• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে জুয়েলারির ভ্যাট ফাঁকি

লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার

প্রকাশ:  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর জেলা সদরের অধিকাংশ জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের মূল্য সংযোগ কর (ভ্যাট) ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। পণ্য ক্রয়ের সময় ক্রেতা মূল্যের সঙ্গে বিক্রেতাকে ভ্যাট বাবদ অর্থ প্রদান করেন। বিক্রেতা পণ্যের মূল্য নিজে গ্রহণ করে এবং ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেন। অথচ তা না করে চাঁদপুর জেলা সদরের ১১০টি জুয়েলারির মধ্যে নামমাত্র ভ্যাট দিচ্ছে ৪৬টি প্রতিষ্ঠান। আর বাকিগুলোর অবস্থা জেলা সদরের বাইরে ছোট-বড় বাজারের কিছুসংখ্যক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মতো। ভ্যাট প্রদান না করে সরকারকে ফাঁকি দিচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। খোদ চাঁদপুর শহরে ৬৪টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ভ্যাট দিচ্ছে না। তাদের নামে কাস্টমস অফিসে কোনো রিটার্ন জমা নেই। এক্ষেত্রে চাঁদপুর কাস্টমস ভ্যাট কর্মকর্তাদের কারসাজিতে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা সমিতির নাম করে ভ্যাট দিচ্ছে নামমাত্র। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। অপরদিকে পার পেয়ে যাচ্ছে ভ্যাট আওতায় থাকা স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
চাঁদপুর জেলায় স্বর্ণের ব্যবসায়ী আছে প্রায় চার শতাধিক। জেলা কমিটিসহ প্রত্যেক উপজেলাতে আলাদা আলাদা জুয়েলারি সমিতি রয়েছে। প্রত্যেক সমিতি আলাদা আলাদাভাবে সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছে। বর্তমানে জেলার চাঁদপুর পৌর এলাকায় কমিটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১১০।
কার্যনির্বাহী কমিটির পদসংখ্যা ১১। চাঁদপুর জুয়েলারি সমিতি কার্যনির্বাহী কমিটি ১১০ জন থেকেই প্রতি মাসে ভ্যাটের নামে অর্থ আদায় করে নিচ্ছে আনুপাতিক হারে। মূলত সমিতি সরকারের কোষাগারে ভ্যাট জমা দিচ্ছে ৪৬ জনের নামে। যদিও তা নীতিবহির্ভূত। তারপরও প্রশ্ন হল বাদবাকি ৬৪ জনের আদায়কৃত ভ্যাটের অর্থ যাচ্ছে কোথায়?
এ ব্যাপারে জুয়েলার্স সমিতি চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা ফুল মিয়া বলেন, সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে যে টাকা তোলা হয় তা সাংগঠনিক কাজে খরচ করা হয়। তাদের কাছ থেকে ভ্যাটের নামে কোনো টাকা তোলা হয় না।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলা জুয়েলারি সমিতির কর্তাব্যক্তিদের অনেকে অর্থাৎ বড় বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা নামমাত্র ভ্যাট দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে ছোট ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের আওতায় না পড়লেও তাদের কাছ থেকে ভ্যাটের অজুহাত দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সদস্য বলেন, যাদের ভ্যাট লাইসেন্স নেই তাদের টাকা দিয়ে ভ্যাট কর্মকর্তাদের উপঢৌকন, আর সমিতির কর্তাব্যক্তিরা আত্মসাৎ করে। অথচ আমাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে বিভিন্ন হারে টাকা নিয়ে থাকে।
ক্ষোভের সঙ্গে আরও কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, সমিতির লোক আমাদের মতো ছোট দোকানদার থেকে প্রতি মাসে ভ্যাট বাবদ ৩-৫শ’ টাকা নিচ্ছে। টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেবে না বলে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত দেয়া হয়। তাছাড়া নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের কোটি কোটি টাকার মালামাল আছে তারা মাসে ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকার উপরে ভ্যাট দেয় না। অথচ ভ্যাটের সঙ্গে সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারকে ভ্যাট দেয়া হয় পণ্য বিক্রির ওপর কাস্টমারের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা থেকে। তা না করে কার্যনির্বাহী কমিটির কর্তাব্যক্তিরা সমিতির দোহাই দিয়ে কাস্টমার থেকে আদায়কৃত টাকা সরকারের কোষাগারে জমা না দিয়ে সরকারকে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর ভ্যাট কর্মকর্তা কাস্টমস অফিসার বেলাল উদ্দীন জানান, আমাদের জনবল সমস্যা রয়েছে। চাঁদপুর ডিভিশনে ৭ এবং সার্কেলে ৬ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র একজন। তাই অনেক সময় সঠিক তদারকি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।