আজ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি বিমান ছিনতাই করে ভারতে আসার সময় বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়লে তিনি নিহত হন। মতিউর রহমান ১৯৪২ সালের ২৯ নভেম্বর নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সারগোদায় অবস্থিত পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একাডেমিতে যোগদান করেন এবং পাইলট হিসেবে কমিশন পান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। কিন্তু কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন এ ব্যাপারে বুঝে উঠতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্ত নেন, পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ছিনতাই করে তিনি ভারতে যাবেন এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন।
পরিকল্পনামাফিক ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমান ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট সকাল ১১টায় করাচির মাসরুর এয়ারপোর্টে যান। তখন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাইলট অফিসার মিনহাজ একটি টি-৩৩ জেট বিমান উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মতিউর রহমান জিপযোগে ওই বিমানের সামনে আসেন। তাকে দেখে মিনহাজ বিমানের দরজা খুলে দেন এবং কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মতিউর এক লাফে বিমানটিতে উঠে পড়েন। বিমান যখন আকাশে তখন বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মতিউর রহমানের ইচ্ছে ছিল ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানবন্দরে অবতরণ করানোর। কিন্তু দুজনের ধস্তাধস্তির ফলে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং পাকিস্তানের ঠাট্টা নামক স্থানে এটি বিধ্বস্ত হয়। ফলে মতিউর ও মিনহাজ দুজনই নিহত হন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কোনোরকম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মাসরুর বিমানবন্দরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য রক্ষিত সামরিক কবরস্থানে মতিউর রহমানকে কবর দেয়। তার স্ত্রী মিলি রহমান ও দুই শিশুকন্যাকে পাকিস্তান বিমান বাহিনী এক মাস ধরে বন্দী করে রাখে। ১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
বিরোচিত আত্মত্যাগের জন্য মতিউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। অনেক আলাপ-আলোচনার পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে এনে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে যথাযোগ্য মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।