• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সাগরের ইলিশ চাঁদপুর এসে হয়ে যায় পদ্মার ইলিশ

নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদপুরের ইলিশ বাজার, প্রতারিত হচেছ ক্রেতারা

প্রকাশ:  ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে, জাঁকে-জাঁকে ইলিশ। চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছেনা। যে সব ছোট আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে,সে ইলিশের দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী দাম। যা’সাধারন ক্রেতার ক্রয় করে পদ্মা ও মেঘনা নদীর ইলিশের স্বাদ গ্রহন অস্বার্দ।  আর সাগরের এ ইলিশ চাঁদপুর এসে হাত বধল হয়ে, হয়ে যায় পদ্মার ইলিশ। এতে করে প্রতিদিনই প্রতারিত হচেছ পদ্মার ইলিশ ক্রয় করতে আসা বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা। এদিকে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণহীন রয়েছে, চাঁদপুরের ইলিশ বাজার ও ব্যবসায়ীরা। শহরবাসীকে ফেরী ওয়ালা পচা ইলিশ খাওয়াচেছ,ভাল ইলিশের দামে। এ সব সাগরের ইলিশ দক্ষীন অঞ্চলীয় ব্যবসায়ীরা বেশী দামে বিক্রয় করতে ও চাঁদপুরের পদ্মার ইলিশ বলে চালিয়ে দিতে চাঁদপুর মৎস্য আড়তে এনে প্রতিমন ইলিশ দক্ষীন অঞ্চলের চাইতে ৪/৫ হাজার টাকা ডিফারেন্সে বিক্রি করতে দেখা যাচেছ। এতে করে চাঁদপুরের মৎস্য আড়তদাররা প্রতি মনে কন্টাকের মাধ্যমে আড়ৎতের কমিশন ছাড়াও ২হাজার টাকা করে পান বলে নাম প্রকাশ না করা এক ব্যবসায়ী জানান।

 ‘ইলিশের বাড়ী চাঁদপুর’ ব্র্যান্ডিং হয়েছে এই নামে। ইলিশ নিয়ে মাতামাতি কম হয়নি। তবে একসময় এসে নিস্তব্দ। চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ বিশ্বজুড়ে। রূপালী ইলিশের নামেই বিক্রি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু ইলিশের শহরের মানুষ ইলিশ ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হয়। কারণ ইলিশের জন্য নির্দিষ্ট কোন মার্কেট নেই। ব্যবসায়ীদের সমিতি থাকলেও নিয়ন্ত্রণ নেই দরদামে। যে যারমত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন ইলিশ মৌসুম। প্রতিদিন চাঁদপুরের প্রায় ৫০টির মত আড়তে কমপেক্ষ ১০ হাজার মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়। পাইকারীর পাশাপাশি খুচরা ক্রেতার সংখ্যাও কম হবে না।

গত কয়েকদিন চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখাগেছে, সকাল থেকেই ট্রলারে এবং ট্রাকে আশা ইলিশ আড়তে নামছে। হাকডাক দিয়ে মুহুর্তেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। তারপর পাইকার থেকে খুচরা ইলিশ ক্রয় করছে সাধারণ ক্রেতা। কিন্তু একেক আড়তে একেক ধরণের দাম। কোনটা সাগরের ইলিশ কোনটা স্থানীয় জেলেদের ইলিশ চেনা খুবই কঠিন। বিক্রেতা তার অভিজ্ঞতা দিয়ে ক্রেতাকে বুঝিয়ে বিক্রি করছেন ইলিশ। মূল্য দিয়ে সঠিক ইলিশ না পাওয়া অনেকটা প্রতারণা বলে মনে করেন অনেক ক্রেতা।

ইলিশ মৌসুম হওয়ার কারণে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ও পাড়া মহল্লায় ইলিশ বিক্রি করতে দেখা যায়। ব্যস্ততার কারণে অনেক মানুষ বাজারে কিংবা আড়তে গিয়ে ইলিশ ক্রয় করতে পারেন না। এই সুযোগটা নেয় ফেরি করা ইলিশ বিক্রেতারা। দক্ষিণাঞ্চল থেকে আমদানি ইলিশ ঘাটে নামলেই কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদম ফ্রেস ইলিশ, মোটামোটি মানের এক ভাগ এবং পচা ইলিশগুলো আরেকটি ভাগ হয়ে যায়। হাকডাক হলে ফেরি করে বিক্রির জন্য এক শ্রেনীর খুচরা ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে কমদামের ইলিশগুলোই ক্রয় করেন। আর এই পচা ইলিশগুলোই বরফ দিয়ে শক্ত করে শহরের সাধারণ মানুষের চাহিদা মিটে। কিন্তু ভালমানের ইলিশের মূল্যই দিতে হয় তাদেরকে।

চাঁদপুর মৎস্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে আলাপ হয় ইলিশ ক্রয় বিক্রয় নিয়ে। তারা জানান, ব্যবসায়ী ও প্রশাসন যৌথভাবে উদ্যোগ নিলে ইলিশের আলাদা মার্কেট হতে পারে। সেখান থেকে ইলিশের মান অনুযায়ী মূল্য সাঁটিয়ে দেয়া থাকলে একজন ক্রেতা তার চাহিদা অনুযায়ী ক্রয় করতে পারেন। এতে প্রতারণার সুযোগ থাকে না। এতে যেমন ব্যবসায়ীদের সুনাম বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ইলিশ বাজারও সমৃদ্ধ হবে।

অপরদিকে চাঁদপুরের ইলিশ মাছ স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে দেশ-বিদেশের মানুষ ক্রয় করতে পারে সেজন্য তৈরী করা হয়েছে অনলাইন ইলিশ বাজার। চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মন্ডল এটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কিন্তু এটি তিনি চাঁদপুর থেকে চলে গেলে আর আলোর মুখ দেখেনি। ওই অনলাইন ইলিশ বাজারও এখন বন্ধ রয়েছে। অলাইন ইলিশ বাজারের সে নির্মিত ঘরে এখন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিজেদের আড়ৎ হিবেবে ব্যবহার করে ব্যবসা করে যেতে দেকা যাচেছ।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: শবেবরাতের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সব জিনিষেই নিয়ম থাকা প্রয়োজন। চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির বাহিরে যারা রয়েছে,তারা এ সব অনিয়ম করে থাকতে পারে। ট্রালারে মাছ আসলে সে গুলো ভাল খারাপ বাছাই করে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এক শ্রেনির ফরিয়া ফেরি করে মানুষের সাথে প্রতারনা করে। যা’ করা ঠিক। সঠিক নিয়মে ভালটা ভাল,খারাপটা খারাপ দামে বিক্রি করা প্রয়োজন।