• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাট ছাড়ছে লঞ্চগুলো

প্রকাশ:  ১১ জুন ২০১৯, ০৯:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্যে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে মানুষ যেনো এখনো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ঈদের ৫দিন পরও লঞ্চগুলোতে যেনো তিন ধারণের জায়গা নেই। নির্ধারিত সময়ের আধা ঘন্টা কি এক ঘন্টা আগে লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে দিয়েও মানুষের ঢল থামানো যাচ্ছে না। তারপরও ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো চাঁদপুর ঘাট ছাড়ছে। এদিকে বেশ কিছু লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তার দিক চিন্তা না করে ইচ্ছেমতো ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করছে। এ অবস্থায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোতে এখনো উপচেপড়া ভিড়। ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ত্যাগ করছে লঞ্চগুলো। এতে যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু ও নারী যাত্রীদের। ঈদের পর গত শনিবার থেকে নদী পথে লঞ্চে যাত্রী বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী প্রতিটি বড় বড় লঞ্চ তাদের ৮/৯শ’ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা থাকলেও তারা ৩ গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে অর্থাৎ আড়াই হাজার হতে শুরু করে ৩ হাজার পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল ত্যাগ করছে। এমন অভিযোগ করেছেন খোদ চাঁদপুর কোস্টগার্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ মাইনুল ইসলামসহ কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এদিকে গত রোববার রাত সোয়া ১২টায় এমভি ময়ুর-৭ লঞ্চ চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে না পেরে নির্ধারিত সময়ের সোয়া এক ঘন্টা আগেই রাত ১১টায় ধারণ ক্ষমতার ৩ গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর নৌ-টামিনাল ত্যাগ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে কর্মরত একাধিক লঞ্চ সুপারভাইজার জানান, সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ ধারণ ক্ষমতার ৩/৪ গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকার দিকে গিয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সরজমিনে লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চগুলোর স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী যাত্রী পরিপূর্ণ হলেও লঞ্চ ছাড়ছে না। প্রায় আড়াই হাজার থেকে ৩হাজার যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ছে লঞ্চগুলো। সকাল থেকে এমভি সোনারতরী, এমভি রফরফ, এমভি ঈগল, এমভি আব-এ-জমজম, এমভি প্রিন্স অব রাসেল, মেঘনা রাণী ও বোগদাদীয়া-৭ প্রায় তিনগুণ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাট ছেড়েছে।
লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন জানান, চাঁদপুর-ঢাকা-চাঁদপুর নৌরুটে ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ার কারণে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে এরূটে প্রতিদিন ২২টি বিলাসবহুল লঞ্চ যাতায়াত করে থাকে। চাঁদপুর জেলাসহ পাশর্^বর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর জেলার অনেক মানুষ এখন ঢাকায় এরূটে যাতায়াত করে থাকে। ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে এখন কর্মমুখী মানুষগুলো নিজ গন্তব্যে ফেরার জন্য লঞ্চেই যাওয়া শুরু করেছে।
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা যাত্রী মোহাম্মদ নিয়াজ জানান, লঞ্চগুলো আগের তুলনায় অধিক যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে। প্রতি ঘন্টায় লঞ্চ রয়েছে। সে কারণে আমরা ইচ্ছে করেই ভিড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠছি না। ঢাকাগামী আরো কয়েকজন যাত্রী বলেছেন, কর্মস্থলে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গেলে সে লঞ্চে ঢাকায় যাবেন না। প্রয়োজনে পরবর্তী লঞ্চে যাত্রা করবেন। তারপরেও ঝুঁকি নিবেন না। কারণ সময়ের চাইতে জীবনের মূল্য অনেক বেশী।
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে যাতে কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সতর্র্ক। তবে যাত্রীর চাপ অতিরিক্ত বেড়েছে রোববার থেকে। এ ঘাটের যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্যে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, স্কাউট সদস্যসহ আমাদের লোকজন সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
কর্মমুখী মানুষ ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যেনো দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে না পড়েন সে বিষয়ে লঞ্চ মালিক ও বিআইডাব্লিউটিএ’র দায়িত্বরতদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।
প্রতিটি লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে না উঠার জন্যে বললেও যাত্রীরা তা শুনছে না। বাধ্য হয়ে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নির্ধারিত সময়ের ২০-৩০ মিনিট পূর্বে ঘাট ত্যাগ করতে হচ্ছে।
পরিবারের সাথে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন শেষে কর্মমুখী মানুষ তাদের কাজে যোগ দিতে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্যে শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চল, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলাসহ আশপাশের জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকা যাতায়াতের সহজ পথ নৌ-পথ হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষই লঞ্চে যাতায়াত করে। এই সুযোগে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাত্রা করছে।
লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার জানান, যাত্রীদের না উঠার জন্যে নিষেধ করলেও তারা জোরপূর্বক লঞ্চে উঠছে। এই কারণে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রীর চাইতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপ থাকায় চাঁদপুর-ঢাকা রূটে ২টি স্পেশাল লঞ্চ দেয়া হয়েছে।
ঈগল, ময়ুর, বোগদাদীয়া, ইমাম হাসানসহ কয়েকটি লঞ্চের চাঁদপুর ঘাটের দায়িত্বরত মালিক প্রতিনিধি আলী আজগর সরকার জানান, যাত্রীদের লঞ্চে না উঠার জন্যে বারণ করলেও তাদেরকে থামিয়ে রাখা যায় না। তারা জোর করে লঞ্চে উঠে। যার ফলে লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘাট ত্যাগ করছে।
এদিকে চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্বাভাবিকের চাইতে বেশী যাত্রী যাচ্ছে। ওভারলোডিংও হচ্ছে। তবে সেটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া সিডিউল মোতাবেক লঞ্চ না আসায় এবং প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত লঞ্চ হওয়ায় আমরা অতিরিক্ত যাত্রী বহনের সুযোগ দিচ্ছি।  বর্তমান সময়ে ঈদুল ফিতরের পর অতিরিক্ত যাত্রী বহন অপরাধ হলেও লঞ্চ সীমিত হওয়ায় জরিমানা করা হচ্ছে না।

সর্বাধিক পঠিত