থাকবে এখানে। চাঁদপুরে নতুন করে ডিপো লাগবে না কারণ এখানে একটি ডিপো আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নির্মিত পাইপলাইনের একটি কানেকশন থাকবে কুমিল্লায়। নতুন করে এসব নকশা করতেই মূলত বাড়তি সময় লাগবে।

বিপিসি সূত্র জানায়, পাইপলাইন এলাইনমেন্ট এবং ভবিষ্যত নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানসমূহের ডিটেইল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ফ্যাক্টরের প্রেক্ষিতে পাইপের পুরুত্ব পূনঃনির্ধারণ করে পুরুত্ব বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাইপলাইনের রুট বরাবর কিছু অঞ্চলে ঘনবসতি, বিল্ডিং, স্কুল, বিভিন্ন স্থাপনা ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে। এছাড়া পাইপলাইন ক্রসিং, ড্রয়িং এলাইনমেন্ট সীট পর্যালোচনা ও সরেজমিন সার্ভে করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে নদী ক্রসিং ও নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে ডিজাইন কানসালটেন্ট রিভার ক্রসিং এলাইনমেন্ট যথাযথ করার জন্য পাইপলাইনের সর্বমোট ৪৯টি স্থানে প্রায় ৬৭ দশমিক ৩০ কিলোমিটার পরিবর্তন (রি-রুটিং) প্রয়োজন পড়বে।

বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ ৮ মিটারের স্থলে ৬ মিটার নির্ধারণ করায় অনুমোদিত ডিপিপির তুলনায় প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণের ব্যয় কমবে।

বিপিসি’র চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ প্রকল্পের কাজ। জনসাধারণের সুবিধার্থে কুমিল্লায় হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিপো। এতে কুমিল্লা ও ফেণীর আশপাশের জেলা উপকৃত হবে। কুমিল্লার আশপাশের মানুষের চাহিদা বিবেচনা করেই ডিপোর ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করা হবে। মানুষের ঘরবাড়িসহ স্থাপনার যাতে ক্ষতি না হয় সেই বিবেচনায় কিছুটা রুট পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এই জন্যই মূলত কিছুটা বাড়তি সময় লাগবে। প্রকল্পের অন্যান্য কাজ এগিয়ে গেছে, বাড়তি সময়ের মধ্যে বাড়তি কাজগুলো করতে পারবো।

বিপিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ২৮৪ দশমিক ৯২ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ৬৯৪ একর ভূমি হুকুমদখল করা হবে। এই কাজের জন্য সর্বমোট ৭২৮ কোটি টাকার ছয়টি চেক জেলা প্রশাসক বরাবর পরিশোধ করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনী, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ। তাছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও চাঁদপুর পৌরসভা শহরের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন স্থাপনের জন্য ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বছরে ৬৫ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে। আবার লাইটারেজের পরিবর্তে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ হলে সিস্টেম লস ও ঝুঁকি শূন্যে নেমে আসবে বলে মনে করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। আর এই পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনে পাইপলাইনের অপারেশনাল খরচসহ ৬২ কোটি টাকার মতো খরচ পড়বে। সিস্টেম লস নেই, পরিবহনের ঝুঁকিও কম।

বর্তমানে নৌ ও সড়ক পথে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। কিন্তু জাহাজে তেল আনার সময় অনেক সময় পাইপ দিয়ে চুরি হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব ক্ষতি থেকে বাঁচবে সরকার। ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন, যা ঢাকায় অবস্থিত গোদনাইল ও ফতুল্লার ডিপোগুলো থেকে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে জলপথে প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর প্রায় ২০০টি কোস্টাল ট্যাংকার নিয়োজিত রয়েছে।

চাঁদপুরে অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলোর তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকার যোগে বর্তমানে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি তেলের সিস্টেম লসও থাকবে না।