• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জেলা প্রশাসন ও সনাক-চাঁদপুর আয়োজিত ২ দিনব্যাপী তথ্য মেলার সমাপনী

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তথ্য অধিকার আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে : অতিরিক্ত জেলা প্রশসাক (সার্বিক) এসএম জাকারিয়া

প্রকাশ:  ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও সনাক-চাঁদপুরের আয়োজনে ২ দিনব্যাপী তথ্য মেলা গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার সমাপ্ত হয়। চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর দেড়টায় শুরু হয়ে অত্যন্ত চমৎকার বিভিন্ন পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হয় রাত ১০টায়। এবারের মেলায় ৩১টি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্যসেবা প্রদান করে। এছাড়াও চাঁদপুরের ১০টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে মেলা পরিদর্শন ও দুর্নীতিবিরোধী কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। মেলায় সনাকের স্টলে এসে ৬ শতাধিক জনসাধারণ চাঁদপুরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্য ফরম পূরণের মাধ্যমে তথ্যপ্রাপ্তির আবেদন করে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী বেশকিছু প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক আবেদনে উল্লেখিত চাহিদার প্রেক্ষিতে সেবা প্রদান করে। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী প্রতিটি স্টল থেকে ৮ শতাধিক জনসাধারণকে হাতে-কলমে তথ্যপ্রাপ্তির আবেদন ফরম পূরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে এবং ১২ শতাধিক সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে।   
মেলার শেষদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশসাক (সার্বিক) এসএম জাকারিয়া বলেন, সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্যে তথ্য অধিকার আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তথ্য অধিকারের গুরুত্ব বিবেচনা করেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তথ্য অধিকার আইন পাস করে। ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন হলেও এখনো অনেকেই এ আইন সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। এখন সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশ করছে। এখন সরকারি যেকোনো দপ্তরের তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। সরকার এখন যেকোনো তথ্য পেতে একটি হটলাইনও চালু করেছে। ৩৩৩-এই হটলাইনে ফোন করলে প্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, জনগণকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। ই-সিটিজেনের ধারণাগুলো সাধারণ জনগণকে জানাতে হবে। তিনি তথ্য মেলা আয়োজনের জন্যে সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি মানুষজনকে তথ্য জানার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার জন্যে বিশেষভাবে আহ্বান জানান।
তথ্য মেলা বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়ার সঞ্চালনায় আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাকের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত।
সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, তথ্য না জানার কারণে সাধারণ মানুষ বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ আইনটি সম্পূর্ণ জনগণের জন্যে একটি আইন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সিটিজেন চার্টার থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আগের তুলনায় অনেক বেশি জনবান্ধব। জনগণের মধ্যে তথ্য পাওয়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষে পুলিশ বিভাগের শ্লোগান হলো-মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার। আমরাও চাচ্ছি পূর্বের তুলনায় জনগণকে আরও বেশি পরিমাণে সহজে কীভাবে সেবা প্রদান করা যায়। দেশের প্রতিটি বিভাগই তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তথ্য অধিকার আইনটি করার জন্যে টিআইবি’র একটি মুখ্য ভূমিকা ছিলো। তিনি সরকার ও টিআইবির প্রতি আহ্বান জানান এ আইনটিকে কীভাবে আরও সহজ করা যায়। যাতে করে সাধারণ জনগণের সেবা পেতে আরও সহজ হয়। তিনি এতো সুন্দর একটি মেলা আয়োজন করার জন্যে জেলা প্রশাসন ও সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, জনগণকে ক্ষমতায়ন করতে হলে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন করা খুবই প্রয়োজন। কারণ তথ্য অধিকার আইনই একমাত্র আইন যা জনগণের কল্যাণে কাজ করে। চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা বলেন, একজন ব্যক্তির জীবনে তথ্য একটি বড় শক্তি। তথ্য জানা দরকার নিজের প্রয়োজনে। বর্তমান সময়ে তথ্য মেলা বাস্তবিক ও খুবই সময়োপযোগী। আগামী দিনগুলোকে সনাক-টিআইবি’র যে কোনো কার্যক্রমে আমি, আমার দপ্তর এমনকি আমার অধীনে যতগুলো দপ্তর আছে প্রতিটি দপ্তরের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। আমি মনে করি, সারা বাংলাদেশের মধ্যে চাঁদপুরের তথ্য মেলা খুবই সমৃদ্ধ। তিনি আরও বলেন, সরকারের যেকোন উন্নয়ন কাজে আমরা যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করবো। তিনি এতো সুন্দর একটি তথ্য মেলা আয়োজন করার জন্যে জেলা প্রশাসন ও সনাককে ধন্যবাদ জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা চেষ্টা করি সাধারণ জনগণকে সঠিকভাবে সেবা প্রদান করার জন্যে। আমি মনে করি, এ তথ্য মেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনসাধারণ তথ্য চাইতে আরও উৎসাহিত হবে। তথ্য জানার অধিকার জনগণের একটি সার্বজনীন অধিকার। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ বলেন, সাধারণ জনগণকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হওয়ার জন্যে সরকার ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন পাস করে। এ বছর যার এক দশক পূর্তি। তিনি বলেন, জনগণের সকল অধিকার প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে তথ্য জানার অধিকার। তথ্য জানা থাকলে আপনাকে কেহই ফাঁকি দিতে পারবে না। তিনি বলেন, মুজিববর্ষে এসে এধরনের মেলা খুবই ফলপ্রসূ। তিনি আরও বলেন, টিআইবি’র মাধ্যমে আমি সাংবাদিকতার উপর বেশ কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি এবং দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি।
যেসকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী উপ-পরিদর্শক মোঃ আশরাফ আলী ও মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা নাজমুন নাহার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সনাকের সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন, সনাকের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক ও শাহানারা বেগম।
সনাকের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় দুপুরে কিশোর কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ, উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সদর ও ডাঃ সাবেরা ইসলাম, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, চাঁদপুর। বিভিন্ন স্কুল কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে। আলোচনার উপর শিক্ষার্থীদের কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং কুইজে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

সনাকের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমার দপ্তরই তথ্য আইন সঠিকভাবে ও স্বচ্ছতার সাথে মানে’ এ বিষয়ের উপর বারোয়ারী বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ইকবাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, পাসপোর্ট অফিসের সহকারী-পরিচালক মোঃ তাজ বিল্লাহ, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার এবং টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মাসুদ রানা।

ইয়েস গ্রুপের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় দুর্নীতিবিরোধী কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, আল-আমিন স্কুল এন্ড কলেজ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লেডি দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে।

জলবায়ু বিষয়ক ক্যাম্পেইন-এর আওতায় আনন্দধ্বনি সংগীত বিদ্যায়তনের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ গণসংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তথ্য মেলা সমাপ্ত হয়। দু’ দিনব্যাপী এ তথ্য মেলায় চাঁদপুরের সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী ৩১টি প্রতিষ্ঠান তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী জনগণকে তথ্য প্রাপ্তির কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের সরকারি বেসরকারি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে তথ্য পেতে পারেন সেজন্য তথ্য প্রাপ্তির আবেদন ফরম পূরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়। তথ্য মেলা সুন্দর ও সফলভাবে শেষ করার জন্যে জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের পক্ষ থেকে মেলায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানানো হয়।