• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে স্কুল শিক্ষিকা জয়ন্তী’র চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটন

পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয় শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী॥ আটক ২

পিবিআই চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিং

প্রকাশ:  ১৮ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীকে ডিস লাইনম্যান জামাল হোসেন ও মহাজন আনিছুর রহমান পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

রোববার (১৮ আগস্ট) শেষ বিকেলে শহরের ওয়ারলেছ মোড়ে পিবিআই চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিং করে সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য জানানো হয়। পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন চাঞ্চল্যকর শিক্ষিকা হত্যার রহস্য ও তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

পুলিশ জানায়, গত ২১ জুলাই দুপুরে শহরের ষোলঘর পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাফ কোয়াটারে স্বপরিবারে বসবাসকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব সহকারী অলোক গোস্বামী’র স্ত্রী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী (৪৫) কে ডিস লাইনম্যান জামাল হোসেন ও মহাজন আনিছুর রহমান ধর্ষণের পর ঘরে থাকা ধারালো চুরি দিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় পরদিন শিক্ষিকার স্বামী অলোক গোস্বামী চাঁদপুর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অনুপ চক্রবর্তী ২৪ জুলাই রাতে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে জামাল হোসেনকে শহরের ষোলঘর হোটেল আল-রাশিদা এলাকায় তার বাসা থেকে এবং আনিছুর রহমানকে ষোলঘর পাকা মসজিদের বিপরীত সড়কের বাসা থেকে আটক করেন।

এরপর ৪ আগস্ট ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত কার্যক্রম পিবিআই কর্তৃক অধিগ্রহন করা হয়। পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মো. কবির আহমেদ এর নেতৃত্বে পিবিআই চাঁদপুরের একটি টীম গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আদালতের অনুমতিক্রমে দুই দিনের রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জামাল ঘটনায় তার সক্রিয় সম্পৃক্ততা করে বিস্তারিত বর্ণান দেয়।

পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন আসামী জামালের দেয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে আনুমানিক ১২টার দিকে অভিযুক্ত আনিছুর রহমান ও জামাল পূর্ব পলিকল্পনা মোতাবেক পাউবো’র ভিতরে পরিত্যাক্ত ঘরে এসে দু’জনে ইয়াবা সেবন করে। তারপর দু’জনেই জয়ন্তী চক্রবর্তীর বাসায় যায়। নীচতলার সানশেডে উঠে জামাল ডিসের লাইন নাড়াচাড়া করলে জয়ন্তী টিভি দেখায় সমস্যা দেখা দেয়। তখন তিনি বারান্দায় বেরিয়ে এসে অভিযুক্তদের টিভি দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানালে তারা কৌশলে বাসায় প্রবেশ করার জন্য লাইন ঠিক করার কথা বলে বাসার নীচের গেইটের চাবি নীচে ফেলতে বলে। জয়ন্তী চক্রবর্তী সরল বিশ^াসে চাবি নীচে ফেললে প্রথমে আনিছ ও পরে জামাল বাসায় প্রবেশ করে।

জয়ন্তীকে একাপেয়ে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে আনিছ দস্তাদস্তি শুরু করে। পরে জামালও ঘরে প্রবেশ করে দু’জনে মিলে টানাহেচড়া শুরু করে। এক পর্যায়ে জয়ন্তী মেঝেতে পড়েগেলে দু’জনে ঝাপটে ধরে একে অন্যের সহায়তায় মুখ চেপেধরে প্রথমে আনিছ ও পরে জামাল পালাক্রমে জয়ন্তীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের পর জয়ন্তী হুমকি দেয় যে, এই ঘটনা লোকজনদেরকে বলে দিবে। তখন তারা দু’জন ক্ষিপ্ত হয়ে পুনঃরায় ঝাপটে ধরে ঘরের র‌্যাকে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে জামাল জয়ন্তীর গলাকেটে হত্যা করে। পরে আনিছ বাথরুম থেকে মগে করে পানি এনে রক্তমাখা চুরিটি মরদেহের উপর ধুয়ে ধর্ষণের আলামত বিনষ্টের উদ্দেশ্যে মরদেহের নি¤œাঙ্গের উপর আরো পানি ঢালে এবং ছুরিটি পূর্বের স্থানে রেখে দেয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস, ইন্সেপেক্টর কবির আহমদ, মীর মাহবুবুর রহমান, মো. বাচ্চু মিয়া, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক লক্ষন চন্দ্র সূত্রধর ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।