• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

নিষেধাজ্ঞার প্রাক্কালে মাছ ঘাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশ:  ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৫৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে মৎস্য আড়তের বড় বড় ব্যবসায়ীরা ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ২২দিন ইলিশ না ধরার বিষয়টি পুঁজি করে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে তথা এক জোট হয়ে ইলিশের দাম বাড়িয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে ইলিশ বরিশাল থেকে ঢাকায় নিয়ে কেজি বিক্রি করেছে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা, সে ইলিশ চাঁদপুর আসার পর পদ্মার ইলিশ বলে বিক্রি করেছে ১ হাজার হতে বাড়িয়ে ১২শ’ টাকা।  এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং নিজেরা ব্যাপক আকারে লাভবান হয়েছেন। ক্রেতারা আজ বুধবার থেকে ২২ দিন ইলিশ পাবে না জেনে বেশি দামে ইলিশ ক্রয় করেছে বাধ্য হয়ে। বড় স্টেশন ইলিশের হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কে কার আগে ইলিশ ক্রয় করবে সে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে তারা। গত এক সপ্তাহ যাবৎ ভারতে ইলিশ রপ্তানির নামে কার্যত ইলিশ পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করে স্থানীয় আড়তদার ও ছোট ব্যবসায়ীরা। এ ইলিশ ভারতে পাচারের কারণে চাঁদপুর মৎস্য আড়তে ইলিশের মূল্য বৃদ্ধি পায়। প্রতি মণ বড় সাইজের ইলিশ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হয়েছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ১২দিন পূর্বে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে ৫শ’ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় । সরকারের এ আদেশকে কাজে লাগিয়ে চাঁদপুর মাছঘাট থেকে ইলিশের চালান  ভারতের উদ্দেশ্যে গেছে। এখানকার ইলিশ চালানিরা কী পরিমাণ ইলিশ ভারতে পাঠিয়েছে তার হিসেব তারা জানাচ্ছেন না। ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের পূর্বে যেই ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৩৭ থেকে ৪০হাজার টাকা, সে ইলিশ সোমবার ৪৭ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যে ইলিশ ছিল প্রতি মণ ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা, সে ইলিশ ৩৩ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যে ইলিশ ছিল প্রতি মণ ১৩/১৪ হাজার টাকা সে ইলিশ সোমবার ছিল ২৪/২৫ হাজার টাকা। গত কয়েক দিন পূর্বে যে ইলিশ প্রতি কেজি ৯শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সে ইলিশ ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পদ্মা ও মেঘনায় জেলেদের জালে যে ইলিশ ধরা পড়েছে, সে ইলিশের কেজি পূর্বে ১২শ’ টাকা ছিল, পরে সে ইলিশ ১৫শ/১৬শ’টাকা কেজি ধরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সোমবার মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা পড়েছে বিপাকে। চাঁদপুরের সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতারা ইলিশ ক্রয় করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অনেক ক্রেতাকে দেখা গেছে, দাম বাড়ায় ইলিশ ক্রয় না করে খালি হাতে চলে গেছে। শুধুমাত্র ছোট সাইজের ইলিশ কিছুটা কম দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। ভাল মানের ইলিশ থেকে বাদ পড়ে যাওয়া নরম ইলিশ  মাছ ১২ থেকে ১৫-১৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, মেজবাহ মাল, সালাউদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণা দে, আনোয়ার গাজী ও দেলু খাঁ ইন্ডিয়াতে ইলিশ চালান করেন। এলসিতে তারাই এখন মাছ পাঠাচ্ছেন। এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ শবে বরাত জানান, আমার জানা মতে, চাঁদপুর থেকে ৪-৫শ' মণ ইলিশ ভারতে চালান হয়েছে। বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে যেহেতু ইলিশ পাঠাতে হয়, তাই বরিশাল থেকে বেশি পরিমাণ ইলিশ যাচ্ছে। চাঁদপুর হতে ইলিশ যাচ্ছে কম। এলসি চালু হওয়ায় এখানে মাছের দাম প্রতি মণ ১২থেকে ১৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।
চাঁদপুর মাছঘাটে হাতিয়া ও ভোলার প্রচুর ইলিশ আসে। তবে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনার ইলিশ আমদানি চোখে পড়ার মতো নয় বলে জানিয়েছেন  এখানকার আড়তদাররা।
উল্লেখ্য, দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা হিসেবে ভারতে ৫শ’ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেনাপোল বন্দর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশের ইলিশ পাঠানো হয়। প্রতি কেজি ইলিশের মূল্য ছয় ডলার (প্রায় ৫০০ টাকা) ধরা হয়েছে। তবে এতে কোনো শুল্ক ধরা হয়নি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।