চাঁদপুর থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার যুদ্ধ এখন লঞ্চে ॥ লঞ্চের ভিতরে তিল ধারনের জায়গা পর্যন্ত নেই
চাঁদপুরে ধারন ক্ষমতার ৩গুন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাট ছাড়ছে লঞ্চগুলো
ঈদুল আযহার ছুটি শেষে চাঁদপুর থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার যুদ্ধ এখন চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে দেখা যাচেছ। ঘাটে দাড়িয়ে দেখা গেল, কিভাবে যাত্রীরা লঞ্চে উঠবে,কার আগে’কে লঞ্চে উঠবে একেবারে লঞ্চে ওঠার প্রতিযোগিতা চলছে শনিবার ভোর থেকেই চাঁদপুর মাদ্রাসা রোড লঞ্চ ঘাটে। লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ যোগে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার যাত্রী লঞ্চ ঘাটে, লঞ্চের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন এ রুটে প্রায় ২৫ টি লঞ্চ ছেছে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। শনিবার ভোর থেকেই প্রতিটি লঞ্চে যাত্রী উঠানোর জন্য লঞ্চ ঘাটে প্লেস করা মাত্রই অপেক্ষমান যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে জীবনের দিক না ভেবে লঞ্চে উঠতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে।
পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঈদের ৫দিন পরও ধারন ক্ষমতার ৩ গুন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ গুলো যাত্রীদের নিরাপত্তার দিক চিন্তা না করে নিজেদের ইচছা মত ওভার লোড করে যাত্রী নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করছে। এতে করে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাত্রীদের প্রান হানীর সম্বাবনা বিরাজ করছে। চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোতে উপচেপড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। ধারন ক্ষমতার ৩ গুন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ত্যাগ করছে লঞ্চগুলো। এতে যেমন দূর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু ও নারী যাত্রীদের। ঈদের পর গতকাল শুক্রবার থেকে যাত্রী বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ তাদের ৮/৯শ” যাত্রী ধারন ক্ষমতা থাকলেও তারা ৩ গুন যাত্রী অর্থাৎ আড়াই হাজার হতে শুরু করে ৩ হাজার পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল ত্যাগ করছে বলে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, চাঁদপুর কোস্টগার্ডের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা ও সদস্যরা। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ এমভি ময়ুর-৭ অতিরিক্ত যাত্রীর কারনে রাত ১১টায় ধারন ক্ষমতার ৩ গুন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর নৌ-টামিনাল ত্যাগ করে।
এদিকে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে কর্মরত নামপ্রকাশ না করা সত্বেও একাধিক লঞ্চ সুভার ভাইজার জানান,সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ ধারন ক্ষমতার ৩/৪ গুন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকার দিকে গিয়েছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন লঞ্চঘাট গিয়ে দেখাগেছে, নির্ধারিত সময়ের আগে লঞ্চগুলোর স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী যাত্রী হলেও ছাড়ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় আড়াই হাজার থেকে ৩হাজার যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে লঞ্চগুলো। সকাল থেকে এমভি সোনারতরী, এমভি রফ রফ, এমভি ঈগল,এমভি আবে জমজম, এমভি প্রিন্স অব রাসেল,মেঘনা রানী ও বোগদাদিয়া-৭ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাট ছেড়েছে। লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন জানান, চাঁদপুর-ঢাকা-চাঁদপুর নৌরুটে ভ্রমন আরামদায়ক হওয়ার কারণে যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে এরুটে ২২টি বিলাসবহুল লঞ্চ যাতায়াত করে। চাঁদপুরজেলাসহ পাশ^বর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর জেলার আংশকি মানুষ এখন এরুটে যাতায়াত করেন। ঈদুল আযহার ছুটি শেষে এখন কর্মমূখী মানুষগুলো নিজ গন্তব্যে ফেরার জন্য লঞ্চেই যাওয়া শুরু করেছেন।
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা যাত্রী মোহাম্মদ নিয়াজ জানান, সিডিউল সময়ে ও নিয়মানুযায়ী লঞ্চগুলো আগের তুলনায় অধিক যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে। প্রতি ঘন্টায় লঞ্চ রয়েছে। সে কারণে আমরা ইচ্ছে করেই ভীড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠছি না। ঢাকাগামী আরো কয়েকজন যাত্রী বলেছেন, কর্মস্থলে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ঢাকায় যাবেন না। প্রয়োজনে পরবর্তী লঞ্চে যাত্রা করবেন। তারপরেও ঝুঁকি নিবেন না। কারণ সময়ের চাইতে জীবনের মূল্য অনেক বেশী। চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে যাতে কোন লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে না যেতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্র্ক। তবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ বেড়েছে শুক্রবার থেকে। এ ঘাটের যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, স্কাউট সদস্যসহ আমাদের লোকজন সার্বক্ষনিক কাজ করছেন।
কর্মমূখী মানুষ ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যেন দূর্ঘটনার ঝুঁকিতে না পড়েন সে বিষয়ে লঞ্চ মালিক ও বিআইডাব্লিউটিএর দায়িত্বরতদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিটি লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে না উঠার জন্য বললেও যাত্রীরা তা শুনছে না। বাধ্য হয়ে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রীর কারনে নির্ধারিত সময়ের ২০-৩০ মিনিট পূর্বে ঘাট ত্যাগ করতে হচ্ছে।
পরিবারের সাথে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন শেষে কর্মমূখী মানুষ তাদের কাজে যোগ দিতে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চল, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী জেলাসহ আশপাশের জেলার লোকজন যাতায়াতের সহজ পথ নৌ-পথ হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষই লঞ্চে যাতায়াত করে। এই সুযোগে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপুর্ণ যাত্রা করে যাচ্ছে।
যাত্রীদের সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ এম এ তাহের বলেন, ঈদের পূর্বে এবং ঈদের পরে আমাদের নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। লঞ্চঘাট থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বাহির হবার পথ এবং প্রবেশ করার পথ আলাদা আলাদা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের পুলিশ বাহিনী ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলছে আশা করি কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে তাদেরকে ঢাকা পাঠাইতে পারবো ইনশাল্লাহ ।
এ বিষয়ে লঞ্চ ঘাটের দায়িত্বে থাকা পরিবহন পরিদর্শক রেজাউল করিম সুমন ও পরিবহন পরিদর্শক মাহতাব উদ্দিন জানান, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ গুলো চাঁদপুর ঘাট থেকে ছেছে যাচ্ছে। কারণ যাত্রীর চাপ একটু বেশি লঞ্চের সংখ্যা সীমিত রয়েছে তাই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ গুলি চাঁদপুর ঘাট বন্দর ত্যাগ করছে। তবে ছাদে কোন যাত্রী দেইনি এবং দুর্ঘটনা ঘটবে এমন পর্যায়ে আমরা কোন যাত্রী নিতে দেইনি। এ পর্যন্ত তিনটি লঞ্চ অতিরিক্ত ছেছে গেছে নির্ধারিত সময়ে। বাকি সময়টুকু সামাল দিতে আমাদের অতিরিক্ত লঞ্চ এর ব্যবস্থা রয়েছে যাতে করে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। আশাকরি যাত্রীরা নিরাপদে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবে।
লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার জানান, যাত্রীদের না উঠার জন্য নিষেধ করলেও তারা জোরপূর্বক লঞ্চে উঠছে। এই কারণে নির্দিষ্ট যাত্রীর চাইতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপ থাকায় যাত্রী পারা পারের জন্য ২টি ম্পেশাল লঞ্চ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরই ঈদের পরবর্তী সময় টুকু পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা থাকে লঞ্চঘাটে জেলা প্রশাসন নৌ পুলিশ জেলা পুলিশ বি আই ডব্লিউ টি এ কোস্ট গার্ড স্কাউট স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা লঞ্চ ঘাটে এসে থাকেন যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে আমরা সব সময় ঘাটে দায়িত্ব পালন করি ঘাটে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে নিরাপদে নির্বিঘ্নে যাত্রীরা তাদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে পারে সে বিষয়ে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছি। এ বছর আমাদের একটু বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে প্রশাসনের নির্দেশে প্রতিটি লঞ্চে যাত্রার পূর্বে এবং যাত্রী নামার পড়ে মশা নিধন স্প্রে আমরা করে থাকি যাতে করে ডেঙ্গু মশা বা অন্যান্য মশা লঞ্চে থাকতে না পারে। নিরাপত্তায় রয়েছে আমাদের প্রত্যেক লঞ্চে তাদের নিজ নিজ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদেরকে আমরা তাদের পরিচয় পত্র সহকারে পোশাক দেওয়া হয়েছে যাতে করে যাত্রীরা সহজেই তাদের সেবা নিতে পারে মাস্টারদের আলাদা পোশাক এবং সাধারণ শ্রমিকদের আলাদা করা হয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার পরিবেশন করার জন্য ক্যান্টিন মালিকদের কে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যাতে করে কোন ধরনের পচা বাসি খাবার তারা পরিবেশন না করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নির্দেশ মেনে লঞ্চ পরিচালনা করার জন্য মাস্টার ড্রাইভার দের কে বলা হয়েছে। আশা করি কোন রকম সমস্যা ছাড়াই আমরা যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে পারব। ঈদের আগে কোন ধরনের সমস্যা হয় নাই এখনো পর্যন্ত কোন সমস্যা হয় নাই আগামীতে আমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে যাত্রী সেবা দিয়ে যেতে পারবো।
ঈগল, ময়ুর, বোগদাদীয়া, ইমাম হাসান সহ কয়েকটি লঞ্চের চাঁদপুর ঘাটের দায়িত্বরত মালিক প্রতিনিধি আলী আজগর সরকার জানান, যাত্রীদের লঞ্চে না উঠার জন্য বারণ করলেও তাদেরকে থামিয়ে রাখা যায় না। তারা জোড় করে লঞ্চে উঠে। যার ফলে লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘাট ত্যাগ করছে।
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্বাভাবিকের চাইতে বেশী যাত্রী যাচ্ছে। ওভারলোডিংও হচ্ছে। সেটি সহনিয় পর্যায়ে রয়েছে। সিডিউল মোতাবেক লঞ্চ না আসায় সিমিত লঞ্চ হওয়ায় আমরা অতিরিক্ত যাত্রী বহনের সুযোগ দিচ্ছি। বর্তমান সময়ে ঈদুল ফিতরের পর অতিরিক্ত যাত্রী বহন অপরাধ হলেও লঞ্চ সিমিত হওয়ায় জরিমানা করা হচ্ছে না।