জেলার আট উপজেলায় ১২৫ ইটভাটা ॥ অবৈধভাবে চলছে ৬০টি
চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায় বর্তমানে ১২৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে ৬০টি সরকারের নিয়মনীতি না মেনে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইট উৎপাদন করে যেমনি পরিবেশকে ধ্বংস করছে, তেমনি লাখ লাখ টাকা উপার্জন করলেও সরকার বিরাট অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতি না মেনে কাঠ, টায়ার, বিভিন্ন গার্মেন্টসের বর্জ্য ও ভুষি জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। আর তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করে তুলছে। জনগণও এর মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে, নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর গ্রামীণ জনপদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলছে। এতে মানুষের নিত্যদিন চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে যেখানে সেখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক ইটভাটা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠা ওইসব ইটভাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। বিশেষ করে ইটভাটাগুলোতে কাঠ, টায়ার ও মাত্রাতিরিক্ত সালফারযুক্ত পাথুরে কয়লা ব্যবহারের ফলে পরিবেশ রয়েছে হুমকির মুখে। শুধু তাই নয়, ওইসব অবৈধ ইটভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ এবং ফসলি জমি।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের ৮টি উপজেলায় ১২৫টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে হালনাগাদ ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৪০টি ইটভাটার। বন্ধ রয়েছে ২৫টি। বাকি ৬০টি ইটভাটা নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধভাবে ইট উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। তবে এর মধ্যে ১০/১৫টি ইটভাটার ছাড়পত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক এএইচএম রাশেদ।
সূত্র মতে, ওইসব অবৈধ ইটভাটার বেশিরভাগই ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনি বিশিষ্ট সনাতন ইটভাটা। আবার কিছু ইটভাটা রয়েছে নিষিদ্ধ এলাকায়। যেমন : শহর এলাকায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা রেলাইনের পাশে অবস্থিত। এসব স্থানে ইটভাটা করা আইনত নিষিদ্ধ। আবার ওইসব ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাঠ, টায়ার, বিভিন্ন গার্মেন্টসের বর্জ্য ও ভুষি জ¦ালিয়ে তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত করছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি ইটভাটার ধোঁয়ায় জমির ফসল এবং ফলদ গাছে ফল ধরাও হ্রাস পাচ্ছে।
এদিকে ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর নামক যন্ত্রদানবের বেপোরোয়া চলাচলে গ্রামীণ জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রাক্টরের চলাচলে ভেঙ্গে পড়ছে বহু সেতু-কালভার্ট।
এছাড়াও চাঁদপুরে কিছু ইটভাটায় মাত্রাতিরিক্ত সালফারযুক্ত পাথুরে কয়লা ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর আমদানি করা ওইসব কয়লা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওইসব কয়লা ব্যবহারের ফলে ইটভাটা সংলগ্ন এলাকাগুলোতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষজন।
তবে সদর উপজেলার শাহতলী এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম এবং কাউছার আলম অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় ওইসব কয়লা যত্রতত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। চাঁদপুর পরিবেশ আন্দোলনের নেতা মোঃ নাছির চোকদার বলেন, ওইসব ইটভাটার ধোঁয়া বাতাসে মিশলে মানুষ শ^াসকষ্টসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়। তাই অচিরেই এগুলো বন্ধ করা দরকার।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এএইচএম রাশেদ বলেন, কয়লায় সালফারের পরিমাণ মাপার যন্ত্র আমাদের নেই। তাই সেটা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ওইসব ইটভাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। গত ৩/৪ দিনে ৫টি ইটভাটাকে জরিমানা করে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।