চাঁদপুরের মিনি কক্সবাজার খ্যাত ‘মেঘনার ত্রিমোহনা বীচ’কে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র করার পরিকল্পনা
চাঁদপুরে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরই হতে যাচ্ছে এ জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। আরাফাত, অপু, পাবেল, সাগর ও সোহান নামের এই পাঁচ বন্ধুর হাতে গড়া এবং পরিশ্রমের ফসল ‘মেঘনার ত্রিমোহনা বীচ’ই হতে যাচ্ছে আকর্ষণীয় এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই পর্যটন কেন্দ্র। যে বীচটি ইতিমধ্যে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে খ্যাতি পেয়ে গেছে। তবে উদ্যোক্তারা অন্য কোনো জেলার নামে চাঁদপুরের কোনো বিনোদন কেন্দ্র বা পর্যটন কেন্দ্র পরিচিতি পাক তা চান না। তারা চান মেঘনা যেহেতু চাঁদপুরের গর্ব এবং অহঙ্কারের একটি জায়গা এবং বাংলাদেশের বৃহৎ ক’টি নদ-নদীর অন্যতম, তাই মেঘনার নামকরণেই এই বীচের নাম হতে হবে। সেজন্যে তারা এর নাম দিয়েছে ‘মেঘনার ত্রিমোহনা বীচ।’
ওই পাঁচ বন্ধুর সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থ এবং পরিশ্রমে গড়ে ওঠা এই বীচ খুব বেশি সুযোগ-সুবিধা এবং আধুনিক মানের না হলেও এ অবস্থার মধ্যেও এই বীচের প্রতি মানুষের যে কীরূপ আকর্ষণ জন্মেছে তা দেখা গেছে গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে। হাজার হাজার পর্যটক বড় স্টেশন মোলহেড থেকে ট্রলারে চড়ে সেই মিনি কক্সবাজার তথা মেঘনার ত্রিমোহনা বীচে গিয়েছে। শিশু-কিশোর, বয়োবৃদ্ধসহ পরিবারের সকলে সেখানে গিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। অনেক পর্যটক তখন বলেছেন, কক্সবাজারের বীচের চেয়েও এ বীচ অনেক আনন্দদায়ক এবং নিরাপদ এজন্যে যে, এখানে বালুচরে নদীতে নেমে শিশু-কিশোররা নির্ভয়ে খেলতে পারে, হৈ হুল্লোড়, ছুটোছুটি করতে পারে, সমুদ্রের মতো পাহাড়সম ঢেউ এসে কোনো শিশু-কিশোরকে তলিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো ভয় এখানে নেই। আর সবচেয়ে আনন্দদায়ক হচ্ছে সমুদ্রের পানি লবণাক্ত আর এখানকার মেঘনার পানি হচ্ছে মিঠা পানি। তাই এই মিঠা পানিতে ডুব দিয়ে সাঁতার কেটে খুব আনন্দ উল্লাস করা যায়।
উদ্যোক্তারা এই ‘মেঘনার ত্রিমোহনা বীচ’ বাস্তবায়নে ‘স্বপ্ন ট্যুরিজম’ নাম দিয়ে এর ব্যানারে কাজ করছে। তবে এই বীচটি যেহেতু মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরকে ঘিরে, তাই বর্ষা মৌসুমে এই বীচের কার্যক্রম থাকে না। কারণ, তখন এই চরটি পানির নীচে চলে যায়। শুষ্ক মৌসুমের ৬/৭ মাস এই বীচ চালু থাকবে।
উদ্যোক্তারা কয়েক লক্ষ টাকা পুঁজি এখানে বিনিয়োগ করলেও মাসখানেক আগে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আঘাতে তাদের সকল কিছু তছনছ হয়ে গেছে। স্বপ্ন ট্যুরিজমের সব স্বপ্ন যেনো চুরমার হয়ে গেছে ‘ফণী’র আঘাতে। বীচে স্থাপিত চেয়ারগুলোও তারা সরিয়ে আনতে পারেনি। তখন মেঘনা হঠাৎ উত্তাল হয়ে যাওয়ায় তারা জীবন শঙ্কার ভয়ে মেঘনা পাড়ি দিয়ে সেই বীচে যাওয়ার সাহস করেননি। ফলে দুর্ভাগ্যবশত যা হবার তাই হয়ে গেছে।
স্বপ্ন ট্যুরিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা তারুণ্যে উজ্জীবিত ক’জন তরুণ উদ্যোক্তার স্বপ্ন অংকুরেই শেষ হয়ে যাবে তা মেনে নিতে পারছেন না দুজন স্বপ্নবিলাসী মানুষ। তাঁরা দুজন প্রতিনিয়তই চাঁদপুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। আর তাঁরা স্বপ্ন বলতে ওটাকেই বুঝেন ‘যে স্বপ্ন মানুষকে ঘুমাতে দেয় না সেটাই স্বপ্ন, আর ঘুমের ঘোরে মানুষ যে স্বপ্ন দেখে সেটা প্রকৃত অর্থে স্বপ্ন নয়।’ সেই দুজন স্বপ্নচারী মানুষ হচ্ছেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁরই বড় ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু। এ দুজন এবার দায়িত্ব নিয়েছেন স্বপ্ন ট্যুরিজমের স্বপ্ন পুনরায় বাস্তবায়নের। অর্থাৎ মেঘনার ত্রিমোহনা বীচকে আধুনিক মানের ও আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর ভাই। বর্ষার পানি নেমে গেলেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বীচের কাজ শুরু হবে। যাতে সামনে শুষ্ক মৌসুমের পুরো সময়টাতে এই পর্যটন কেন্দ্রটি জমজমাট থাকে।
উল্লেখ্য, এই স্বপ্ন ট্যুরিজমের যে পাঁচজন স্বপ্নদ্রষ্টা আরাফাত, অপু, পাবেল, সাগর ও সোহান-এরা সবাই চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স করা। পাঁচজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটির নেতৃত্বেও আছেন। আর সে সুবাদে তাদের এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগেরই দুজন অভিভাবক ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু। এই দুজনের অনুপ্রেরণায়ই মেঘনার বালুচরে ত্রিমোহনা বীচ নামে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সাহস পেয়েছে এই পাঁচ বন্ধু।
তবে তাদের বন্ধুত্বের শেকড় খুবই মজবুত বলা যায় এজন্যে যে, এই বর্ষা মৌসুমে তাদের বীচের কার্যক্রম নেই তাতে কী হয়েছে? তারা কি অবসর সময় কাটাবে? এরই মধ্যে তারা এই পাঁচ বন্ধু মিলে পুঁজি খাঁটিয়ে চাঁদপুরে আনলো ‘মুক্তা পানি’ নামে মিনারেল ওয়াটারের ডিলারশীপ। এই পানিটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত হয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই পানির প্রচার করেন বলে এটিকে সরকারি পানি বলা হয়। এই পানি বিক্রির সম্পূর্ণ লভ্যাংশ অটিজমদের কল্যাণে ব্যয় হয়ে থাকে।
এই স্বপ্ন এবং কাজে লেগে থাকার বিষয়ে পাঁচ বন্ধুর সাথে কথা হলে তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আমরা পড়াশোনা করেছি, পাশাপাশি জাতির পিতার আদর্শে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। চাঁদপুরে আমাদের আদর্শের নেত্রী হচ্ছেন ডাঃ দীপু মনি এমপি। যাঁকে আমরা সবাই ‘আপা’ বলে সম্বোধন করি। তিনিই আমাদের যত ভালো কাজের পথপ্রদর্শক। আমরা পড়াশোনা করেছি, প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নিয়েছি, সবই ঠিক আছে। আর পড়াশোনা করলে যে শুধু চাকুরির পেছনেই দৌড়াতে হবে তা ঠিক নয়। বরং আমরা সবসময় চিন্তা করেছি আমার পড়াশোনা ও জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এমন কিছু করতে হবে যেখানে আরো অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়। অর্থাৎ উদ্যোক্তা হওয়া। সে চিন্তা থেকেই আজ আমাদের এসব করা। আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং দীপু আপাও আমাদের তা-ই শিখিয়েছেন। তাছাড়া আমাদের এ বয়সের ছেলেরা যদি বেকার থাকে তখনই সে মাদক, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপরাধের দিকে পা বাড়াবে। তাই বেকার থাকা যাবে না-এটাও আমাদের এ কার্যক্রম থেকে প্রজন্মের শিক্ষণীয় বলে আমরা মনে করি।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ