বাদ জুমআ পৌর ঈদগা মাঠে জানাজা
চাঁদপুরের কিংবদন্তীতুল্য সমাজসেবক আলহাজ্ব ডাঃ এম এ গফুর আর বেঁচে নেই
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০০
চাঁদপুর পোস্ট রিপোর্ট
প্রিন্ট
চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, কিংবদন্তীতুল্য সমাজসেবক আলহাজ্ব ডাঃ এম এ গফুর আর বেঁচে নেই। আজ ভোর ৪টায় ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।বাদ জুমা পৌর ঈদগাহে জানাজা শেষে বাসস্ট্যান্ড গোর-এ-গরিবা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
আলহাজ্ব ডাঃ এমএ গফুরের পরিচিতি : মানব সেবার মাধ্যমে যিনি জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে চাঁদপুর জেলায় অনন্য ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি হচ্ছেন চাঁদপুরবাসীর সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব ডাঃ এম এ গফুর| নিঃস্বার্থ এই সমাজসেবক পেশায় একজন চিকিৎসক ও বাংলাদেশ রোটারী জেলা-৩২৮০- এর অন্যতম প্রবীণ রোটারিয়ান| একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক| সুবক্তা এবং দক্ষ সংগঠক হিসেবে তাঁর ব্যাপক সুনাম ও পরিচিতি আছে| তিনি সার্বিক মেডিসিন ও রেডিওলজিতে অভিজ্ঞ| চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত পিয়ারস মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও চাঁদপুর এক্সরে ক্লিনিকের পরিচালক ও স্বত্বাধিকারী ছিলেন| তিনি ব্যক্তিগতভাবে বহু সমাজসেবায় ও জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সাথে জীবনের দীর্ঘ সময় জড়িত থেকে মানব সেবা করে দেশ ও বিদেশে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেছেন| সেবা স্বার্থের ঊর্ধ্বে রোটারী আন্দোলনের এ মূলমন্ত্রে তিনি উজ্জীবিত| ১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নের সময় ভাষা আন্দোলনে ভাষা সংগ্রামী হিসেবে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বীয় অবস্থানে থেকে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন| মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর পৈত্রিক বাড়ি পাক হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয়|
সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত : চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার চর কোড়ালিয়া গ্রামে সরকার বাড়িতে ১৯৩৩ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন| তাঁর পিতার নাম মরহুম পিয়ার আলী সরকার ও মাতার নাম মরহুমা সৈয়দুন্নেছা| আলহাজ্ব ডাঃ এমএ গফুর চাঁদপুর গণি হাই স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৫০ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এস.সি. ও ১৯৫৬ সনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস. পাস করেন| একজন মেধাবী চিকিৎসক হিসেবে তিনি স্নাতকোত্তর চিকিৎসাবিদ্যা ও রেডিওলজিতে অধ্যয়নের জন্য ১৯৬৫ সালে লন্ডন ও এডিনবার্গে অবস্থান করেন| তাঁর স্ত্রী প্রফেসর মাহমুদা খাতুন চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার আশ্বিনপুর গ্রামে ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন| তাঁর বাবার নাম মরহুম শাহেদ আলী পাটওয়ারী (সাবেক স্পীকার)| মিসেস মাহমুদা খাতুন ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত চাঁদপুর সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রফেসর ছিলেন| এরপর তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন|
ডাঃ এম.এ. গফুর ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক| কন্যা মিসেস মাহফুজা হক, অর্থনীতিতে এমএ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জ্যেষ্ঠ পুত্র ডাঃ শাকিল গফুর, এম.বি.বি.এস, ডি.টি.সি.ডি, এম.ডি. (কার্ডিওলজি) রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক পদে কর্মরত, কনিষ্ঠ পুত্র ড. শায়ের গফুর, বি.এস.সি. (আর্ক) ও পি.এইচ.ডি (অক্সফোর্ড) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ স্থাপত্য বিভাগের প্রফেসর পদে কর্মরত|
একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে আলহাজ্ব ডাঃ এমএ গফুর সমধিক পরিচিত| তিনি চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের চার্টার (প্রতিষ্ঠাতা) সহ-সভাপতি ও প্রাক্তন সভাপতি এবং রোটারী দাতব্য চিকিৎসালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা| প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে এ প্রতিষ্ঠানে থেকে চাঁদপুরবাসীর সেবা করে যাচ্ছেন| তিনি রোটারী জেলা ৩২৮০-এর বিভিন্ন কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে থেকে একজন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রোটারিয়ানের কর্তব্য পালন করেন| তিনি রোটারী জেলার চক্ষু শিবির পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং প্রজেক্টকে জনপ্রিয় করেছেন, তাতে দেশে বহু রোগী অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন| তিনি ১৯৮২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মাজহারুল হক বি.এন.এস.বি. চক্ষু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন| তাঁর সুযোগ্য পরিচালনায় মাজহারুল হক বি.এন.এস.বি. চক্ষু হাসপাতাল আধুনিক হাসপাতালে পরিণত হয়েছে| তিনি চাঁদপুর জেলা নাটাব (জাতীয় যক্ষ&ধসঢ়;মা নিরোধ কমিটি, বাংলাদেশ), জেলা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, আধূনিক ও বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন), চাঁদপুর শাখার প্রাক্তন সভাপতি| তিনি চাঁদপুর কলেজের প্রাক্তন পরিচালনা কমিটির সদস্য, চাঁদপুর মহিলা কলেজ, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপুর ল’ কলেজ ও রোটারী দাতব্য চিকিৎসালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য; চাঁদপুর জেলা কারাগারের বেসরকারি পরিদর্শক; বি.এ.ভি.এস, চাঁদপুর; চাঁদপুর ফাউন্ডেশন; চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, চাঁদপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি; সনাক চাঁদপুর (টি.আই.বি)-এর সদস্য ও চাঁদপুর কমিউনিটি পুলিশের উপদেষ্টা; রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং চাঁদপুর জেলা ইউনিটের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান| তিনি নিজ গ্রাম চর কোড়ালিয়ায় বায়তুল গাফফ&ধসঢ়;ার জামে মসজিদ ও মায়ের নামে সৈয়দুন্নেছা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করেন| ডাঃ এম.এ. গফুর ১৯৮৭ সাল থেকে চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক| বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস)-এর জাতীয় পর্ষদের পরপর তিন বার নির্বাাচিত সদস্য।