পাঁচ দফা না মানলে প্রত্যাবাসন নয়


মিয়ানমার সরকারের কথায় আস্থা নেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে কিংবা তারও আগে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসা এসব রোহিঙ্গার একটাই দাবি— ‘জীবনের নিরাপত্তা’। তাঁদের মতে, মিয়ারমার সরকার কথা রাখে না। তারা বিশ্বকে শেনাতে ভাল ভাল কথা বলে। কিন্তু ওপারে নিয়ে নির্যাতন করে। অতীতের ঘটনাগুলোও এর প্রমান। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিয়ে সেখানকার সরকার ক্যাম্পে বন্দি জীবন কাটাতে বাধ্য করতে পারে বলেও আশংকা তাদের। তাই ৫ দফা দাবি নিশ্চিত না হলে প্রত্যাবাসনে রাজী নয় কোন রোহিঙ্গাই।
গতকাল রবিবার রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের দু’বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলেও একই কথা বলেছেন রোহিঙ্গা নেতারা। সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন—নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা এবং বসতভিটা ফেরতসহ আমাদের ৫ দাবি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় আমরা মিয়ানমারে ফেরত যাাব না। কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পের ডাবল ‘ও’ ব্লকের সালামত খান (২৮) বলেন, নিজেরা কঠোর শ্রম দিয়ে কিছু আবাদি জমি বানিয়ে চাষাবাদ করতাম। কিছু বৌদ্ধ এসে আমাদের জমি পছন্দ করলো আর সেখানকার প্রশাসন আমাদের জমি কেড়ে নিয়ে তাদের দিয়ে দিলো। আমাদের বললো অন্য জায়গায় চাষের জমি বানাতে। এটি ২০১৭ সালের আগস্টের শুরুর ঘটনা। এর ২০দিন পরই শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। আমরা পালিয়ে এলাম। এখন নাগরিকত্ব না পেলে ওপারে গিয়ে আগের পরিস্থিতিই ভোগ করতে হবে না এটার নিশ্চয়তা কে দেবে? এখানে তিন বেলা ভালমতো খেতে না পারলেও স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারছি, চিন্তাহীনভাবে বাঁচতে পারছি। আমরা স্বাধীন ভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা পেলে ফিরে যেতে তৈরী আছি।তাদের দাবি, ৫টি শর্ত বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় পূরণ করতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বসতবাড়িসহ সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া, স্বাস্থ্য সেবা ও অবাধ চলাফেরা এবং নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করণের দাবি পূরণের নিশ্চয়তা দিতে হবে এখনই।
কুতুপালং ক্যাম্পের এ-২ ব্লকের রোহিঙ্গা নেতা জমির উদ্দিন বলেন, সামরিক জান্তাদের (মিয়ানমারের) কথার বিশ্বাস নেই। আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পড়ে তারা আমাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বললেও সেখানে নিয়ে ভিন্ন আচরণ করবে। বাংলাদেশে ঝুঁপড়ি ঘর হলেও মিয়ানমারের চেয়ে এখানে ভাল আছি সবাই। বাকি সময়টা এই ঝুপড়ি ঘরে (বাংলাদেশে) কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। তারপরেও নাগরিকত্ব ও নিরাপদ পরিবেশ পেলে ফিরে যেতে চাই।
প্রায় সব রোহিঙ্গাদের কথায় ‘আস্থাহীনতা’র কথা উঠে আসে। মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাবণা পূরণ হবে কিনা এ দ্বদ্ধে দু’বার সময় ঠিক করেও প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। কোন রোহিঙ্গাই ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এমন কি মিয়ানমারের পুরোনো বাসিন্দা বলে চুড়ান্ত স্বীকৃতি পাবার পরও তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের অনেকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়ার ভয়ে বাড়ী ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, শরণার্থী হয়ে আসলেও রোহিঙ্গারা এখানে অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে চলছে। বাংলাদেশ সরকারের আয়োজনে দেশি-বিদেশী সাহায্য সংস্থার সহযোগিতায় জীবন ধারণের সকল উপকরণ পাচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পের কোথাও নিরাপত্তা দেয়াল বা কাঁটাতারের বেড়া নেই। রাখাইনে নিজের গ্রামেও প্রয়োজন ব্যতিত বের হতে না পারা রোহিঙ্গাটি এখানে ঘুরছেন সর্বত্র। এখানকার উন্নত জীবনাচরণ তাদেরকে মিয়ানমার বিমূখ করছে।
আরও পড়ুন: স্থবির ডাকসু
কক্সবাজারের পিপলস্ ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে জন্ম থেকেই বৈষম্য দেখে এসেছে রোহিঙ্গারা। তাই, কেউ এখন ওপারে ফিরতে চাইচে না। এখানে সহানুভূতি পেয়ে সময় কাটানো রোহিঙ্গারা বেশীরভাগ সময় স্থানীয়দের উপর আগ্রাসি হচ্ছে। কিছু এনজিওর উস্কানিতে তারা এমন আচরণ করছে। এদের ফেরত পাঠাতে কঠোর না হলে আমাদের সামনের দিনে আরো ভোগতে হবে।